মোদির প্রথম চিন সফর! সফল হল উদ্দেশ্য?
PM Modi in China: মোদি 'বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ' (বিআরআই) নিয়ে ভারতের আপত্তির বিষয়টি জানান। এই প্রকল্প পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে যখন টানাপড়েন চলছে, তখন শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) সামিটে চিনের তিয়ানজিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে বৈঠক করলেন। মার্কিন শুল্কনীতির প্রেক্ষাপটে এই সফরকে ভারতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছিল।
এটিই মোদির প্রথম চিন সফর ছিল। এর আগের বেশ কয়েকটি এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে মোদি বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর-কে পাঠিয়েছিলেন। এই সফরের মধ্যে দিয়ে মোদি অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া বার্তা দিতে চেয়েছিলেন বলে মনে করেছিলেন অনেকেই। এই সফর কি ফলপ্রসূ হল?
৩১ অগাস্ট সফরের প্রথম দিনেই চিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন নরেন্দ্র মোদি। বৈঠকে মোদি বলেন, ভারত-চিনের সহযোগিতায় সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ হবে। তিনি মনে করিয়ে দেন, পৃথিবীর ২৮০ কোটি মানুষ এই দুটো দেশে থাকে। মোদি এও বলেন যে, চিন ও ভারত পরস্পরের প্রতিপক্ষ নয়, বরং 'সহযোগিতার অংশীদার'। মোদি জানিয়ে দিয়েছেন, সম্প্রতি ভারত ও চিনের মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবাও চালু হবে।
আরও পড়ুন- ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ! কীভাবে সংকট কাটাবে ভারত?
সম্মেলনে যৌথ ঘোষণাপত্রে এসসিও সদস্য দেশগুলি গত ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছিল। এই হামলার জন্য ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করলেও এসসিও সামিটে মোদি নির্দিষ্ট করে সন্ত্রাসবাদের সমর্থনকারী হিসেবে কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি।
মোদি 'বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ' (বিআরআই) নিয়ে ভারতের আপত্তির বিষয়টি জানান। এই প্রকল্প পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। ভারত এই জায়গাটিকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করে থাকে, তাই চিনের এই প্রকল্পকে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে মনে করা হয়। চিনের এই প্রকল্পকে ইঙ্গিত করে মোদি বলেন, "সংযোগ তখনই অর্থবহ, যখন তা সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করে। অন্যথায় সেটি কিন্তু আস্থা হারায়।"
তিনি এও জানান, ভারত চাইছে ইরানের চাবাহার বন্দর ও উত্তর-দক্ষিণ আন্তর্জাতিক করিডরের মাধ্যমে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হোক। কারণ, ভারত মধ্য এশিয়া এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য করার জন্য ইরানের চাবাহার বন্দরে প্রবেশদ্বার বানিয়েছে। এটি তৈরি করতে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছে কেন্দ্র।
আরও পড়ুন- ‘একতরফা ব্যবসা করছিল ভারত, এখন দেরি হয়ে গিয়েছে’! ট্রাম্প মোদির দূরত্ব কমবে?
উল্লেখ্য, ভারত ইজরায়েলের বৃহত্তম অস্ত্র ক্রেতা। ২০২৪ সালে গাজা যুদ্ধের সময়, ভারতের অস্ত্র সংস্থাগুলি ইজরায়েলের কাছে রকেট এবং বিস্ফোরক বিক্রি করেছিল। ইরান ইজরায়েল হামলার সময় যখন এসসিও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল, তখন নয়াদিল্লি বলেছিল তারা এই বিবৃতি নিয়ে কোনো রকম আলোচনায় অংশই নেয়নি।
আবার কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ ‘এক্স’-এ লিখেছেন, বহু বছর ধরেই সন্ত্রাসবাদ নিয়ে চিনের দ্বিমুখী নীতি ও দ্বিচারিতার অভিযোগ করে আসছে ভারত। অথচ এখন, এসসিও সম্মেলনে চিনের প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রী মোদি বললেন, ভারত ও চিন দুই দেশই সন্ত্রাসবাদের শিকার। শুধু তাই নয়, কংগ্রেস দাবি করেছে এই সফরে মোদির ভূমিকা ‘দেশবিরোধী’। জয়রাম লিখেছেন, ‘অপারেশন সিঁদুরের’ সময় পাকিস্তানের সঙ্গে চিন হাত মিলিয়েছিল, এই নিয়ে ভারতীয় সেনা কর্তারাও সরব হয়েছিলেন। কিন্তু মোদি এই বিষয়গুলি আলোচনাতেই আনেননি। তাঁর দাবি, এটা দেশদ্রোহিতা।
জয়রামের আরও দাবি, ২০২০ সালের ১৯ জুন (গালওয়ান সংঘর্ষ) চিনকে ক্লিন চিট দিয়ে দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন মোদি। এই দিনটিও (২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট) কলঙ্ক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
Whatsapp
