বিহারে ভরাডুবির মধ্যেও যেভাবে ভেসে রইল বামেরা
Bihar Election Analysis: রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, ভোটার তালিকা সংশোধন (Special Intensive Revision) এবং জোটের অন্যান্য দলের নির্বাচনী কৌশল তাদের ক্ষতি করেছে।
বিহার নির্বাচনের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে যখন বড় বড় রাজনৈতিক শক্তির ভরাডুবি স্পষ্ট হয়ে উঠছে, ঠিক সেই সময়েই নজর কেড়েছে বামপন্থী দলগুলোর জয়। রাজনৈতিক সমীকরণ যখন একের পর এক বদলে যাচ্ছে, তখন এই ফলাফল বামেদের জন্য যেমন স্বস্তির বার্তা, তেমনই হতাশারও। মহাগঠবন্ধনের অংশ হয়েও সিপিআই, সিপিএম এবং সিপিআই (এমএল) লিবারেশন মিলিয়ে জয় এসেছে মাত্র ৩টি আসনে। ২০২০ সালে যেখানে বামদলগুলো উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছিল, এবার সেখানে তাদের পিছিয়ে যেতে দেখা গেল। ভোট গণনার শুরু থেকেই পিছিয়ে পড়া বাম শিবিরের নেতৃত্বও এই ফলকে রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মনে করছে। জোটের ভরসা হয়েও এত কম আসন পাওয়া আগামী দিনে তাদের কৌশল ও ভোটভিত্তি— দু'টো নিয়েই বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
এবার বামদলের মোট আসনসংখ্যা হাতেগোনা কয়েকটি। CPI(ML)-Liberation জিতেছে মাত্র ২টি আসনে— পালিগঞ্জ ও করাকাট। CPI-M পেয়েছে ১টি আসনে— বিভূতিপুর। CPI এবারে একটিও আসন জিততে পারেনি। ২০২০ সালে যেখানে বামদলগুলো মোট ১৬টি আসন পেয়েছিল, ২০২৫-এ ৩৩টি আসনে লড়েও তারা জয় পেয়েছে মাত্র ৩টিতে। বেশি আসনে লড়েও ফলাফল খারাপ হয়েছে বামদলগুলির, এই নিয়েই সরব রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। তাঁদের মতে, বামদলের প্রত্যাশা ও বাস্তবতার এই বিরাট ব্যবধানই তাদের দুর্বলতা স্পষ্ট করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন
এত বড় পরাজয় আগে একবারই দেখেছিলেন লালুপ্রসাদ যাদব
বিশ্লেষকদের মতে, বামদলের শক্তি অনেকটাই নির্ভর করে মহাগঠবন্ধনের সমর্থনের উপর। কিন্তু এবারের নির্বাচনে সেই সমন্বয়ও যথেষ্ট কার্যকর ছিল না। মাঠে ময়দানে সহযোগিতা কম থাকায় বামদলগুলো প্রয়োজনীয় সুবিধা পায়নি। একই সঙ্গে তাঁরা এও বলছেন, বামদল তাদের পুরনো ভোটব্যাঙ্ক হারিয়েছে, ফলে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, ভোটার তালিকা সংশোধন (Special Intensive Revision) এবং জোটের অন্যান্য দলের নির্বাচনী কৌশল তাদের ক্ষতি করেছে। CPI(ML)-Liberation-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, মহাগঠবন্ধনে নতুন অংশীদার যুক্ত হওয়ায় প্রত্যাশার তুলনায় তারা খুব কম আসন পেয়েছিল। এতে তাদের রাজনৈতিক বিস্তার সীমিত হয়ে যায়। এদিকে, জোটের অংশীদার Vikassheel Insaan Party একটিও আসন জিততে না পারায় জোটের সামগ্রিক শক্তিও দুর্বল হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাম শিবিরের ফলাফলেও।
আরও পড়ুন
নীতীশকে কেন আটকাতে পারল না তেজি ঘোড়া তেজস্বী?
CPI-M তাদের সহযোগী CPI(ML)-Liberation-কে অভিনন্দন জানিয়েছে, কারণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তারা কিছু আসন ধরে রাখতে পেরেছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে বামদলের নেতৃত্ব মনে করছে— সংগঠন, প্রচার কৌশল ও ভোটভিত্তি পুনর্গঠিত করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।
২০২০ সালের সাফল্যের তুলনায় ২০২৫-এর বিপর্যয় দেখিয়ে দিয়েছে, বামদলের রাজনৈতিক ভিত্তি ক্রমেই নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। একদিকে মহাগঠবন্ধনের সমন্বয়হীনতা, অন্যদিকে নিজস্ব ভোটব্যাঙ্কে ধস— এই দুই চাপে বামদলগুলোর সংগঠন ও কৌশল কার্যত দুর্বল হয়ে পড়েছে। ভবিষ্যতে টিকে থাকতে হলে বামদলকে শুধু নির্বাচনী জোটের উপর নির্ভর না করে মাঠপর্যায়ের সংগঠন, জনমুখী আন্দোলন, এবং গ্রামীণ ভোটভিত্তি পুনর্গঠনে জোর দিতে হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজেদের শক্তি বাড়াতে না পারলে জোটেও তাদের প্রভাব কমে যাবে, আর রাজনীতির কেন্দ্রেও অবস্থান ক্রমশ কমবে। এবার তাই বামের সামনে সবচেয়ে জরুরি কাজ—নিজেদের নতুনভাবে ভাবা, গড়া এবং ভোটারদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা। এই ফলাফল বাম রাজনীতিতে নতুন করে কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে— এখন কি তারা শুধু জোটের শক্তির উপর নির্ভরশীল? নাকি এখনই সময় নিজেদের রাজনৈতিক ভিত্তি নতুন করে শক্তিশালী করার?

Whatsapp
