ভারতে প্রতি বছর অপুষ্টিতেই মারা যাচ্ছে লাখো মানুষ! শিউরে উঠতে হবে যে তথ্যে...
Malnutrition In India: ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি ছুঁইছুঁই। দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছরও ঘটা করে পালিত হচ্ছে। অথচ পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব ঘোচেনি মোট জনসংখ্যার ৭১ শতাংশ নাগরিকের ক্ষেত্রে।
খিদে আর অপুষ্টি দুই-ই 'অভিশাপে'র মতো। দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে সর্বাগ্রে প্রয়োজন জীবন থেকে এই দুই অভিশাপকে বিদায় করা। দেশ স্বাধীনের আগেও যেমন অনাহারে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তেন বহু মানুষ, দেশ স্বাধীনের পরেও কেন অপুষ্টির অভিশাপকে বিদায় দেওয়া সম্ভব হল না সেটিই গুরুতর চিন্তার বিষয়। অপুষ্টিজনিত অসুখে এই দেশে মৃত্যুর হার উত্তরোত্তর বাড়ছে। বর্তমানে ভারতে এই সম্পর্কিত পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ এবং ‘ডাউন টু আর্থ’ পত্রিকা। প্রতিবেদনে উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে যে, ভারতের বহু মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বাস্থ্যকর খাবার খেতেই পান না।
ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি ছুঁইছুঁই। দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছরও ঘটা করে পালিত হচ্ছে। অথচ পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব ঘোচেনি মোট জনসংখ্যার ৭১ শতাংশ নাগরিকের ক্ষেত্রে। এর জেরে অসুখে পড়ে মৃত্যু হচ্ছে বাৰ্ষিক ১০ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষের। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে উঁচু গলায় বললে বলতে হয়, “এ মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না।” প্রদীপের নিচের এই অন্ধকার কবে অন্তর্হিত হবে, হয়তো তা কেবল জানেন ভারতের ভাগ্যবিধাতাই! রাজনৈতিক দলগুলি পরস্পরের প্রতি যুযুধান। অন্যদিকে, ভারতজুড়ে বিপুল সংখ্যক নাগরিক পুষ্টিকর খাবারই পাচ্ছেন না। জগৎসভায় ভারতের আসন টলোমলো নয় কি? কেন এই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যক্তির আয়ের তুলনায় খাদ্যদ্রব্যের দাম ৬৩ শতাংশ বাড়ে, সেক্ষেত্রে পাতে পুষ্টিকর খাবার রাখাটা আয়ব্যয়ের হিসেবে কুলোনো মুশকিল।
পরিস্থিতি জটিল বলে জানাচ্ছে ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টে’-এর প্রতিবেদন। তরুণ সম্প্রদায়ের খাদ্য তালিকায় জুটছে না পুষ্টিকর ফল অথবা শাকসবজি। ২০ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সের প্রাপ্তবয়স্ক কোটি কোটি ভারতীয় নাগরিক দৈনিক ৩৫.৮ গ্রাম ফল খেতে পান। আর এত সংখ্যক মানুষের পাতে সবজির পরিমাণ থাকে বড়জোর ১৬৮.৭ গ্রাম। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের সুস্থ থাকতে হলে দৈনিক ৩৫.৮ গ্রাম ফল খাওয়া উচিত। পাতে দৈনিক ১৬৮.৭ গ্রাম সবজিও খেতে হবে সুস্থ থাকতে হলে।
আরও পড়ুন- হাওয়াই চটি বনাম পল্টুরাম || দেশে বিজেপি বিরোধী মুখ হিসেবে বেশি এগিয়ে কে?
