ব্রেস্ট ক্যান্সারের আক্রান্ত মহিমা চৌধুরী, কোন ছোট্ট ভুলে আপনিও ঝুঁকির মুখে, আজই জানুন

গ্লামার ওয়ার্ল্ডে এই বেস্ট ক্যান্সার নতুন কোন ঘটনা নয়, ২০১৮ সালে আয়ুষ্মানের পত্নী তাহিরা কাশ্যপও এই মরণ রোগের শিকার হয়েছিলেন।

ভারতীয় সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় মুখ, মহিমা চৌধুরি তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ের কথা জানিয়েছেন মিডিয়াকে। ১৯৯০ সালের মিস ইন্ডিয়া আসলে বিগত কয়েকদিন ধরে ভুগছিলেন এক ভীষণ মরণ রোগে আর সেই রোগটির নাম হল ব্রেস্ট ক্যান্সার। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, খুব সাধারণ একটি বার্ষিক হেলথ চেকআপেই গেছিলেন তিনি এবং পরে সেখান থেকেই ধরা পড়ে এই রোগের কথা। তবে গ্লামার ওয়ার্ল্ডে এই বেস্ট ক্যান্সার নতুন কোন ঘটনা নয়, ২০১৮ সালে আয়ুষ্মানের পত্নী তাহিরা কাশ্যপও এই মরণ রোগের শিকার হয়েছিলেন।

WHO এর ২০১৮ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা গেছে প্রতি ৬ জন মানুষের মৃত্যুর মধ্যে একজন মানুষের মৃত্যু ঘটে ক্যান্সা্রে আক্রান্ত হয়ে। প্রতি বছর প্রায় ৯.৬ মিলিয়ন মানুষের এই মারণ বানের তীব্র আঘাতে মৃত্যু হচ্ছে। ভারতে যেসমস্ত ক্যান্সারগুলি বেশি পরিমাণে দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম হল ব্রেস্ট ক্যান্সার, শতকরা ২৭ শতাংশ মানুষ এই ক্যান্সারে আক্রান্ত। মানুষ যতই আধুনিকতার মোড়কে নিজেকে মুড়ে নতুন করে নির্মাণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে, ততই হুহু করে বেড়ে চলেছে এই ব্রেস্ট ক্যান্সার।

তবে কি ব্রেস্ট ক্যান্সারের কড়াল কোপের থেকে কোনভাবেই রেহাই পাওয়ার উপায় নেই? অবশ্যই রয়েছ। আপনি যদি প্রথম থেকেই কিছু জিনিস প্রথম থেকেই মেনে চলেন বা নিজের জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনতে সক্ষন হন, তাহলে অনেকক্ষেত্রেই এই জাতীয় ক্যান্সারের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তাহলে দেখে নেওয়া যাক, কী কী উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে আপনি নিস্তার পেতে পারেন –


১। মদ্যপানে সীমাবদ্ধতা – আপনি যত বেশি মদ্যপান করেন, ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রবণতা আপনার শরীরে ততই অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেতে থাকবে। তবুও নিতান্তই যদি এই মায়া কাটিয়ে না উঠতে পারেন তবে দিনে একটির বেশি পানীয় একেবারেই নেবেন না।

২। ওজনে বাড়বাড়ন্ত নয় – আপনি যদি স্বাস্থ্যকর ওজনের অধিকারী হয়ে থাকেন, তবে তা ধরে রাখার চেষ্টা করুন। ওজন ধরে রাখতে নিয়মিত ব্যয়াম কিম্বা হাঁটতে যেতে পারেন। আপনার ওজন যদি বেশি হয় তবে, আর দেরি না করে এখনই কোন অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন।

৩। শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা – শুধু যে খাবার মেপে খেলেই ব্রেস্ট ক্যান্সারের হাত থেকে আপনি রেহাই পেয়ে যাবেন, তা নয়। আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত নির্দিষ্ট সময় করে শরীরচর্চা করতেই হবে। নিয়ন্ত্রিত খাবারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শরীরচর্চা করলেই দ্রুত কমবে ওজন।

৪। শিশুকে যথাসম্ভব স্তন্যদুগ্ধ পান করানো – বর্তমানে ইঁদুর দৌঁড়ের খেলায় মেতে অনেকাংশেই নতুন মায়েরা প্যাকেট ফুডের উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। কিন্তু আপনারা জানলে অনাক হবেন, ব্রেস্ট ক্যান্সারের একটি উত্তম ঔষধী হল শিশুকে স্তন্যদুগ্ধ পান করানো। বিজ্ঞান বলছে, আপনি যত বেশি বছর আপনার শিশুকে নিজের স্তন্যদুগ্ধ পান করাবেন, এই ক্যান্সার আপনার থেকে ততই দূরে সরে যাবে। এছাড়াও দেখা গেছে, যারা ৩০
বছরের পর প্রথম মা হয়েছেন, তাঁদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিটা খানিকটা বেশি। আবার এই তথ্যও সামনে এসেছে, যেসমস্ত মহিলারা একাধিক সন্তানসন্ততির জন্ম দিয়েছেন, তাঁদের ক্যান্সারের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশটাই কম।

