কংগ্রেস-বিজেপির আধিপত্য ছাপিয়ে যাদব রাজত্বের ধ্বজা উড়িয়েছিলেন মুলায়ম সিং যাদব

Mulayam Singh Yadav: মুলায়ম সিং যাদব। ৮২ বছর বয়সে হরিয়ানার মেদান্ত হাসপাতালে প্রয়াত হলেন উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক এই নক্ষত্র।

যাহা আমি আমি নিজের হাতে গড়িয়া তুলিলাম, যাহা আমি লালিত-পালিত করিলাম, তাহাতেই আজ আমার অধিকার নেই! তাহাতেই আমি ব্রাত্য!- সাহিত্য আর সমাজ-দর্পণে একথা, এই সত্য বারবার প্রতিফলিত হলেও ভারতীয় রাজনীতির ছত্রে ছত্রে এই অবস্থার কথা বিরচিত হয়ে ঠিক যেখানে যেখানে, তার মধ্যে অন্যতম উত্তরপ্রদেশের রাজনীতি এবং মুলায়ম সিং যাদব অখিলেশ যাদব পর্ব। যে পর্বের, যে নাটকের এক কুশীলবের মৃত্যু হলো সোমবার। যাঁর প্রয়াণে শেষ হলো এক ইতিহাস, বিতর্ক, আর রাজনৈতিক গুরুত্বের এক পলেস্তরাও।

মুলায়ম সিং যাদব। ৮২ বছর বয়সে হরিয়ানার মেদান্ত হাসপাতালে প্রয়াত হলেন উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক এই নক্ষত্র। সামগ্রিকভাবে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথমসারির নেতা হিসেবে যাঁদের নাম বিবেচিত হয় বারবার, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মুলায়ম। কিন্তু তিনি কোথায় ছিলেন এত দিন? সাংসদ মুলায়ম, মোদীর প্রশংসা, দ্বিতীয় পক্ষের পরিবারের বিজেপি-যোগ, সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার বিতর্কের কেন্দ্রে মুলায়মের অবস্থান থাকলেও দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে তাঁর উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা থাকলেও তাঁর জীবন-পথের বেদনার কথা দিয়েই শুরু হতে পারে আজকের মুলায়ম-কথা!

সমাজবাদী দল। বাই-সাইকেল প্রতীকে কংগ্রেস, অযোধ্যাময় বিজেপি-র আবহে মানুষের মধ্যে উঠে এসেছিলেন কলিযুগের যাদবরা। কিন্তু যে দলের সবটা সৃষ্টি করেছিলেন মুলায়ম। সেই তাঁকেই অঘোষিত বিচ্ছেদ অথবা না জানা এক নির্বাসনে যেতে হয়েছিল মৃত্যুর অনেক আগে থেকেই। অনেকেই বলবেন, কেন! তিনি তো সক্রিয় ছিলেন রোজ! কিন্তু ইতিহাস বলে অন্য কথা।

২০১২ সাল। পুত্র অখিলেশ যাদব দলের নাগাল ধরা শুরু করতেই কাকা শিবপাল যাদবের আবহে বাড়ছিল দলীয় উত্তেজনা। রাজনীতিতে পিতা-পুত্রের মতভেদ, স্রষ্টাকে সরিয়ে দেওয়ার ভুরি ভুরি উদাহরণ থাকলেও এই ক্ষেত্রে ঘটল ভিন্ন। দলের অভ্যন্তরে পিতার দেখানো পথের সুযোগে ছড়ি ঘোরাতে শুরু করলেন অখিলেশ। যে মুলায়ম ছিলেন দলের সর্বেসর্বা। সেই-ই হয়ে গেলেন খানিকটা নিষ্ক্রিয়। কিন্তু তার কেন্দ্রে তৃতীয় ব্যক্তি। আর সেই আবহেই সাংসদ হলেন, দলের নেতা রইলেন। কিন্তু ভূমিকা আর কাজে, অনেকটা ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে উঠছিলেন মুলায়ম সিং যাদব।

