ঠোঁটকাটা কী করিয়া দিল Kiss-তিমাত?

Kiss as Protest: প্রকাশ্যে চুমু খাওয়াটা যেন একটা নজরকাড়া, চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স হয়েই না রয়ে যায়

আচ্ছা পাওয়ার, মানে ক্ষমতা আর কী, সব সময় অমন পিউরিট্যান হয় কেন? এই যে বলে উইথ পাওয়ার কাম্‌স রেসপন্সিবিলিটি, তো এই দায়িত্ববোধ কেন হরবখৎ অমন গোমড়া, খিটখিটে, ভেস্তে দেওয়া মেন্টালিটিপ্রবণ করে তোলে কারওকে? আরে ভাই, তোর তো সেটা আছে যা অন্য আর দশ জনের নেই, তা হলে তুই কেন অমন হবি? আহা তুই তো এমনকী এমন শিখরে, যে হিংসে ভাবটিও করার জো নেই তোর… যে দেখো, অমুককে কেমন সবাই ধরে, লেপ্টে চুমু খাচ্ছে কিন্তু আমায় খাচ্ছে না, ভ্যাঁ! ভাই, তুই এখনও বড় নাদান রয়ে গেলি। তোর পাওয়ার আছে পাওয়ার। আর পাওয়ার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অ্যাবসোলিউট মাত্রায় করাপ্ট করে। ফলে তুই চাইলেই যে কোনও কাননের ফুল ছিঁড়ে বইয়ের ভাঁজে রেখে দিতে পারিস। জানি, সেটা ভদ্রতা নয়, আনএথিকাল কিন্তু সেটাই তো আবার পাওয়ার। যা তোর আছে আর কারও নেই। আর শোন ভাই, মিথ্যে বলিস না, তুইও পাওয়ার চেয়েছিলিস, ঠিক এ অপার আনন্দখানির হেতু। পেয়ে গেছিস সে সব, ওকে? তা’লে খামখা কে কোন আলোছায়ায় জড়িয়ে বা না জড়িয়ে চুমু খাচ্ছিল, তাতে তোর কী বল তো? ছাড় না, চিল্…তোর কাছে বাকি সব কিড়ে মকওড়ে। না?

অবশ্য হ্যাঁ, তোর একটা ভ্যালিড পয়েন্ট এটা হতে পারে যে, আমার যা খেতে ইচ্ছে করে (সম্ভবত!), ঠিক তা-ই কেন প্লিবিয়ানদেরও হাতের, ইয়ে সরি, ঠোঁটের নাগালে থাকবে। এ হেন প্রশ্নের উত্তরে আমি শুধোব, যে দেখ, দেয়ার ইজ রুম ফর প্লেন্টি। তোর অভাব না হলেই তো হলো। আর জগতে অভাব হলেও, অন্তত তোকে যেন কুটোটিও না নাড়তে হয়, এই তো? আহা, অলরেডি তুই নিজেকে সেই গ্যারান্টি দিয়ে ফেলেছিস, আন্ডারস্ট্যান্ড ব্রাদার। তা হলেও তুই, মানে অধিকাংশ যাঁরা ফটাস করে হাতে পাওয়ার পান, এই পরিমাণ খচাকাত্তিক কেন? ওকে, সেডিজম-এর মধ্যে একটা আলাদা মওজ আছে, মানছি, তাও ব্যাপারটা ভাবাচ্ছে রে তোপসে! মানে মওজ তো নিশ্চয়ই খেলিয়ে খেলিয়ে জালে তোলায়, তাই না? কে জানে বাবা, হিন্দি সিনেমা দেখে তো তাই বুঝেছিলাম। কিন্তু এখানে তো কোনও খেলা হবে’র জো নেই দেখছি!

