সংসার সামলে মডেলিং এবং নিজস্ব বুটিক, ‘মেসির স্ত্রী’ পরিচয়কে যেভাবে ছাপিয়ে গেলেন আন্তোনেল্লা
Lionel Messi : মেসির নিপাট সুখী সংসারের নেপথ্যে অবশ্যই রয়েছেন তাঁর স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো
আর্জেন্টিনার জয়ের রেশ কাটেনি এখনও। এখনও চোখ বন্ধ করলেই স্পষ্ট সেই স্মৃতি। টানটান উত্তেজনা। গোল, পাল্টা গোল, অতঃপর জয়ের বাঁশি। একমাস ধরে একটু একটু করে বোনা একটা স্বপ্নপূরণ। এবছর কাতার বিশ্বকাপের পরতে পরতে ছিল মেসি ম্যাজিক। মাত্র একটা হার, এবং তার পর থেকে অনবদ্য কামব্যাক। মেসি যেন জিতবেন বলেই কাতারে পা রেখেছিলেন। একটা সুযোগও তাই হাতছাড়া করেননি তিনি। নীল সাদা জার্সির এবারের সফরটা অকল্পনীয়। একদিকে মেসির বিদায়বেলায়, একটা অপূরণীয় বিশ্বজয়ের খিদে তাড়া করে বেরিয়েছে তাঁকে অনবরত, অন্যদিকে দলের ভিত তৈরি করে দেওয়ার দায়, নতুনদের প্রতিষ্ঠিত করার দায়। এসব কিছু ঘাড়ে নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন মেসি। যার শেষ পেরেকটি পোঁতা হল রবিবার রাতে।
মাঠে যেমন মেসি টিম ম্যান, ঠিক তেমনই মাঠের বাইরে ছাপোষা একজন ফ্যামিলি ম্যান। তার প্রমাণ অবশ্য আগেই মিলেছে। এমনকী ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিতর্কের মুখোমুখিও হতে হয়নি তাঁকে। নিপাট সুখী সংসারের একটা ছবিই উঠে এসেছে বারবার। আর এই ছবিটার নেপথ্যে যিনি, তিনি অবশ্যই তাঁর স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো। মেসির এই দাঁতে দাঁত চেপে তিল তিল করে গড়া লড়াইটা তিনিই দেখেছেন খুব কাছ থেকে। তাই আর্জেন্টিনার জয়ের পরে এ নিয়ে যে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় কলম ধরবেন, এ তো অনিবার্য ছিলই!
সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় আন্তোনেল্লা। তা অবশ্য কেবল মেসির স্ত্রী হিসেবে নয়। পাশাপাশি তিনি নিজেও একজন পরিচিত মডেল। ফলোয়ার সংখ্যাও কম নয়। মেসি বাহিনীর জয়ের পর আন্তোনেল্লা লিখলেন, “বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। কী ভাবে লিখতে শুরু করব বুঝতে পারছি না। মেসি তোমার জন্য আমরা গর্বিত। কখনও হাল ছাড়তে নেই, ধন্যবাদ এটা শেখানোর জন্য। শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে হয়। অবশেষে হল। তুমি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এত বছর ধরে তুমি কী কষ্ট পেয়েছ, সেটা আমি জানি। এটা পাওয়ার জন্য তুমি কী ভীষণ অপেক্ষা করছিলে জানি। এগিয়ে চলো আর্জেন্টিনা।”
আরও পড়ুন - কেউ কাঁদছেন রাস্তায় বসে, কেউ ল্যাম্পপোস্টের ওপরে, মেসিদের আগমনে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস আর্জেন্টিনায়
মেসির খেলা দেখলেই কেমন যেন রূপকথা মনে হয়। তাঁর মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে যায়, মাঝ মাঠের অনবদ্য ট্যাকেল, প্রতিপক্ষকে কাট করে ভিতরে ঢোকা অথবা ভারী চেহারার ডিফেন্ডারকে চোখের নিমেষে ভেলকি দেখানো এসবকিছু তো রূপকথার থেকে কম কিছু নয়। তবে মেসির প্রেম জীবনের কাহিনীও কম রূপকথা নয়।
