বেশি অথবা কম ঘুম দুইই কাল হতে পারে শরীরের! জানেন সুস্থ থাকতে কোন বয়সে কতটা ঘুম জরুরি?
Sleep : কিছুতেই ঘুম আসে না? কিংবা যখন ঘুমাচ্ছেন অনেক বেশি সময় পরও ক্লান্তি কাটছে না? দুইই হতে পারে বিপদের কারণ। জেনে নিন কোন বয়সে কতটা ঘুম জরুরি।
ঘুম, যে কোনো রোগ নিরাময়ের মহৌষধি। প্রতিদিন নির্দিষ্ট এবং পরিমিত ঘুমের দিকে জোর দেন কম বেশি প্রায় সব চিকিৎসকই। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করা থেকে শুরু করে শরীরের সমস্ত কোষগুলিকে বিশ্রাম দেওয়া, সুস্থতার লক্ষ্যে ঘুমের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তবে আজকের প্রজন্মের সিংহভাগের মধ্যেই একটি বিশেষ সমস্যা লক্ষ্য করা যায়, তা হল ইনসমনিয়া অর্থাৎ সঠিক ঘুমের অভাব। এর জন্য অনেকটাই দায়ী আজকের আধুনিক জীবনযাপনের ধরন। একদিকে খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম অন্যদিকে প্রযুক্তির চাপে পাল্লা দিতে দিনের একটা লম্বা সময় ইলেকট্রনিক্স দ্রব্য যেমন মোবাইল অথবা ল্যাপটপের দিকে ঠায় তাকিয়ে থাকা, আঘাত হানছে রাতের ঘুমের ওপরই। যার জেরে ঘুমোতে গিয়েও ঘুম আসছে না অনেকেরই। এবং ভিতরে ভিতরে ছড়াচ্ছে অগুন্তি সব রোগ।
অনেকের ক্ষেত্রে আবার এর ঠিক উল্টোটাও দেখা যায়। অর্থাৎ ঘুমের আধিক্য। যখন তখন ঘুমিয়ে পড়ছেন হয়তো কেউ কেউ। সেটাও কি সুস্থতার লক্ষণ? সুস্থতার জন্য কম বা বেশি ঘুম দুইই সমান সমস্যা তৈরি করতে পারে। সদ্যোজাত শিশু থেকে শুরু করে অন্তত বছর তিনেক পর্যন্ত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ঘুমের পরিমাণ সাধারণত বেশি হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে ঘুম। অন্যদিকে, গড়ে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম যে কোনো প্রাপ্ত বয়সের মানুষের জন্যই প্রযোজ্য। জানেন কি কোন বয়সে ঠিক কতটা পরিমাণ ঘুম সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয়? দেখে নিন তালিকা...
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন বলছে, বয়স অনুযায়ী মানুষের ঘুমের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষকে একটি বিশেষ অভিযোগ করতে দেখা যে যে, যথেষ্ট ঘুম হচ্ছে না, কিন্তু সেই যথেষ্ট বলতে কতটা? বয়স অনুযায়ী বদলে যায় সেই পরিমাণও।
আরও পড়ুন - কথায় কথায় ভুলে যাচ্ছেন সবকিছু! ডিমনেশিয়া নয় তো! ঝুঁকি কমাতে বদল করবেন যেসব অভ্যাস
৪ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে কমপক্ষে মোটামুটি ১০ ঘণ্টা এবং সর্বোচ্চ আঠারো ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। শিশুর বয়স যখন এক বছর থেকে দুই বছরের মধ্যে থাকে, তখন ঘুমের পরিমাণ এগারো থেকে চোদ্দ ঘণ্টার মধ্যে হওয়া আবশ্যক। প্রাক স্কুল পর্ব অর্থাৎ ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এরপর যথাক্রমে ৬ থেকে ১৩ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে নয় থেকে দশ ঘণ্টা ঘুম এবং চোদ্দ থেকে সতেরো বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা স্থায়ী ঘুম প্রয়োজন বলেই দাবি এনএসএফের।
প্রাপ্তবয়স্ক তরুণ অর্থাৎ ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে সারাদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ ২৬ থেকে ৬৪ বছর পর্যন্ত মানুষের ক্ষেত্রেও এই একই সময়সীমা যথেষ্ট বলে দাবি করা হয়। যদিও ঘুমের কম বেশি এ ঘটনা নতুন কিছু নয়, নানা কারণেই হতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে এই ঘটনা যেন নিয়মিত না হয় এবং ঘুমের পরিমাণ যেন কিছুতেই ৫ ঘণ্টার কম বা ৯ ঘণ্টার বেশি না হয়।
অনিয়মিত জীবন যাপন এই স্বাভাবিক ঘুম চক্রে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য দায়ী হতে পারে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন যে, সারাদিন এই উপরিউক্ত পরিমাণ ঘুম যেমন প্রয়োজনীয় তেমনই আবশ্যক অন্তত কিছু সময় গভীর ঘুমের। তাহলেই সুস্থ থাকে শরীর। সারাদিনে অন্তত দেড় থেকে দুই ঘণ্টা গভীর ঘুম যেকোনো প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের সুস্থতার জন্য জরুরী। ঘুমের নির্ধারিত সময় মেনে চলা, নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, রাতের দিকে অম্ল জাতীয় কিছু না খাওয়া, শোয়ার ঘরের আদর্শ তাপমাত্রা, শব্দ এবং আলো, আরামদায়ক বিছানা ও বালিশ, অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় সেবন না করা এবং সর্বোপরি ঘুমোনোর আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস দূরে রাখা, এইগুলি খেয়াল রাখলে সঠিক ঘুম পেতে পারেন আপনিও।