৫। জন্ম নিয়ন্ত্রক ওষুধ ব্যবহারে সচেতনতা – সম্প্রতি দেখা গিয়েছে যে, যেসমস্ত মহিলারা একবছর একটানা জন্ম নিয়ন্ত্রক ওষুধের ব্যবহার করেছেন, তাঁরা অনেকাংশেই বেশি ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও দেখা গেছে, যারা প্রতি তিনমাস অন্তর জন্ম নিয়ন্ত্রক শট নিয়ে থাকেন, তাদের এই জাতীয় ক্যান্সারের ঝুঁকি অন্যান্যদের তুলনায় খানিকটা বেশি।

৬। মেনোপজাল হরমোন থেরাপি সীমিত করা – মেনোপজ হরমোন থেরাপিতে সাধারণত ইস্ট্রোজেন হরমোনের সঙ্গে প্রোজেস্টেরন হরমোন মিলিয়ে, বহু বছর ধরে মেনোপজের লক্ষণগুলি উপশমের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে অস্ট্রিওপরোসিস রোগ প্রতিরোধে এই থেরাপি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, এইধরনের কম্বিনেশন হরমোনাল থেরাপিগুলিতেও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। কম্বিনেশন হরমোনালের পরিবর্তে আপনি ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে বিকল্প কোন ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।

সুস্থ জীবনযাপন করার পাশাপাশি আপনি যদি খাবারের দিকটাও খানিকটা বাদ বিচার করে চলতে পারেন, সেক্ষেত্রে ফল মিলবে আরও ভালো। আবার কিছু কিছু খাবারও রয়েছে যা আপনার জীবন থেকে খানিকটা হলেও ব্রেস্ট ক্যান্সারকে দূরে সরিয়ে রাখতে সহায়তা করবে। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক, সেইসব খাব্রের কথাও –

সবুজ শাকসবজি

বর্তমানে আট থেকে আশি, সবাই একটু মাছ-মাংসের দিকেই বেশি আসক্ত। কিন্তু মাছ-মাংসের পাশাপাশি অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে পালং শাক কিম্বা সরষের শাকের মত পাতাযুক্ত সবুজ শাক সবজিগুলোকেও, কারণ এই পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজিতে রয়েছে ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টিআক্সিডেন্ট, যা ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে
সক্ষম।

সাইট্রাস জাতীয় ফল

কমলালেবু, আঙুর কিম্বা লেবু জাতীয় ফলগুলির মধ্যে ভরপুর মাত্রায় ভিটামিন-সি, ফোলেট এবং ক্যারোটিনয়েড পাওয়া যায়। এই উপাদানগুলি ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

অধিক চর্বিযুক্ত মাছ

স্যামন, সার্ডিন কিম্বা ম্যাকেরেল জাতীয় চর্বিযুক্ত মাছগুলির মধ্যে অমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, সেলেনিয়াম এবং ক্যান্থাক্সান্থিনের মত উপাদানগুলি থাকে যা ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগের প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার যেসব মানুষ খেয়ে থাকেন তাদের মধ্যে ১৪ শতাংশ মানুষের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে গেছে।

এছাড়াও বেরী জাতীয় খাবার, আপেল, ন্যাসপাতি, দই, পীচ, পেঁয়াজ, মটরশুঁটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি কিম্বা ব্রোকলির মত খাবারগুলি ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে অনেকখানি অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে থাকে।

ব্রেস্ট ক্যান্সাররের চিকিৎসা কীভাবে হয়ে থাকে?

প্রথমেই বলে রাখা ভালো, ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষেরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ্রূপে সুস্থ হয়ে উঠতে সক্ষম হয়ে থাকেন। ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বনে করা হয়ে থাকে। চিকিৎসাকরা মূলত রোগীর অবস্থা বুঝে রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থা করে থাকেন। এই চিকিৎসা বিশেষত চারভাবে হয়ে থাকে –

সার্জারি – এই পদ্ধতিতে চিকিৎসকেরা অপারেশনের মাধ্যমে রোগীর শরীর থেকে ক্যান্সারের কোষগুলিকে বাদ দিয়ে দেন।

কেমোথেরাপি – ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং কার্যকরী পদ্ধতি হল এই কেমোথেরাপি। ক্যান্সারের কোষ সঙ্কুচিত করা বা বিনাশ করার উদ্দেশ্যে কখনো স্যালাইনের মাধ্যমে আবার কখনো ওষুধের মধ্যে দিয়ে এই কেমোথেরাপি করা হয়ে থাকে।

হরমোনাল থেরাপি – ক্যান্সারের কোষগুলিকে বেড়ে ওঠার জন্য যে হরমোনগুলি প্রয়োজন তা থেকে বাঁধা প্রদান করে এই থেরাপি।

রেডিয়েশন থেরাপি – এক্স-রে’এর মত কিছু উচ্চশক্তিযুক্ত রশ্মির সাহায্যে ক্যান্সারের কোষগুলিকে মেরে প্রতিহত করা হয়ে থাকে।

শেষে একটাই কথা বলার, ছোটবেলা থেকেই শুনে আসি আমরা ক্যান্সার হল এমন একটি রোগ যার নাকি কোন অ্যান্সার নেই। আজ কিন্তু এই প্রবাদ ভুলে পরিণত হয়েছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা আর সদিচ্ছা দিয়ে ব্রেস্ট ক্যান্সারকে হারানো সম্ভব। শুধু যে কোনো পরিস্থিতিতেই মনের জোর হারালে চলবে না।

More Articles