গা ছমছমে কবরখানায় বসে মৃতের সঙ্গে চা পান, রেস্তোরাঁ এমনও হয়! জানলে শিউরে উঠবেনই

Lucky Restaurant : মোট ২৬ টি কবর রয়েছে এখানে, তাও একেবারে অতিথিদের টেবিলের পাশেই

ধরুন একটা রেস্তোঁরার টেবিলে মুখোমুখি বসে রয়েছেন, উল্টোদিকের রয়েছেন সঙ্গীরা। সবেমাত্র বেয়ারাটি এসে রেখে গিয়েছে কফির কাপ। ধোঁয়া উঠছে তাতে। আপনিও তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হঠাৎ এক্কেবারে পাশেই হাজির স্বয়ং ভূত বাবাজি। তিনিও যোগ দেবেন সান্ধ্য আড্ডায়। বিরক্ত করবেন না নিশ্চিত, তবে থাকবেন সঙ্গেই। এবার ভাবুন, কয়েক চুমুক কফির সঙ্গে ভূতের সঙ্গ! কি? ভয়, অবাক লাগছে দুই-ই লাগছে তাই তো? কিন্তু অবাক লাগলেও এ ঘটনা সত্যি। আর এই ভূতটিও সিনেমার ভূত নয়, এক্কেবারে আসলি ভূত!

খোদ ভারতেই রয়েছে এমন ভৌতিক এক রেস্তোঁরা। নাম ‘লাকি’। আমেদাবাদের এই রেস্তোরাঁর অন্দরে পা রাখলেই মিলবে গা ছমছমে অভিজ্ঞতা। একটা-আধটা নয়, মোট ২৬ টি কবর রয়েছে এখানে। তাও একেবারে অতিথিদের টেবিলের পাশেই।

সময়টা আজকের নয়। স্বাধীনতার পর পরই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বেশ কিছু বেদখল প্লট উন্নয়নের জন্য শহরের সাথে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরকম সময় এই প্রাচীন কবরস্থানটির খোঁজ মেলে। এবং কেনার লোকও জুটে যায়। কেএইচ মোহাম্মদ এবং কৃষ্ণান কুট্টি নায়ার নামের দুই ব্যক্তি কিনে নেন আজকের লাকি রেস্তোঁরা সংলগ্ন কবরস্থানটি।

ব্যবসায়ী বুদ্ধি বেশ ভালোই ছিল দুজনের। জায়গাটি ছমছমে হলেও, শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থলে। তাই এখানে মানুষের যাতায়াতও বেশ বেশি। এটাকেই ব্যবহার করলেন তাঁরা। কবরস্থানের বাইরেই ফেঁদে ফেললেন একখানা ছোটোখাটো দোকান। একটা ছোট চায়ের স্টল। চা, কিছু বিস্কুট, কেক এসব নিয়েই পথ চলা শুরু হল দোকানটির। সেসময়ে এ দোকানে পাওয়া যেত এক ধরনের ক্রিম রোল, যার স্থানীয় নাম ছিল ‘মাস্কা বান’। স্বাদেও ছিল খাসা। লোকের মুখে মুখে ফিরতে লাগল এই মাস্কা বানের কথা। খুব কম দিনের মধ্যেই দোকানের মশলা চায়ের স্বাদও ছড়িয়ে পড়ল দিকে দিকে। ব্যবসাও ফুলে ফেঁপে উঠল।

আরও পড়ুন : গোরস্থানে অজানা এক ‘মা’-এর কবর ঘিরে আজও দানা বেঁধে রয়েছে রহস্য

মশলা চায়ে আবার কোকো পাউডার! এটাই ছিল এ দোকানের আসল টুইস্ট! কেবল সাধারণ মানুষ নয় এ দোকানের মশলা চা আর মাস্কা বানের স্বাদে মজেছিল তারকারাও। শোনা যায়, প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী এম.এফ.হুসেন প্রায়ই আসতেন এ দোকানে। তারপর চা সহযোগে মাস্কা বান খেতে খেতে হারিয়ে যেতেন শিল্পের জগতে। সে নজির আজও রয়েছে রেস্তোরাঁর দেওয়ালে। এখনও লাকি রেস্তোরাঁয় গেলে দেখতে পাওয়া যাবে তাঁর অসাধারণ পেইন্টিংটি।

এরপর পথ আরও খানিকটা প্রশস্ত করার ভাবনা আসে তাদের মাথায়। ঠিক করেন রেস্তোঁরা খুলবেন।যদিও মালিক কৃষ্ণান কুট্টি সিদ্ধান্ত নেন কবর সরানো যাবে না। সেগুলিকে যথাস্থানে রেখেই যা করার করতে হবে। তিনি হয়তো ভবিষ্যত দেখতে পেয়েছিলেন। বুঝতে পেরেছিলেন এই কবরের সঙ্গে খানাপিনার রহস্যই আসল ব্যবসা এনে দেবে। হলও তাই। কবরগুলিকে সুসজ্জিত রেলিং দিয়ে ঘিরে তার পাশেই সাজানো হল অতিথিদের টেবিল চেয়ার। অর্থাৎ ভূত-বর্তমান একেবারে পাশাপাশি।

প্রথমদিকে এ নিয়ে মানুষের মধ্যে বেশ কিছু দোলাচল কাজ করলেও যখন এ কথা প্রকাশ্যে এল যে, উনিশ শতকের কিছু সাধু সন্ন্যাসীর কবরই রয়েছে এখানে তখন নিমেষেই কেটে যায় রেস্তোঁরার বন্ধা দশা। ভিড় বাড়তে থাকে অতিথিদের। আমেদাবাদের এই "লাকি রেস্তোরাঁ"টিই বিশ্বের প্রথম ক্যাফে যেটি রয়েছে কবরস্থানের মধ্যেই।

এখনও নিয়মিত সকালে পরিষ্কার করা হয় কবরগুলি। টাটকা ফুল দিয়ে সাজানো হয় চারদিক। আর তাতেই বোধ হয় তুষ্ট থাকেন ভূতেরা। কোনও বিরক্ত করে না অতিথিদের। ওরা থাকে আপন খেয়ালে। হয়তো কবরে বসেই আড্ডার স্বাদ নেয়। তাই ভূতুড়ে জায়গা বলেও মনে হয় না রেস্তোরাঁটিকে। অথচ অতীত তো সকলেই জানে। তাই নস্টালজিয়া থেকেই যায়। ভূতেদের সঙ্গে খানিক আড্ডা দেওয়ার অছিলায় পা বাড়ান অনেকেই। সঙ্গে বাড়তি পাওনা সুস্বাদু স্বাদের খাবার তো আছেই। আর চটজলদি পরিবেশনেও এদের জুড়ি মেলা ভার!

More Articles