সেটা কি এ জন্যে যে, বারে বারে প্রতিরোধ হয়ে শুধু চুমুই আসে ফিরে, যত প্রাতিষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞার তীরে। অর্থাৎ যখনই চুমু as an act of resistance, defiance হয়ে আসছে, তত বারই প্রতিষ্ঠান সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে ছাড়াচ্ছে লিপলক্। কারণ পাওয়ার বুঝতে পারছে, সারিবদ্ধ পুরুষ-নারী বা একই লিঙ্গেরই নয় দু’জন যদি অক্লান্ত চুমু খেয়ে চলে, সে এমন এক স্পেক্ট্যাকলের রূপ নেবে, যে সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে। যদি না প্রথম রাতেই বেড়াল…ইয়ু নো বাকিটা। কথা হলো একে স্পেক্ট্যাকল বলছি কেন? যাকে আমরা, অন্তত ভারতীয়রা শিখে এসেছি, ‘ব্যক্তিগত’ এক মুহূর্ত বা আবেগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে, তা-ই যখন সর্বসমক্ষে এক ‘পারফরম্যান্স’ রূপে ‘প্রদর্শিত’ হচ্ছে বিশেষ এক কারণে, তা আর নর্মাল থাকে না, প্রথমত। পয়েন্ট নাম্বার দুই, যৌথের ভাবনা পাওয়ারের কাছে চক্ষুশূল, স্বাভাবিক ভাবে, আর চুমুকে প্রতিরোধের পর্যায়ে উন্নীত করলে তো আরওই, কারণ হাতে হাত ধরা বা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটার চেয়ে অনেক কাছাকাছি আসা যাচ্ছে জড়িয়ে একে অপরের ঠোঁটে চুমু খেলে। অর্থাৎ একটা বড় সম্ভাবনা থাকছে, আরও নিবিড়ভাবে ইন্ডিভিজুয়ালের, সে প্রতিবাদে জড়িয়ে পড়ার। না, একেবারেই বলছি না, চুমু না খেয়ে প্রতিবাদে, প্রতিবাদী নিবিড় ভাবে জুড়ছেন না। আলবাৎ জুড়ছেন, ইতিহাস বলে, জুড়েছেনও। আমি জাস্ট বলছি, দুই মানুষের নৈকট্য, অতএব সেন্স অব বন্ডিং, চুমুর ক্ষেত্রে বাড়ার সম্ভাবনা প্রবলভাবেই থেকে যাচ্ছে। অতঃপর বড় ব্যক্তিগত এক মুহূর্ত/পদক্ষেপ যাবতীয় আগল খুলে ছোঁয়াচে রোগের ন্যায় সর্বজনীন হয়ে ওঠে। কেমন যেন একটা কমিউন তৈরি হয়, আপন ইচ্ছাপত্রসহ। যেন বা ghetto! যেখানের দিনরাত নির্ধারণ করেন সে চৌহদ্দির বাসিন্দারাই। এবং এখানে একটা ওরা-আমরা’র বিভেদও আলবাৎ তৈরি হচ্ছে। মুহূর্তেই অন্য এক বিস্ফোরণও ঘটে যায় কিন্তু এখানে, খেয়াল করুন। নিষেধাজ্ঞা জারি করা ক্ষমতা’র বিরুদ্ধেই নয় শুধু, প্রতিবাদী ঠোঁট এখানে একজোট হয়, নিজভূমে কর্তৃত্ব করা প্রিয় জনের শাসন/শিক্ষার বিরুদ্ধেও। সহজ করে বলতে গেলে, যে বাবা-মা ও পাড়াতুতো জ্যাঠাসকল অ্যাদ্দিন ধরে ‘শালীনতা’র এক তোতাপাখিসম পাঠ পড়িয়ে গিয়েছেন, ঔচিত্ত্য ইত্যাদি নিয়ে, তাঁরাও তখন টার্গেটে সেঁধিয়ে যান। হয়ে ওঠেন অপর। ওরা। আমাদের থেকে আলোকবর্ষ দূরে যাদের অবস্থান।

এ বার সেই ghetto থেকে আরও এক জগদ্দল পাথরকে সরানোর সিসিফাসিয় প্রয়াস আরম্ভ হয়। এরে কয়, ‘কোনও প্রশ্ন নয়’ সিন্ড্রোম। কারণ, তুমি হলে গিয়ে কাল কা যোগী, আমার হাঁটুর বয়সী, তা ছাড়া আমার অভিজ্ঞতাও ঢের বেশি, অতএব আমি একটা পাওয়ারের জায়গায় রয়েছি। বলাই বাহুল্য, তুমি চুপ করে শুনবে আমি যা বলছি। বড় হলে বুঝবে, যে আমি এ সবই আসলে তোমার ভালোর জন্যেই বলছি। এর পর আবার এও মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হবে যে, বড় হলে, আজ যে নিজেকে ‘ভিক্টিম’ ভাবছে, সে-ই শিকারের অগাধ সুযোগ পাবে। ফলে দেখুন, কী সুন্দরভাবে শৈশব থেকেই আমাদের ‘পাওয়ারফুল’ হয়ে ওঠার কেরিয়র-পথ দেখিয়ে দিতে থাকেন পরম আত্মীয়রাই (ব্যতিক্রম অবশ্যই থাকেন)।

