বিশ্বাসে মিলায় চাকরি? মন্দার বাজারেও নাকি ষোলো আনা মানতেই চাকরি দেয় এই ‘সার্ভিস কালী’!
Service Kali : এই পরিস্থিতিতে চাকরির আশায় দিকে দিকে সংস্কারকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে মানুষ। আর আবারও ফিরে ফিরে আসছে এই সার্ভিস কালীর প্রসঙ্গ।
“দেখা দে, নয় টাকা দে”, মা কালীকে নিয়ে এমন প্রচার অবশ্য বহুদিনের। বাঙালি তথা হিধুদের ব্যবহারিক জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে কালী মাহাত্ম্য। এমনকী প্রাণের শহর কলকাতার নামের সঙ্গেও যোগ রয়েছে কালীর প্রসঙ্গ -এর। কখনও দক্ষিণা, কখনও রটন্তি, কখনও আবার স্রেফ মুণ্ডমালিনী, অথবা ডাকাত কালী, নানান রূপে ধরা দেন দেবী। বছরে একটা মাত্র দিন, এক রাতের পুজোতে তাই সীমাবদ্ধ থাকেন না দেবী। শহরের অলিতে গলিতে ছড়িয়ে থাকা প্রাচীন মন্দিরগুলির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অজানা ইতিহাস। আর সেই ইতিহাসেই রয়ে গিয়েছেন ‘ষোলো আনার কালী’।
প্রাচীনত্বের নিরিখে এই ইতিহাস প্রায় শতাব্দী ছুঁইছুঁই। আজ থেকে প্রায় ৮২ বছর আগের কথা। খোদ কলকাতার বুকে ভাগাভাগি হয়ে গেলেন প্রচলিত এক কালী। কিন্তু তাতে ঐতিহ্যে বিশেষ ছেদ পড়েনি। পাড়ার বাসিন্দাদের বিবাদের জেরে দেবীর যে বিশেষ কিছুই এসে যায় না, তার প্রমাণ পেলে এই কালীর ইতিহাসেই। বাঁকুড়া শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরেই গেলে সোনামুখী পৌরসভা। মূলত কার্তিক পুঁজির জন্যই বিখ্যাত এই এলাকা। অলিতে গলিতে কার্তিক পুজো হয় এখানে। তবে এর পাশাপাশি আরও একটি পুজোর কথা না বললেই নয়, তা হল কালী। এখানেই রয়েছে বিখ্যাত ষোলো আনা কালী বা সার্ভিস কালী। এই শহরে মায়ের মহিমা নাকি বিশাল, তাইতো মায়ের আশীর্বাদ নিতে এখনও দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন হাজার হাজার দর্শনার্থী। সোনামুখী শহরের সাত নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে এই মা কালীর মন্দির। কিন্তু কেন এমন অদ্ভুত নাম এই কালীর? ষোলো আনা অথবা সার্ভিস শব্দের আসল কারণ জানলে অবাক হতে হয় আজও।
আরও পড়ুন - রীতিমতো শিকলে বেঁধে পুজো করা হতো দেবীকে, বাংলার এই কালীকে ঘিরে রয়েছে অজানা রহস্য
সরকারি অথবা বেসরকারি চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। ছোট থেকে পিঠে বইয়ের বোঝা বয়ে নিয়ে একটা সঠিক গন্তব্যে পৌঁছনো, এটাই সব পরিবারের আশা। কিন্তু বর্তমান বাজারে ওই চাকরি নামক বস্তুটাই বড় দুরুহ। নতুন করে চাকরি পাওয়া তো দূর, বিশ্ব জুড়েই চলছে দেদার কর্মী ছাঁটাই। সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমাগত আমাদের গলা টিপে ধরছে। কোথাও পালাবার জো নেই। আর ঠিক এই পরিস্থিতিতে চাকরির আশায় দিকে দিকে সংস্কারকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে মানুষ। আর আবারও ফিরে ফিরে আসছে এই সার্ভিস কালীর প্রসঙ্গ।
কথিত আছে, চাকরির কামনা পূর্ণ করায় এই কালী ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তাই সেই থেকে সার্ভিস কালী নামকরণ। আবার অন্য একটি মতে, বাঁকুড়ার সোনামুখী শহরের এই মহিমান্বিত কালী ওই এলাকায় যা সাধারণ মানুষের কাছে 'সার্ভিস কালী' নামে পরিচিত কারণ স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখে শোনা যায়, একটা সময় সোনামুখীর এক শ্রেণীর বাস মালিক পক্ষ বাস সার্ভিস চালু করার জন্য সরকারি লাইসেন্স কিছুতেই পাচ্ছিলেন না। শেষে এই যাওয়ার কাছে ষোলো আনা অর্থাৎ এক টাকা দক্ষিণা দিয়ে মানত করেছিলেন। ব্যাস তাতেই নাকি হাতেনাতে ফল। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ব্যাস সার্ভিস নিমেষে চালু হয়ে যায়। আর সেই থেকেই মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জন্মায় কাজের জন্য দেবীর কাছে মানত করলে ফলবেই। সেই থেকে এমন নাম সার্ভিস কালী অথবা ষোলো আনা কালী।
আরও পড়ুন - ঘুমের বড়ি নয়, মিষ্টি খেয়েই ঘুমাতে যান কালীঘাটের কালী, জানেন কী নাম এই মিষ্টির?
ভক্ত আর ভক্তির জোর অনেক। বিজ্ঞান সেখানে প্রায়ই মাঠে মারা যায়। এখনও ওই অঞ্চলে চাকরি পাওয়ার জন্য ছুটে যায় হাজার হাজার মানুষ। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। তাই চাকরির আশায় যখন নাভিশ্বাস উঠছে তখন ওই বিশ্বাসটুকুতেই ভরসা করে ছুটে যাচ্ছেন মানুষ। শোনা যায়, এখনও নাকি মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন দেবী।
প্রথম দিকে নেহাতই সাদামাটা এক মা কাকুর রূপ ছিল এটি। গায়ে গয়না বলতেই বিশেষ কিছুই ছিল না। এখন অবশ্য দেখলে পুরনো সেই চেহারা মেলানো মুশকিল। এখন মা অষ্টাঙ্গ গয়নাতে পরিপূর্ণ। এর কারণও অবশ্য ওই সার্ভিস মাহাত্ম্য। চাকরির মনোবাঞ্ছা পূরণ হলেই মানত পূরণ করতে দেবীকে গয়নায় সাজিয়ে দেন অনেকেই।কালীপুজোর সময় টানা তিন দিন এই পূজাকে কেন্দ্র করে মেতে ওঠেন সারা সোনামুখীবাসি থেকে শুরু করে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক ভক্তবৃন্দ। তবে শুধু পুজো বলে নয়, সারাবছরই এখানে পুজো দিতে আসেন অজস্র ভক্ত। চাকরি কি আদতেও এই কারণেই হয়? বিজ্ঞানের যুগে দাঁড়িয়ে বিশ্বাস করতে বেশ কষ্টই হয়, কিন্তু ভক্তির জোরের হারা ছাড়া উপায় থাকে না।