ক্ষমা প্রার্থনা! কেন আরজি করের চিকিৎসকদের কটাক্ষ করেছিলেন? কী সাফাই কাঞ্চন মল্লিকের?
Kanchan Mullick: জুনিয়র চিকিৎসকরা কোনও সরকারি বেতন বা বোনাস কিছুই পান না। শাসকদলের বিধায়ক কাঞ্চন এই সামান্য তথ্যটুকুও না জেনে এত বড় অভিযোগ তুললেন কোন ভিত্তিতে?
আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে বিচার চেয়ে গোটা রাজ্যই প্রায় রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছে। শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে দোষীদের আড়াল করা, পুলিশের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ লোপাটের একাধিক অভিযোগে সরব হয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে তারকা, সকলেই। আরজি করের জুনিয়র চিকিৎসকরাও ধর্নায় বসেছেন। তারা লালবাজার অভিযান করেছেন, কর্মবিরতি পালন করেছেন। এই আন্দোলন, মিছিলের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূলের উত্তরপাড়ার বিধায়ক তথা অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেছিলেন যে, এই ডাক্তাররা বেতন নেবেন তো? সরকারি চাকুরে হয়ে শাসকদলের বিরোধিতা করেও ডাক্তাররা পুজোর বোনাস নেবেন কিনা প্রশ্ন তোলেন কাঞ্চন। তারপরেই সমস্ত মহল থেকে কটাক্ষ ধেয়ে আসে তাঁর দিকে। বেগতিক দেখে অবশেষে ক্ষমা চেয়েছেন কাঞ্চন। তবে তাঁর এই মন্তব্যের কারণ হিসেবে যে পটভূমি খাড়া করেছেন তা অত্যন্ত ছেঁদো বলেই মনে করছেন নেটিজেনদের একাংশ।
প্রথম কথা, তিনি চিকিৎসকদের দিকে যে অভিযোগ ও প্রশ্ন তুলেছিলেন তারই কোনও ভিত্তি নেই। জুনিয়র চিকিৎসকরা কোনও সরকারি বেতন বা বোনাস কিছুই পান না। একজন রাজনীতি করতে আসা মানুষ, একজন শাসকদলের নেতা এই সামান্য তথ্যটুকুও না জেনে এত বড় অভিযোগ তুললেন কোন ভিত্তিতে? এমন সংবেদনশীল ইস্যুতে রাস্তায় নামা মানুষদের আন্দোলনকে তিনি অপ্রয়োজনীয় বলছেন কীসের ভিত্তিতে? দীর্ঘদিনের অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিকের সহ অভিনেতারাও একের পর এক তাঁকে বয়কট করতে থাকেন। প্রথম সরব হন অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। সহঅভিনেতা নীল মুখোপাধ্যায় কাঞ্চন মল্লিকের সঙ্গে একটি থিয়েটারের শো বাতিল করেন। এর পরে ক্ষমা চান কাঞ্চন। ভিডিও পোস্ট করে বলেন, “গতকাল একটি ধর্নামঞ্চে আমি কিছু মন্তব্য করে ফেলি। যা নিয়ে সমালোচনা হয়। আমি আমার বক্তব্যের জন্য দুঃখিত এবং লজ্জিত।”
আরও পড়ুন- প্রতিবাদীদের মা-বোনের বিকৃত ছবি দেওয়ালে টাঙানোর হুমকি দিচ্ছেন খোদ তৃণমূল নেতা!
কেন এমন অসংবেদনশীল মন্তব্য করেছেন তিনি? কাঞ্চন বলছেন, তিনি অন্তর থেকে অনুভব করতে পেরেছেন এই গোটাটাই তাঁর ত্রুটি। কাঞ্চন মল্লিক বলেছিলেন, মিছিলের নাম করে অশান্তি, বিভ্রান্তি, বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো করলে, নবান্ন অভিযান করলেই মূল দোষীর শাস্তি হয়ে যাবে কিনা সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন কাঞ্চন। ক্ষমা চেয়ে ভিডিওতে কাঞ্চন বলেছেন, বাড়িতে তাঁর স্ত্রী, অসুস্থ ব্যক্তি রয়েছেন। যাঁদের সুস্থ রাখতে চিকিৎসা পরিষেবার প্রয়োজন পড়ে তারও। তাছাড়া তিনি আরও অনেককেই স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা করে দেন। তারপরেও চিকিৎসকদের নিয়ে এমন মন্তব্য কেন? কাঞ্চনের সাফাই, তাঁর ভ্রাতৃসম এক বন্ধুর মা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ থেকে মৃতপ্রায়। ওই ব্যক্তি সেদিনও পরিষেবার কারণে কাঞ্চনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। চিকিৎসকদের ধর্মঘট থাকায় তাঁকে বাঁচানো যায়নি। এই ঘটনায় বিপর্যস্ত হয়ে যান কাঞ্চন। তাই ওই ধরনের মন্তব্য করে ফেলেছেন। চিকিৎসকদের বা চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে কোনও বিরূপ মনোভাব তাঁর নেই।
কিন্তু তাঁর এই ক্ষমাপ্রার্থনার আগেই যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। নাট্য পরিচালক সুজননীল মুখোপাধ্যায় তাঁদের থিয়েটার বাতিল করে দিয়েছেন। বন্ধু তথা অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী কাঞ্চন মল্লিকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। কাঞ্চন প্রসঙ্গে ফেসবুকে অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘‘ঘাঁটা মল্লিক চাটা মল্লিক ফাটা মল্লিক টা টা মল্লিক।’’ আম জনতার থেকে ধেয়ে আসা কটাক্ষ তো রয়েইছে। একজন বিধায়ক পরিচয়ের পাশাপাশি তিনি একজন অভিনেতাও। যেখানে তারই সহকর্মীরা পথে নামছেন, সারা রাজ্যের মানুষ বিচার চাইছেন তিলোত্তমার জন্য সেখানে দীর্ঘদিন মানুষের ভালোবাসা কুড়িয়ে যে অভিনেতা টালিগঞ্জে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি এত অসংবেদনশীল হলেন! শাসকের ঘনিষ্ঠ হতে গেলে, ক্ষমতা ধরে রাখতে গেলে তবে মগজ বিসর্জনই দিতে হয়, তাই কি প্রমাণ করছেন কাঞ্চন?