কুড়িটি টাকা টেলিগ্রাফ-মানিঅর্ডার করে পাঠাবেন: আর্জি ছিল নজরুলের চিঠিতে

Letters of Kazi Nazrul Islam: মোসলেম ভারত পত্রিকার ব্যস্থাপনা সম্পাদক মোহম্মদ আফজাল-উল হককে অর্থ কষ্ট জানিয়ে নজরুল একটি চিঠি লেখেন। ডাক ঘরের ছাপ অনুসারে জানা যায়- চিঠিটি পাঠানো হয়েছিল ২৮ মার্চ ১৯২২, ১৪ চৈত্র

কান্দিরপার
কুমিল্লা
১৫ই চৈত্র

ভাই ডাবজল!

‘মোসলেম ভারত’ কি ডিগবাজি খেল নাকি? খবর কী? ‘ব্যথার দান’ কেমন কাটছে? কত কাটল? অন্যান্য কাগজে সমালোচনা বা বিজ্ঞাপন বেরুল না কেন? ‘সার্ভেন্ট’ আর ‘মোহাম্মদী’-র সমালোচনা আর ‘বিজলী’ ও বাংলার কথা’-য় বিজ্ঞাপন দেখেছি মাত্র। ‘আরবি ছন্দ’ দেখেছেন? কে কী বললে? আপনার মুমূর্ষু অবস্থা দেখেই ওটা ‘প্রবাসী’তে দিয়েছি। তার জন্য দুঃখিত হয়েছেন না-কি? আর সব খবর কী? ‘মোসলেম ভারত’-এর অবস্থা জানবার জন্য বড্ড উদ্‌বিগ্ন। এতদিন চট্টগ্রাম বা অন্য কোথাও যেতে পারিনি; তার কারণ এ-বাড়িতে অন্তত দু'জন করে অনবরত শয্যাগত রোগশয্যায়। এখন আবার বসন্ত হয়েছে মেয়েদের। এসব ছেড়ে যেতে পারিনি। তা ছাড়া মায়ের স্নেহ আর নিজের আলস্য ঔদাস্য তো আছেই। চট্টগ্রামে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কনফারেন্সে আসবেন নাকি? আমি যাব নিশ্চয়ই দেখতে। দুই কাজই হবে। নিজের শরীরও ভালো নয়। মনের অশান্তির আগুন দাবানলের মতো দাউ দাউ করে জ্বলে উঠছে। অবশ্য ‘আমি নিজেই নিজের ব্যথা করি সৃজন’! হ্যাঁ আমায় আজই কুড়িটি টাকা টেলিগ্রাফ-মানিঅর্ডার করে পাঠাবেন kindly। বড্ড বিপদে পড়েছি। আর কারুর কাছে আমি যাই-ই হই, আপনার কাছেও আমি হয়তো ভালোতে-মন্দতে মিশে তেমনই আছি। এই অসময়ে আমার আর কেউ নেই দেখে আপনারই শরণ নিলুম। আশা করি বঞ্চিত হব না, তা আপনি যত দুর্দশাগ্রস্ত হোন না কেন। টাকা চাই-ই-চাই, ভাই! নইলে যেতে পারব না! অনেক কষ্ট দিলুম – আরও দেব। ‘ব্যথার দান’ মোট নয়খানা পেয়েছি মাত্র ; আরও খান পনেরো আমার দরকার। যাক টাকা পাঠাবেনই যা করে হোক।

আমার লেখাটা তা হলে ‘উপাসনা’য় দিয়ে দেবেন যদি ‘মোসলেম ভারত’-এ না বেরোয়।

চির-স্নেহানুবদ্ধ

           নজরুল

More Articles