বিশ্বকাপ নেওয়ার আগে মেসির গায়ে কালো জোব্বা কেন? জেনে নিন আসল রহস্য
Fifa worldcup 2022 final : আর্জেন্টিনার পয়া নীল-সাদা আইকনিক জার্সির ওপর কালো এবং সোনালি রঙের কাতারের জোব্বায় উপহার নেন মেসি
কাতার বিশ্বকাপের পরতে পরতে ছিল উত্তেজনা। একমাস ব্যাপী একটা জ্বরের শেষ হয়েছে গতকাল রাতেই। এবারের বিশ্বকাপ জুড়ে রাজ করেছে মেসি ম্যাজিক। অবশ্য তার সঙ্গে সমানতালে সঙ্গ দিয়েছে দুরন্ত একটা টিম। আর্জেন্টিনার দলে এবার একের পর এক রত্ন। ডি মারিয়া, আলভারেজ অথবা এমি মার্টিনেজ প্রত্যেকেই থেকেছেন স্বমহিমায়। একেবারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। মেসি অবশ্য প্রথম থেকেই জানতেন, এটাই শেষ সুযোগ। জীবনের না পাওয়া অধ্যায়ে মোড় বদলের যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, তার বাস্তবায়ন যেন হতেই হতো। দেশের পাহাড় প্রমাণ আকাঙ্খার ভার কাঁধে চাপিয়ে দক্ষ নাবিকের মতো কাতারের ময়দানে নোঙর ফেলেছিলেন মেসি। গোটা বিশ্বকাপে একটাই ম্যাচ হেরেছেন, ব্যাস আর কোনও ভুল করেননি। প্রতি ইঞ্চিতে মেপেছেন খেলাকে। তার ফল যে মিলতেই হতো।
বিশ্বকাপ ফাইনাল ২০২২। টানটান উত্তেজনার একটা রাত। প্রথম আশি মিনিট অবশ্য খেলা হয়েছে একপেশে। ফ্রান্স যেন ঝিমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু তারপর দেড় মিনিট এমবাপে ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় নীল সাদা শিবির। উল্টোদিকে খেলায় ফেরে ফ্রান্স। ব্যাস তারপর থেকেই আসল ফাইনালের মর্ম টের পায় দর্শক। হাড় কাঁপানো মুহূর্ত! হার্টের রুগী কেউ থাকলে অ্যাটাক অবশ্যম্ভাবী।
নব্বই মিনিট,তারপর তিরিশ মিনিটের একস্ট্রা টাইম, সেখানেও মীমাংসা হয়নি খেলার। মেসির দলকে সুদে আসলে হিসেব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ফ্রান্স তরুণ এমবাপে। একার কাঁধে টেনেছেন খেলা। অতঃপর পেনাল্টি শ্যুট। সেখানে আর কীই বা করতেন একা এমবাপে! দুরন্ত টিম গেমের কাছে হার মানতেই হতো তাঁকে। অন্যদিকে মেসির এ জয় যেন ছিল অনিবার্য। খুব শক্ত হাতে একটা দল গড়েছেন তিনি। যে দল শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে জয়ের পথে ফুল ছড়িয়ে গিয়েছে। খেলা শেষের উত্তেজনা কাটতে অবশ্য বেশ খানিকটা সময় গড়িয়ে যায়। এরই মাঝে ক্যামেরার সামনে ধরা দেন অন্য মেসি। দলের অধিনায়ক কিংবা টিম ম্যান নয়, একেবারে সাংসারিক মেসি। সেখানেও খুব গোছানো তিনি।
আরও পড়ুন - অলিম্পিকে সোনা থেকে বিশ্বকাপ, মেসি, দি মারিয়া যেন আর্জেন্টিনার ‘গুপি-বাঘা’
অতঃপর সেই কাঙ্খিত মুহূর্ত। বিশ্বজয়ের মুকুট হাতে তোলা সময় আসন্ন। অবশ্য ট্রফি হাতে পাওয়ার আগেই আরও একটা উপহার পেলেন তিনি। যা কার্যত অবাক করল। কেবল মাত্র আর্জেন্টিনার পয়া নীল-সাদা আইকনিক জার্সিই নয় তার ওপর কালো এবং সোনালি রঙের একটি জোব্বা পরে মঞ্চে উপহার নিচ্ছেন মেসি। কাতার দেশের রক্ষণশীলতা নিয়ে এর আগেই অনেক কথা উঠেছে বিভিন্ন মহলে। পোশাক বিতর্কও নতুন কিছু নয়। শেষে এসেও জিইয়ে রইল সেই আলোচনা। দেশের পোশাকে এদিন লিওনেল মেসিকে সাজিয়ে দিলেন কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি। মেসি বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে তুলে নেওয়ার ঠিক আগে তাঁকে পরিয়ে দেওয়া হয় এই পোশাক। ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোও আমিরের পাশে ছিলেন এইসময়।
৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান। মেসির হাত ধরেই স্বপনপূরণ হল আর্জেন্টাইনদের। ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বসসেরা মেসি বাহিনী। এদিন পুরস্কার বিতরণীর শুরু থেকেই উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। মেসি নিজে ট্রফিটি হতে নিয়েছিলেন ঠিকই তবে সময় নষ্ট না করেই নিজেকে মিশিয়ে দিয়েছেন দলের মধ্যে। ঠিক এরকম সময়েই তার পরনে ছিল কালো জোব্বাটি। কেবল কাতার বলে নয় প্রতিটি আরব দেশেই ব্যবহৃত হয় এরূপ পোশাক। আমাদের দেশে যেমন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে নির্দিষ্ট কোনও কোট অথবা উত্তরীয় দিয়ে বরণ করা হয় ঠিক তেমনই কালো জোব্বার চল কাতারে। এই পোশাকটিকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘বিস্ট’। এটি মূলত উটের লোম এবং ছাগলের পশম দিয়ে তৈরি হয় বলেই জানা গিয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে এই পোশাক পরানোর রীতি চলে আসছে কাতারে। যার সাক্ষী থাকলেন বাঁ পায়ের জাদুকর লিও মেসিও। দেশের সম্মানীয় অতিথিকে বরণ করার এই প্রথায় বাধ সাধার জো নেই।
তবে চিরাচরিত নীল সাদা জার্সিতেই বেশি স্বচ্ছন্দ মেসি। তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই কালো জোব্বাটি খুলে ফেলেন তিনি। নিজের দলের আরও সতীর্থদের সঙ্গে নিজের দেশের পোশাকেই ছবি তুলতে দেখা যায় তাঁকে। কিন্তু সেই যে মাহেন্দ্রক্ষণ, জ্বর জন্য এই এত এত প্রতীক্ষা, সেই মুহূর্তটায় কালো জোব্বার আড়াল কি ফিকে করে দেয় না আর্জেন্টিনার চিরকালীন ঐতিহ্যকে?