২০১৫। ডিসেম্বর। শুরু হল শিবপাল-কেন্দ্রিক মুলায়ম-অখিলেশ টানাপড়েন। দলবিরোধী কাজের অভিযোগে অখিলেশ-ঘনিষ্ঠ নেতাদের বহিষ্কার করলেন মুলায়ম-ঘনিষ্ঠ, তাঁর ভাই শিবপাল যাদব। শুরু হলো ঠান্ডা লড়াই।

২০১৬। জানুয়ারি। বিতর্কিত সাইফাই মহা-উৎসবে যোগ দিলেন অখিলেশ। যা দল বিরোধী কাজ হিসেবে বিবেচিত হল আবার।

জুন। গ্যাংস্টার মুক্তার আনসারির কুয়ামি একতা দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ালেন অখিলেশ।

২৫ জুন। অখিলেশ যাদবের চেষ্টায় জল ঢাললেন মুলায়ম।

১৫ অগাস্ট। শিবপাল প্রসঙ্গে অখিলেশকে তিরস্কার মুলায়মের।

১৩ সেপ্টেম্বর। ক্ষমতায় আসার পরেও অখিলেশের সঙ্গে বিবাদ বাড়ল আরও। শিবপাল-ঘনিষ্ঠ নেতাদের, আধিকারিকদের সরাতে শুরু করলেন অখিলেশ যাদব। বাবা নয়, জাতীয় রাজনীতিতে দলের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে শুরু করলেন মুলায়ম-পুত্র। এদিকে অমর সিং, শিবপালরা ততদিনে ঘিরে রেখেছেন দলের স্রষ্টাকে।

১৫ সেপ্টেম্বর। বিবাদ গড়াল আরও কঠিন পথে। দল থেকে, সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিলেন শিবপাল।

১৬ সেপ্টেম্বর। ভাইয়ের ইস্তফা বাতিল করলেন মুলায়ম। ফের অসন্তুষ্ট হলেন অখিলেশ।

৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬। মুলায়ম তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে দল থেকে সরিয়ে দিলেন নিজের ছেলেকে।

যে অখিলেশকে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী করেছিলেন ২০১২ সালে। ক্ষমতা ছেড়েছিলেন। তাঁকেই সরালেন তিনি। ভাঙল স্বপ্নের দল।

কোণঠাসা অখিলেশ ফের ২০১৭ সালে দলের নাগাল পেলেন হাতে। রাম গোপাল যাদবের সঙ্গে মিলে দলের বড় অংশের সঙ্গে মিললেন তিনি। ক্রমশ কোণঠাসা হচ্ছিলেন মুলায়ম।

২০১৮ থেকে ২০২২।উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক নদী দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। যোগী আদিত্যনাথ প্রভাবে বিলুপ্তির পথে গিয়েছে সমাজবাদী দল। একদা শত্রু মায়াবতী, কংগ্রেসের সঙ্গে মিলেছে মুলায়মের শখের দল। অখিলেশ ক্যারিশমায় ফের ২০২২ -এ এসে খানিকটা ফিরেছে সমাজবাদী দল। কিন্তু মুলায়ম থেকে গিয়েছেন অন্ধকারেই। অস্তিত্ব বাঁচাতে খানিকটা নরম হয়েছেন বিজেপি-র প্রতি! নরেন্দ্র মোদীর প্রতি! একাধিক ইস্যুতে চুপ থেকেছেন একদা উত্তরপ্রদেশের মসীহা।

কেউ প্রথমেই এল এই প্রসঙ্গ? দীর্ঘ ৫৫-৫৬ বছরের রাজনৈতিক জীবন, জরুরি অবস্থা, বিরোধ, একের পর বিতর্ক, কাজ ছাড়িয়ে যে মুলায়ম হয়ে উঠেছেন এক অনন্য প্রতিভূ, সেই মুলায়মকে নিয়েই অযাচিত কাটাছেঁড়া বাড়ে ২০১২ সালের পর থেকে। আর সেই মুষলপর্ব তাঁর জীবনের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বের এমন দাবি করেন কেউ কেউ।

