সুদূর ব্রিটেন থেকে উড়ে এল হুগলিতে, বিরল এই পরিযায়ী পাখির ছবি ঘিরে শোরগোল নেট দুনিয়ায়

Rare migratory bird in Hooghly : মূলত স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড সংলগ্ন এলাকার শিকারী পরিযায়ী পাখি হিসেবে পরিচিত এই শ্রেণীর পাখিরা। চলতি মাসের শুরুতে হগলি জেলায় দেখা গিয়েছে এদের।

ভারত যেহেতু গ্রীষ্ম প্রধান দেশ তাই ঘুরতে যাওয়ার সেরা সময় শীতকাল। কেবল মানুষ নয় পাখিদের ক্ষেত্রেও সত্যি এ কথা। তাই শীতের মরশুম আসার সঙ্গে সঙ্গেই দূর দূরান্ত থেকে পরিযায়ী পাখির দল ছুটে আসে এখানে। বর্তমানে ছবি প্রেমী বাঙালির মধ্যে ক্রমেই জনপ্রিয়তা বেড়েছে পাখির ছবির। অবসর সময়ে ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে বার্ডিং করতে বেরিয়ে পড়েন অনেকেই। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়েও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই দিকটি। পাখির ছবি, পাখি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং কখন কোথায় কোথায় গেলে বিভিন্ন অজানা পাখিদের ফ্রেম বন্দি করা যায় এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা চলে রাত দিন। এখানেই শেষ নয়, নতুন কোনও অজানা পাখির খোঁজ পেলেই পক্ষীপ্রেমীরা ছুটে যান গন্তব্যে। একটা দুর্দান্ত ফ্রেমের আশায় সকাল থেকে ক্যামেরা তাক করে বসে থাকেন।

সম্প্রতি এরকমই একটি নজরকাড়া ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন কলকাতার এক পক্ষীপ্রেমী। হুগলির নসিবপুর সংলগ্ন এলাকায় প্রতিবছরই এই সময় বেশ কিছু দেশ বিদেশের চেনা অচেনা পাখি আসে। তাদের মধ্যে অন্যতম হল পাইড হ্যারিয়ার। বছর দুয়েক হল শীতকালে এলেই এই শ্রেণীর পরিযায়ী পাখিটিকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। এবারও সেই কারণেই তিনি গিয়েছিলেন নসিবপুরে। উত্তর-পূর্ব কলকাতার দমদম এলাকার বাসিন্দা বোধিসত্ত্ব বোস, বয়স ত্রিশের আশপাশে। ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি নিয়ে চর্চা করতে ভালোবাসেন। কিন্তু পাইড হ্যারিয়ার ক্যামেরা বন্দি করার বদলে এদিন ক্যামেরায় ধরা পড়ল অন্য একটি পাখি। এদেশে একেবারেই বিরল যার সাক্ষাৎ। উত্তরবঙ্গে যদিও বা দেখা যায় কালে ভদ্রে, কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে বিরলতম বলা চলে।

আরও পড়ুন - ফিরতে পারে বিলুপ্ত ডোডো পাখি, রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে ডাইনোসর! জানেন কীভাবে সম্ভব?

পাখিটির নাম হেন হ্যারিয়ার। এরা মূলত স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড সংলগ্ন এলাকার শিকারী পরিযায়ী পাখি হিসেবে পরিচিত। চলতি মাসের শুরুতে হগলি জেলায় দেখা গিয়েছে এদের। ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ পাওয়া পর থেকে পক্ষী প্রেমীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।

কলকাতা থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার ভিতরে ভান্ডারদহ নামে পরিচিত একটি এলাকার জলাভূমির কাছে একটি মাঠে সকাল সাড়ে আটটা থেকে ক্যামেরা হাতে ঠায় অপেক্ষা করছিলেন বোধিসত্ত্ববাবু। সঙ্গে ছিলেন তাঁরই আরও এক বন্ধু। হঠাৎই একটা সময় দূরের ঝোপ থেকে বের হয় পাখিটি। সূর্যের সোনালী রশ্মির নীচে জ্বলজ্বল করে ওঠে পাখিটি। প্রাথমিকভাবে যদিও একে পাইড হ্যারিয়ার ভেবেই ভুল করেছিলেন তাঁরাও। পরে অবশ্য ছবিটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারেন এটি আসলে বিরলতম দর্শন, হেন হ্যারিয়ার। মাটি থেকে তিন ফুটের বেশি উচ্চতায় উড়তে পারে না এই প্রজাতির পাখিরা। যেহেতু এরা শিকারী পাখি তাই মাঠের কাছাকাছি ঝোপে ঝাড়ে শিকার খোঁজে।

আরও পড়ুন - একটা-দু’টো নয়, ২৯টি প্রজাতির পরিযায়ী পাখি হাজির কালনায়! সপ্তাহান্তে ঘুরে আসুন এখান থেকে

অন্যদিকে প্রবীণ পাখি পর্যবেক্ষণকারী শুভঙ্কর পাত্র, সোশ্যাল মিডিয়ায় বোধিসত্ত্ববাবুর এই ছবিটি সম্পর্কে বলেন, এই শ্রেণীর পরিযায়ী পাখিটি যুক্তরাজ্যের স্থানীয়। এটি উত্তরবঙ্গে খুব কম দেখা গিয়েছে এবং দক্ষিণবঙ্গে একবারেই বিরল। ওই একই দিনে হুগলির নসিবপুর ছাড়া আরও একটি জায়গায় ফ্রেমবন্দি হয় এই বিরল হেন হ্যারিয়র। হরিপালে। দুই ক্ষেত্রেই পাখিটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পাখি।

কর্নেল ইউনিভার্সিটির ই-বার্ড প্ল্যাটফর্ম হেন হ্যারিয়ারকে একটি মাঝারি আকারের হ্যারিয়ার হিসাবে বর্ণনা করে। এদের ভি-আকৃতির ডানা থাকে। সাধারণত খোলা মাঠ এবং জলাভূমির উপরে, নীচে লুকিয়ে থাকা ইঁদুরের সন্ধানে থাকে এই শিকারী পাখিটি। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পাখির ক্ষেত্রে কালো ডানার টিপস এবং ফ্যাকাশে পেট সহ সাদা মাঝারি ধূসর ডানা রয়েছে, মহিলা পাখির ক্ষেত্রে অপরিণত স্তন উষ্ণ বাদামী হয়। পিঠের দিকে সাদা প্যাচ থাকে।

More Articles