প্রকাশ্যে চুমু খেয়ে, আমার ধারণা, এই সব চাপিয়ে দেওয়ার ঘোরতর বা মুহ তোড় বিরুদ্ধাচরণ করা হয়। একবার অন্তত ‘আমিত্বের’ উদ্দাম আস্ফালন। অন্তরের রেবেল, যে কোনও ফর্মেই হোক না কেন, সবার মধ্যেই বিরাজমান। আসল খেলাটা হলো, কে কতক্ষণ সে দম ধরে রাখে। সে খেলায় আমি-আপনি অধিকাংশই হেরে যাব (আমি তো বোধ হয় গেছিই অলরেডি) একদিন না একদিন। নানা কারণে। আবার হয়তো কেউ হারবেনও না, আশা। কিন্তু প্রস্পেক্টিভ হেরো’রা যদ্দিন না হারছে, একবার তো অন্তত শেকল ছিঁড়বে। প্রকাশ্য চুমু খাওয়া বা Kiss-athon, যে নামেই ডাকুন না কেন, যত বার হবে, আমার মনে হবে, এই শেকল ছেঁড়ার ক্ষণ এল। হ্যাঁ, মনে মনেই না হয়। প্রথাগত থেকে একটা ডিপার্চার তো অন্তত হলো আর তাতে আমি আমার দু’আনা তর্ক-ই না হয় রাখলাম। সে এগিয়ে যেতেও তো আমায় কেউ হাতে ধরে শেখায়নি। আমার অন্তরের রেবেল বাড়ি ফিরে নিজেকেই ফিসফিস করে বলতে তো পারবে এক বার অ্যাট লিস্ট, ইনকিলাব জিন্দাবাদ। এই বাজারে কাফি হ্যায়। না?

শুধু আমার একটাই অনুরোধ, আর্জি যা বলবেন, প্রতিবাদীদের কাছে। প্রকাশ্যে চুমু খাওয়াটা যেন একটা নজরকাড়া, চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স হয়েই না রয়ে যায়। এখানে উপড়ে ফেলা তো লক্ষ্য জ্যাঠামোকে, নীতিপুলিশিকে। চুমু খাওয়া এখানে একটি প্রতিবাদী টুল মাত্র। এবার সেটাই যদি সেন্টারস্টেজ নিয়ে নেয় (এবং ক্ষমতা যদি এটিকেই ‘ইনডিসেন্ট’-ফিসেন্ট আখ্যা দিয়ে উল্টে ধরপাকড় শুরু করে) তা হলে তো লক্ষ্যচ্যূত হবে কার্যক্রম। অর্থাৎ আমি দেব চমকে কিন্তু শুধু চমকেই দেব না। দেখাব পাওয়ারকে, যে আমি আলাদা। মাত্র ফটো-অপ-এর জন্যে শিলান্যাস করি না। পাখির চোখ আমাদের গোড়ার গলদে। টিকে থাকতে এসেছি বস্।

এটুকুই আশা করব আগামীর প্রতিবাদীদের থেকে। মনে রাখতে বলব, স্লাটওয়াক মানে হট প্যান্ট ও বিকিনি পরে শুধু হেঁটে যাওয়া নয়। কারণ, কম জামাকাপড় পরলেই শুধু এ দেশে মেয়েদের হেনস্থা হতে হয় না, গোটা শরীর ঢাকা বস্ত্র পরেও ছারখার হয়ে যায় তারা। ফলে, আমরা যেন একটা প্রতিবাদের রুটকে তুলে ধরতে গিয়ে সমস্যার গোড়াকেই আবছা না করে ফেলি (সরি রিপিট করলাম পর দ্য সেক অব আন্ডারলাইনিং)। ক্ষমতাও এ মিসস্টেপের অপেক্ষায় ওঁৎ পেতে থাকে নির্ঘাৎ। একটা মৃদু ঘেউ হিয়ার, একটা মৃদু ঘেউ দেয়ার, আর গোটা ন্যারেটিভ পাল্টে যাবে গোল্লায়।

তাই… সাধু সাবধান।

কিস-কিন্ধ্যা পর্ব সগৌরবে চলুক। কারণ ব্যাদে লেখা আছে তো, লাভ-অল!  

More Articles