অনেকেই বলেন, পিতা-পুত্রের এই বিবাদ মূলত তৃতীয়কে কেন্দ্র করে, তাই সরাসরি এই বিভেদের সঙ্গে অন্যান্য উদাহরণ দেওয়া যায় না। আবার কেউ বলেন, এই বিবাদ-বিভেদ-অস্তিত্বের সংকট দিনের পর দিন মুলায়মকে অসুস্থ করে তুলছিল! তাঁর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিতভাবে তা না হলেও এর প্রভাব যে মারাত্মক ছিল তাঁর জীবনে, একথা স্বীকার করেন অনেকেই।

এতো গেল মুলায়মের সাম্প্রতিক ইতিহাস আর মৃত্যু অবধি অবস্থানের কথা। কিন্তু কে তিনি? কী তাঁর বিশেষত্ব? কী তাঁর ইতিহাস? কেন আজও তিনিই অনন্য? অভিনব?

জন্ম, শিক্ষা-বৃত্তান্তে মুলায়ম
২২ নভেম্বর, ১৯৩৯ উত্তরপ্রদেশের এতওয়া জেলার সাইফাই গ্রামে জন্ম নিলেন মুলায়ম। বাবা সুঘার সিং, মা মূর্তি দেবী। সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে গ্রাম্য পরিবেশে বেড়ে ওঠা মুলায়ম বরাবর অন্যান্য ক্ষেত্রের সঙ্গেই চেষ্টা করেছিলেন পড়াশুনা করতে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করলেন তিনি। তারপর স্নাতকোত্তর। মুলায়মের লক্ষ্য ছিল কুস্তিগির হওয়ার। চরকা দাও; প্রতিযোগিতায় তাঁর অংশগ্রহণ নজর কাড়ত দর্শকদের। মুলায়ম দিনের পর দিন পরিচিতি পান কুস্তিগির হিসেবে। আখড়া হয়ে ওঠে তাঁর ধ্যানজ্ঞান।

পারিবারিক মুলায়ম
বিধায়ক হিসেবে প্রথম নির্বাচিত হওয়ার পরেই মালতী দেবীকে বিয়ে করেন মুলায়ম। ১৯৭৪ সাল থেকে স্ত্রী হিসেবে ছিলেন মালতী। অখিলেশ যাদবের মায়ের মৃত্যু হয় ২০০৩ সাল নাগাদ।

প্রথম স্ত্রী থাকলেও তিনি সম্পর্কে জড়িয়ে যান সাধনা গুপ্তা নামে এক মহিলার সঙ্গে। ১৯৯০ সাল নাগাদ বিয়ে করেন। বিতর্ক তৈরি হয়। প্রতীক যাদব নামে এক সন্তানের জন্ম দেন সাধনা। প্রতীকের স্ত্রী অপর্ণা, বর্তমানে বিজেপি নেত্রী।

অভয় রামসিং যাদব, রাজপালসিং যাদব, শিবপালসিং যাদব, তাঁর নিজের ভাই। রামগোপাল যাদব তাঁর তুতো ভাই।

রাজনৈতিক জীবন
রাম মনোহর লোহিয়ার জীবনযাপন, রাজনীতি প্রভাবিত করতে শুরু করে যুবক মুলায়ম সিং যাদবকে। রাজ নারাইনকে দেখেও উদ্বুদ্ধ হন তিনি। কংগ্রেস শাসনাধীন ভারতে দাঁড়িয়ে সেই সময় বিরোধী মুখ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন তিনি।  ১৯৬৭ সালে প্রথম বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন, যশোবন্তনগর আসন থেকে। সেই সময় তিনি সংযুক্ত সমাজবাদী দলের সঙ্গে। তিনবছর বিধায়ক থাকার পর ফের ১৯৭৪ সালে বিধায়ক নির্বাচিত হন ওই একই আসনে। কিন্তু এবার ভারতীয় ক্রান্তি দলের হয়ে। ১৯৭৭ সাল নাগাদ একই আসনে ভারতীয় লোক দলের প্রার্থী হিসেবে জয় পান তিনি। ঠিক এই সময়ের জরুরি অবস্থায় ১৯ মাস জেল খাটেন মুলায়ম। ফের ১৯৮৫ সালে বিধায়ক।