এদিকে উপায় নেই, তাই খাওয়া যাচ্ছে না পুষ্টিকর খাদ্য। ফল ভুগছে শরীর-মন। অসুখ-বিসুখ বাড়ছে অপুষ্টিজনিত কারণে। যার পরিণাম মৃত্যু। ‘ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন’ সমীক্ষা করে দেখেছে, ফল, শাকসবজি পরিমাণমাফিক না খেলেও চিনি মেশানো পানীয়, প্রক্রিয়াজাত মাংস, রেড মিট খাওয়ার ঝোঁক বেড়েছে। পুষ্টিকর খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিই এর কারণ বলে মনে করছে ‘ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অ্যাসোসিয়েশন’। তবে এটা স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতনতার কারণে ঘটছে কী না, তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
২০২১ সালে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল নিউট্রিশন রিপোর্ট’ অনুসারে, কেবলমাত্র ভারতই নয়, সারা পৃথিবীজুড়েই এই পরিস্থিতি। সারা পৃথিবীর মোট ৪২ শতাংশ মানুষ পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে অপারগ। এতে যে পৃথিবীতে মানুষের অসুখ-বিসুখ বাড়তে চলেছে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। অপুষ্টির ফলে ক্যান্সার, হৃদরোগ, শ্বাসপ্রশ্বাস কিংবা শ্বাসযন্ত্রের অসুখে এখনই আক্রান্ত অসংখ্য মানুষ। ‘কনজিউমার ফুড প্রাইস ইনডেক্স’ অনুসারে, গত বছর মুদ্রাস্ফীতির হার ৩২৭ গুণ বেড়েছে। পাশাপাশি কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স বেড়েছে ৮৪ শতাংশ।
প্রসিদ্ধ ‘ডাউন টু আর্থ’ পত্রিকার ম্যানেজিং এডিটর রিচার্ড মহাপাত্র জানিয়েছেন, তথ্য খতিয়ে জানা গিয়েছে ২০২২ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে গ্রামাঞ্চলে খাদ্যদ্রব্যের দাম শহরগুলির তুলনায় বেড়েছে। ফলে গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারা বিপাকে পড়েছেন। টান পড়েছে পুষ্টিতে। গবেষকরা জানিয়েছেন, খাদ্যশস্যের ফলনের খরচ বেড়েছে, এছাড়া আবহাওয়ার অস্বাভাবিক গতিবিধি খাদ্যের ফলনে কুপ্রভাব ফেলেছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারেও খাদ্যেপণ্যের দাম চড়চড় করে বাড়ছে।
ভারতে অপুষ্টিজনিত অস্বাস্থ্য আগামী দিনে আরও তীব্র আকার নেবে যদি পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। একথাও উল্লেখ করা হয়েছে ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ এবং ‘ডাউন টু আর্থ’-এর প্রতিবেদনে। অপুষ্টিজনিত রোগের শিকার হয়ে বহু মানুষের ওজনের হেরফের হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে ওজন হু-হু করে কমছে, আবার ওজন অনেকক্ষেত্রে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছেও।
আরও পড়ুন- দলের মুখ তবে রাহুলই? ২০২৪ এর আগে ভারত জোড়ো যাত্রার সূচনায় মরিয়া কংগ্রেস
সারা পৃথিবীর মধ্যে পুষ্টিকর খাদ্যাভাবে একনম্বরে ভারত। যে দেশের ৭১ শতাংশ মানুষ পুষ্টিকর খাদ্যই খেতে পান না তা দেশের ভবিষ্যতের পক্ষে অমঙ্গলের এ বলা বাহুল্য। শারীরিকভাবে দুর্বল হলে জীবনীশক্তিও কমবে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পেরিয়ে ভারতবাসীর জীবনে এই পরিস্থিতি একেবারেই কাঙ্খিত ছিল না।
পৃথিবীর নানা প্রান্তে যুদ্ধ পরিস্থিতি। রাশিয়া বনাম ইউক্রেনের যুদ্ধও থামার কোনও আশা নেই। বরং আসন্ন শীতে রাশিয়া বনাম ইউক্রেনের যুদ্ধ আরও ভয়াবহ আকার নেবে। এর জেরে খাদ্যদ্রব্যের দাম আরও চড়বে বলেই আশঙ্কা। যদিও চলতি বছর একাধিক কারণে ঐতিহাসিক বছর। এই বছরই ভারত ৭৫ বছরের স্বাধীনতার পতাকা মর্যাদা ও গর্বের সঙ্গে উড়িয়েছে। তবে কিছুক্ষেত্রে জাতীয় পতাকা ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। যেমন, হরিয়ানার মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যের সরকার বাধ্যতামূলকভাবে ২০ টাকা দিয়ে জাতীয় পতাকা কেনার নির্দেশ জারি করাতে জটিলতা দেখা দেয়। তবে এ সংক্রান্ত সরকারি কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। একদিকে উপার্জনে টান পড়ায় মানুষ স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পাচ্ছে না, বিপরীতে গাঁটের কড়ি খরচ করে কিনতে হয়েছে জাতীয় পতাকা। সত্যিই, দেশের আইনকানুন সর্বনেশেই!