সিঁদুরে ধ্বংস জৈশ প্রতিষ্ঠাতার পরিবার! মুছে গেল মাসুদ আজাহারের নামও?
Operation Sindoor: ১৯৯৪ সালে ভারতে গ্রেফতার হয় মাসুদ। ১৯৯৯ সালে আইসি-৮১৪ বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় ভারত।
বুধবার মধ্যরাতে পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে অপারেশন সিঁদুরে বড় সাফল্য পেল ভারত। জৈশ-ই-মহম্মদের (জেইএম) সদর দফতর জামিয়া মসজিদ সুবহান আল্লাহ-তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিখুঁত নিশানায় রাষ্ট্রপুঞ্জ-ঘোষিত সন্ত্রাসী মৌলানা মাসুদ আজহারের পরিবারের ১০ সদস্য এবং চার ঘনিষ্ঠ সহযোগী নিহত হয়েছে বলে খবর। জৈশের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন আজহারের দিদি, তাঁর স্বামী, ভাইপো ও তাঁর স্ত্রী, এক ভাইঝি, এবং পরিবারের পাঁচ শিশু। এছাড়া, আজহারের তিন ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং একজনের মা এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছে। এই বিবৃতি যদিও ইনস্ক্রিপ্ট খতিয়ে দেখেনি।
পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতি ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার প্রত্যুত্তরে এই অভিযান চালায় ভারতের সশস্ত্র বাহিনী। পহেলগাঁও হামলায় ২৫ জন ভারতীয় ও একজন নেপালি নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী স্পষ্ট জানাচ্ছে, এই হামলাগুলো ছিল সুনির্দিষ্ট এবং শুধুমাত্র সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছে, কোনও পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটি বা নাগরিক পরিসরে আক্রমণ চালানো হয়েনি। পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসী হামলার অতর্কিত প্রত্যাঘাতকে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়েছিল। বুধবার মধ্যরাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটি বেছে নেওয়ার পিছনে ছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সুনির্দিষ্ট তথ্য। কেন এই জায়গাই বেছে নিল ভারত? কারণ টিআরএফ কাশ্মীর হামলার পিছনের থাকলেও টিআরএফ আসলে ছায়া সংগঠন। টিআরএফ এর মতো অজস্র সংগঠনকে সামনে রেখে কাজ চালায় মাসুদ আজাহাররা।
আরও পড়ুন- সন্ত্রাসের নার্সারি, কাসভকে প্রশিক্ষণ! কেন মুরিদকের মারকাজেই প্রত্যাঘাত ভারতের?
মাসুদ আজহার কে? ১৯৬৮ সালে বাহাওয়ালপুরে জন্ম জৈশ-ই-মহম্মদের প্রতিষ্ঠাতা মাসুদের। ১৯৯৪ সালে ভারতে গ্রেফতার হয় মাসুদ। ১৯৯৯ সালে আইসি-৮১৪ বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় ভারত। এই ছিনতাইয়ের পিছনে ছিল আজহারের ভাই ইব্রাহিম আথার এবং ভাই আব্দুল রউফ আসগর। এরপর সে জৈশ তৈরি করে, জৈশ ভারতে একাধিক হামলার জন্য দায়ী। ২০০১ সালের ভারতীয় সংসদ হামলা, ২০১৬ সালের পাঠানকোট ও উড়ি হামলা এবং ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলা, সবেতেই জৈশের হাত ছিল। পুলওয়ামায় ৪৪ জন সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যুর ক্ষত আজও ভারতীয়দের মনে দগদগে।
জৈশের সদর দফতর বাহাওয়ালপুরে অবস্থিত। ভারতের গোয়েন্দা সূত্রে খবর, যেখানে ১৮ একরের সুবহান আল্লাহ কমপ্লেক্সে নিয়োগ, তহবিল সংগ্রহ এবং জিহাদি প্রশিক্ষণ চলে। এই কমপ্লেক্সে একটি মসজিদ, ৬০০ শিক্ষার্থীর মাদ্রাসা, জিম এবং সুইমিং পুল রয়েছে। ভারতের গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সমর্থনে জৈশ এখানে অবাধে কার্যক্রম চালায়।
আজহার একা নয়, তার পরিবারও জৈশের কার্যক্রমে জড়িত। তার ভাই আব্দুল রউফ আসগর জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনা করে। এই হামলায় তার বোন ও জামাই ছাড়াও অন্যান্য আত্মীয় নিহত হলেও আজহার সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায়নি। জৈশের বিবৃতিতে আজহারের মৃত্যুর কথা উল্লেখ নেই। তবে জৈশ ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় সেনা ও গোয়েন্দা বিভাগের অন্যতম সাফল্য বলে গণ্য করা হচ্ছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী স্পষ্ট বলছে,এই প্রত্যাঘাত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি বড় সাফল্য। কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন কীভাবে পাক ঘাঁটিগুলি কার্যত ধ্বংস করে দিয়েছে ভারত। পাকিস্তান এই হামলাকে ‘অযাচিত আগ্রাসন’ বলে বর্ণনা করেছে। আর পাক মদতপুষ্ট জৈশ প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে। ভারত অপেক্ষমান মাসুদ আজাহার বাহিনীর ধ্বংসের খবরের জন্য।