বিপদ ঘাপটি মেরে আছে মুখেই? মাড়ির জন্য চিরজীবনের মতো অথর্ব হতে পারেন আপনিও!

Rheumatoid Arthritis: রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস নেই এমন রোগীদের তুলনায় যাদের রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস আছে তাঁদের মাড়ির রোগ হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ

প্রায় এক শতাব্দী আগে, মানুষ বিশ্বাস করত যে মাড়ির সংক্রমণই অ্যাপেনডিসাইটিস এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (RA) সহ অনেক প্রদাহজনিত রোগের উত্স। তথাকথিত ওরাল সেপসিসের চিকিৎসাই ছিল সব দাঁত পটাপট তুলে ফেলা। এই সব দাঁত তুলে রোগের উপসর্গ সব কমত না তো বটেই, রোগীরাও ভয়ানক কষ্ট আর দুঃখ পেতেন। ১৯৩০-এর দশকে, ওরাল সেপসিস তত্ত্বটিই খারিজ হয়ে যায়। গত কয়েক বছরে, ডিএনএ সিকোয়েন্সিং কৌশলের সাহায্যে প্রচুর গবেষণায় দেখা গেছে যে মাড়ির রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুগুলিই RA এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ। মাড়ির রোগটি সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস এবং লুপাস সহ আর্থ্রাইটিস এবং রিউম্যাটিক অবস্থার অন্যান্য প্রদাহজনক অবস্থার সঙ্গেও যুক্ত।

মানবদেহে বসবাস করা কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়ার বেশিরভাগই উপকারী ও সুরক্ষামূলক। এই ব্যাকটেরিয়ারা হজমে সহায়তা করে এবং প্যাথোজেন ও প্রদাহ থেকেও রক্ষা করে। কিন্তু জটিল এই অণুজীব সম্প্রদায়ে সামান্য পরিবর্তন ঘটলে, যেমনটি পিরিওডন্টাল রোগের ক্ষেত্রে ঘটে, ইমিউনিটির সমস্যা ঘটে যেখানে শরীর নিজেই নিজের ক্ষতিগ্রস্ত করে।

জার্নাল অফ পিরিওডন্টোলজিতে ২০১০ সালের একটি এপিডেমিওলজিকাল গবেষণায় দেখা গেছে, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস নেই এমন রোগীদের তুলনায় যাদের রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস আছে তাঁদের মাড়ির রোগ হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ এবং তাঁদের পেরিওডন্টাল রোগও গুরুতর। দশ বছর পরে, স্প্যানিশ গবেষকরা ঠিক এমনই এক ফলাফলের প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। তারা দেখেন যে, গুরুতর পেরিওডন্টাল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গুরুতর রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসও ছিল। যে রোগীদের মাড়ির ব্যথা বেশি, রক্তপাত এবং মাড়ির টিস্যু ভাঙনের পরিমাণ বেশে সেই রোগীদের রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসও গুরুতর পর্যায়ে ছিল। অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে যে চিকিত্সার পরেও, পেরিওডোনটাইটিসে আক্রান্ত RA রোগীদের আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ থেকেই যায় এবং ৫০% মাত্র কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

মাড়ির রোগ এবং আর্থ্রাইটিসের মধ্যে এই সম্পর্ক শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেই দেখা যায় না। জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থ্রাইটিস (JIA) আক্রান্ত বাচ্চাদের মুখে প্রদাহজনক ব্যাকটেরিয়া থাকে। আক্রান্তদের অনেকেরই গাঁটের সমস্যা তীব্রতর হতে থাকে। কিছু ব্যাকটেরিয়া দাঁতে ক্যাভেটিও সৃষ্টি করে যা ফ্লোরাইড চিকিত্সাতেও সারানো যায় না।

আরও পড়ুন- প্লেগের কারণেই হু হু করে বাড়ছে আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি! বিজ্ঞানীদের গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য

কীভাবে মুখের ব্যাকটেরিয়া জয়েন্টের ক্ষতি করে?

কীভাবে এবং কোথায় RA প্রথম শুরু হয় সে সম্পর্কে ধারণা সাম্প্রতিক দশকগুলিতে আমূল পালটে গিয়েছে। গবেষণা বলছে, এখন RA গাঁটে শুরু হয় না, বরং পাচনতন্ত্র এমনকী ফুসফুস সহ শরীরের অন্যান্য অংশের অটোঅ্যান্টিবডি থেকে উৎপন্ন হয়। মুখের জীবাণুগুলি অটোঅ্যান্টিবডি তৈরিতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাতের সঙ্গে যুক্ত একটি মৌখিক জীবাণু P. gingivalis-তে এক উৎসেচক থাকে যা প্রোটিনকে পরিবর্তন করে দেয়। যার ফলে শরীর তাদের ক্ষতিকারক ভাবতে থাকে। সিট্রুলিনেশন নামে পরিচিত এই প্রক্রিয়াটি জয়েন্টের আস্তরণে প্রোটিনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে।

বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, পদ্ধতিগত প্রদাহের কারণে পেরিওডন্টাল রোগের স্বাস্থ্যের উপর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এটি হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা, অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার এবং দুর্বল গর্ভাবস্থা এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের জন্যও দায়ী। কিন্তু গবেষকরা এখন RA রোগীদের পাশাপাশি অস্টিওআর্থারাইটিস রোগীদের সাইনোভিয়াল ফ্লুইডের মধ্যেও (জয়েন্টের মধ্যেকার সান্দ্র তরল) মৌখিক ব্যাকটেরিয়া খুঁজে পেয়েছেন। এখন মনে করা হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত মাড়ির টিস্যুর মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া মুখ থেকে বেরিয়ে যায়, রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে এবং সারা শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

ভবিষ্যতের RA প্রতিরোধ এবং চিকিত্সা

RA এর মতো রোগে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকার প্রমাণ ভবিষ্যতের চিকিত্সা ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। নিউ ইয়র্ক সিটি হাসপাতালের রিউমাটোলজির চিফ এমেরিটাস এবং অটোইমিউন রোগ বিশেষজ্ঞ স্টিফেন পেজেট জানাচ্ছেন, থেরাপিগুলি এমন হতে হবে যাতে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমানোর পরিবর্তে তা বাড়ানো যায়। অন্যান্য বিশেষজ্ঞরাও প্রোবায়োটিক বা মল থেরাপির মাধ্যমে সুস্থ অন্ত্রের বিষয়টি নিশ্চিত করাতে জোর দিতে চাইছেন। অনেকেই মনে করছেন, মাড়ির সংক্রমণের চিকিত্সা বিভিন্ন পদ্ধতিগত রোগ নিরাময় করতে পারে। শুধু প্রয়োজন আরও অনেক গবেষণা।

More Articles