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে আলাপ আন্তোনেল্লার সঙ্গে। তারপর থেকে প্রেম, বন্ধুত্ব, সম্পর্ক জীবনের যা কিছু ওঠা পড়া সিবি খুব সরলরেখায় চলেছে তাঁর। এ অবদান অবশ্য দুইপক্ষেরই। এরপর ছোটবেলার বান্ধবী থেকে প্রেমিকা অবশেষে স্ত্রী। ২০০৮ সালে প্রথম সামনে আসে প্রেমের ঘটনা। ২০১৭ সালে বিয়ে। অবশ্য এর মধ্যেই মেসির দুই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন আন্তোনেল্লার। এরপর আরও এক সন্তানের জন্ম হয়। তিন সন্তানের নাম থিয়াগো, সিরো ও মাতেও।
ফ্যামিলি ম্যান মেসিকে অবশ্য ইতিমধ্যেই চেনে বিশ্ব, তবে ফাইনালের রাতে সেই ছবিতেই আবার সামনে আনেন তিনি। খেলা শেষে যখন অজস্র উন্মাদনা ঘিরে রয়েছে ম্যাজিক ম্যান মেসিকে তখন মেসির চোখ পড়ে রয়েছে গ্যালারিতে বসে থাকা সবথেকে কাছের মানুষগুলোর দিকেই। হাত নেড়ে ডেকে নেন মাঠে স্ত্রী, সন্তান এবং মাকে। তারপর অপূর্ব এক মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছে গোটা বিশ্ব। অ্যাডিডাসের তৈরি মেসির বিশেষ বুটে রয়েছে তাঁর তিন সন্তানের নাম এবং তাঁর স্ত্রীর নাম। ডান বুটে রয়েছে থিয়োগো ও মাতেওর নাম-জন্মতারিখ এবং বাঁ বুটে রয়েছে মেসির কনিষ্ঠ পুত্র সিরোর নাম-জন্মতারিখ এবং স্ত্রীর ডাকনাম ‘আন্তো’। এর থেকেই বোঝা যায়, নিজের পরিবারকে কতটা বেশি ভালোবাসেন মেসি।
আরও পড়ুন - বিশ্বকাপ নেওয়ার আগে মেসির গায়ে কালো জোব্বা কেন? জেনে নিন আসল রহস্য
এহেন মেসির স্ত্রীও সব সময় থেকেছেন চর্চায় তা কেবল মেসির বদান্যতায় নয়। এর সঙ্গে রয়েছে তাঁর নিজের জীবনও। লিওনেল মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো সম্প্রতি নিজের বুটিক খোলেন ইউরোপে। এটি মূলত আধুনিক এবং বাহারি সারকানি ব্র্যান্ডের জুতোর শোরুম। শুধু তাই নয়, অ্যাভেনিডা ডায়াগোনালে অবস্থিত এটিই ইউরোপে এই সংস্থার প্রথম শোরুম। সারকানি ব্র্যান্ডটি লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এবং মূল্যবান জুতা সংস্থাগুলির মধ্যে একটি।
কাতার বিশ্বকাপে যতবার মাঠে নেমেছেন মেসি ঠিক ততবারই তিন সন্তানকে নিয়ে গ্যালারিতে থেকে শুভ কামনা করে গিয়েছেন অনবরত তাঁর স্ত্রী আন্তোনেল্লা। বাকি সবার মতো তিনিও একটা অন্য মেসিকে দেখেছেন বিশ্বকাপের ময়দানে। একথা নিজেই সোশ্যাল মিডিয়া লিখেছেন আন্তোনেল্লা। খুব চেনা মেসিকে নিয়ত নতুন করে আবিষ্কার করেছেন তিনি। তাঁর যে লড়াই এতদিন একটু একটু করে সঞ্চয় হতে দেখেছেন তার বাস্তবায়নের সাক্ষী না থাকলে হয়তো মেসির জয়টাও বৃথা হয়ে যেত। তাছাড়া সুখী এবং নিশ্চিন্ত দাম্পত্য জীবনও যে মেসিকে তাঁর সফরে প্রতিনিয়ত আশ্রয় দিয়ে গিয়েছে এ কথাও বলাই বাহুল্য।
অবশ্য আন্তোনেল্লা ব্যতিক্রম। মেসির স্ত্রী, তিন সন্তানের মা, এটুকুই কেবল তাঁর পরিচয় নয়। নিজেকে এই বেড়াজালে আটকে রেখেও কীভাবে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা যায় তার সাক্ষাৎ উদাহরণ তিনিই। তাই হয়তো এমন একজন বিশ্বজোড়া তারকার সঙ্গিনী হয়ে তাঁর পাশে থেকেও নিজের পরিচয় তৈরি করতে কোনরকম অসুবিধাই হয়নি তাঁর। সাংসারিক পরিচয় থেকে বেরিয়ে গিয়ে নয় বরং তাকে সযত্নে লালন করেই দুনিয়ার সামনে নিজের শিল্পকে মেলে ধরেছেন আন্তোনেল্লা। মডেল হিসেবে স্বীকৃতিও আদায় করেছেন ইতিমধ্যেই। তবে তাতেই থেমে থাকেননি। পাশাপাশি সম্প্রতি যে জুতোর বুটিক তিনি খুলেছেন সেখানেও স্বমহিমায় রাশ ধরেছেন। সফল নারী হওয়া কি তবে একেই বলে?