১৯৮৯ সালে জনতা দলের বিধায়ক। এবং জনতা দল সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হলেন মুলায়ম।

এরপর নিজের রাজনৈতিক জীবনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেন অখিলেশের পিতা।

১৯৯২ সাল। অক্টোবর। তৈরি করলেন নিজের, সমাজবাদী দল। ১৯৯৩ -এ নিজের দলের হয়ে যশোবন্তনগর এবং শিখোয়াবাদ থেকে বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হলেন তিনি। এবার নিজের দলের নেতৃত্বাধীন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হলেন মুলায়ম সিং যাদব।

১০ বারের বিধায়ক, ১৯৯৬ সাল নাগাদ পদত্যাগ করেন বিধায়ক পদে। সমাজবাদী দলের হয়ে ১৯৯৬ সালে প্রথম সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হলেন মইনপুরি আসন থেকে।  হন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও। ১৯৯৮ সালে ফের নির্বাচন। সম্ভল আসনে জয়। আবার ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে জয় পান তিনি। এরপর ২০১৯ পর্যন্ত কোনও লোকসভা নির্বাচনে হারেননি মুলায়ম। ৭ বারের সাংসদ, ১০ বার বিধায়ক হন তিনি। যা দেশে অন্যতম শুধু নয়, উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে রেকর্ড।

মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম
উত্তরপ্রদেশ সরকারে তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হন মুলায়ম সিং যাদব। ১৯৮৯ সালে প্রথবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। কেন্দ্রে ১৯৯০ নাগাদ ভিপি সিংয়ের সরকার পড়ে যাওযার পরে, চন্দ্র শেখরের জনতা দল (সমাজবাদী) -এ যোগ দেন তিনি। বিধায়ক হন। এরপর উত্তরপ্রদেশ সরকারে কংগ্রেসের সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। ১৯৯১ সালে সমর্থন তোলে কংগ্রেস। পদ হারান মুলায়ম।

এরপর দ্বিতীয়বারের জন্য মুলায়ম সিং যাদব মুখ্যমন্ত্রীর আসন দখল করেন ১৯৯৩ সাল নাগাদ। বহুজন সমাজবাদী দলের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন লড়েন। বিজেপি-কে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন তিনি। কংগ্রেস আর জনতা দলের সমর্থন পান তিনি। এই সময়ে উত্তরাখণ্ড; আলাদা রাজ্যের দাবি, ১৯৯৪ সালে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালানোর ঘটনা। অযোধ্যাকাণ্ডের মতো একাধিক বিতর্কের মুখে পড়ে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার। ক্ষমতা হারান মুলায়ম।

২০০২ সালে ফের উত্তর প্রদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা। বিজেপি, মায়াবতীর সংযোগ-বিরোধের পরেও ২০০৩ সাল নাগাদ ফের সুযোগ আসে সমাজবাদী দলের। তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন মুলায়ম সিং যাদব। তখন তিনি লোকসভার সদস্য। শপথের পর, গুন্নার আসনে প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট পেয়ে ফের বিধায়ক হন মুলায়ম। ২০০৭ সালে মায়াবতীর দলের কাছে হেরে ক্ষমতা হারায় সমাজবাদী দল।

কেন্দ্রের মন্ত্রীত্ব
১৯৯৬ সালের এইচডি দেবগৌড়ার সংযুক্ত সরকারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হন তিনি। ১৯৯৮ পর্যন্ত এই দায়িত্ব সামলান তিনি।

বিতর্কে মুলায়ম
একাধিকবার নানা মন্তব্য, সরকারে থাকাকালীন কাজে বিতর্ক শুরু হলেও ২০১২ সালের দিল্লি ধর্ষনের ঘটনায় মন্তব্য-বিতর্কে জড়ান এই পোড়খাওয়া রাজনীতিক। দেশে ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন বদলের ক্ষেত্রে বিরোধিতা করেন তিনি। 'ছেলেরা, ছেলেই থাকে,' তাঁর এই ধরনের মন্তব্য শোরগোল ফেলে দেশে।

তিব্বত-ইস্যুতে বিতর্কে জড়ান তিনি। তিব্বতের স্বাধীনতায় ভারতের সমর্থন জরুরি থেকে শুরু করে পাকিস্তানের তুলনায় চিন আমাদের বেশি শত্রু, এমন মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ান।

মুলায়ম সিং যাদব। অখিলেশ সিং যাদব। শিবপাল সিং যাদব এবং সমাজবাদী দলের পারিবারিক বিবাদ, বিতর্কও সাড়া ফেলে দেশজুড়ে।

২০২১ সালে তাঁকে নিয়ে হিন্দিতে তৈরি হয় সিনেমা। 'আমি মুলায়ম সিং যাদব,' নামের ওই সিনেমার পরিচালনা করেন শুভেন্দুরাজ ঘোষ। মূখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন আমিথ শেঠি।

বাংলা এবং মুলায়ম
উত্তরাখণ্ড, গুজরাত, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে তাঁর সৃষ্ট দলের অস্তিত্ব থাকলেও উত্তরপ্রদেশের বাইরে মুলায়মের দলের প্রভাব বিস্তার তেমনভাবে হয়নি দুই দশক ধরেও। মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশে ২ জন করে বিধায়ক তাঁর দলের প্রতীকে থাকলেও খুব একটা ছড়িয়ে যায়নি এই দল। বাংলায় একদা মুলায়ম-ঘনিষ্ঠ কিরণময় নন্দের হাতধরে সমাজবাদী দলের সংগঠন বিস্তার হলেও কিরণময় ছাড়া তেমনভাবে দলের কোনও অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়নি, অখিলেশ-সময়ে এসেও। বরঞ্চ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন মুলায়ম এবং তাঁর দল। বর্তমানে যা অখিলেশ যাদবের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যদিও নয়ের দশকের শেষ পর্বে বিজেপি, অটল-ঘনিষ্ঠ মমতার সঙ্গে খুব একটা ভালো সম্পর্কের দিকে এগোয়নি মুলায়মের দল। উপরন্তু মায়াবতীর সঙ্গে যোগাযোগ বেড়েছে মমতার। ঠিক এই অবস্থায় অখিলেশ পূর্ববর্তী কিরণময়দের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে তৎকালীন বাম নেতাদের। যদিও এখন বদলেছে পরিস্থিতি। জাতীয় রাজনীতিতে অন্যতম অখিলেশ আর মমতার সম্পর্কে উন্নতি এসেছে মুহুর্মুহু।

সামগ্রিকভাবে মুলায়ম সিং যাদব এবং ভারতীয় রাজনীতির আঙিনা একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একার্থে রাজনীতিকে ধ্যানজ্ঞান, অন্য দিকে জাতীয় স্তরে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অসাধারণ প্রভাব, সব দিকেই মহীয়ান থেকেছেন মুলায়ম। ঠিক এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে হার, জিতের আবহেই তিনিই হয়ে উঠেছেন উত্তর প্রদেশের মাস্টারমাইন্ড। যে তীব্রতায় ২০১২ সালের পর খানিকটা আঁচ লাগা শুরু হলেও যা তাঁর মৃত্যু অবধি আরও বিস্তার লাভ করলেও রাজনীতির বটবৃক্ষ মুলায়ম থেকেছেন অনন্য, অভিনবও।

More Articles