অক্ষয় হোক পুজোর রান্নার ঐতিহ্য! যে ষোলোআনা বাঙালি খাবারগুলি অবশ্যই খাবেন...
Durga Puja 2022: যারা নানা রকম খাবারের স্বাদ নেওয়ার জন্য দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ান, তাঁদের অন্তত একবার পুজোর সময় পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষত কলকাতায় আসা উচিত।
‘খাদ্য রসিক’! বাঙালির নামের পাশে এই তকমাটা যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায়। তার উপর সামনেই পুজো আর এবার পুজোতে আনন্দের মাত্র খানিকটা বেশি, কারণ কোভিডের লাল চোখ ভয় আপাতত দেখাচ্ছে না। পাশাপাশি বিশ্বের দরবারে দুর্গাপুজো পেয়েছে হেরিটেজ স্বীকৃতি। তাই বাঙালির কাছে এবারের পুজো বিশেষভাবে বিশেষ। আর পুজো মানেই আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে দিনরাত আড্ডা দেওয়া, হইহুল্লোড়ে মেতে ওঠা, বিকেলবেলায় গানের লড়াই, আর রাত দুপুরে জমিয়ে পেটপুজো। তাই পুজোর আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যায় নানা রকম খাবারের স্বাদে।
কলকাতা হোক বা মফসসল কিংবা কোনও প্রত্যন্ত গ্রাম, দুর্গাপুজোর আনন্দকে আরও বেশি করে বাড়িয়ে তোলে নানাবিধ খাবার। তাই খাবারের প্রবল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে গেছে বাঙালির জীবনে। অন্যান্য উৎসবের থেকে একেবারেই আলাদা এই পুজো। খাবারের উপর কোনও বাধা- নিষেধ থাকে না। নিরামিষ থেকে আমিষ, মিষ্টি থেকে টকঝাল, সাধারণ থেকে এক্সোটিক, ঘরোয়া থেকে ফিউশন- রান্নার প্রায় হাজারের বেশি পদ থাকে। যারা নানা রকম খাবারের স্বাদ নেওয়ার জন্য দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ান, তাঁদের অন্তত একবার পুজোর সময় পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষত কলকাতায় আসা উচিত।
বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় কিংবা বাড়িতেও বানিয়ে খেতে পারেন এই পদগুলি।
১. খিচুড়ি -
অষ্টমীর ভোগ খিচুড়ি ছাড়া অসম্পূর্ণ। বাঙালির যে কোনও পুজোর অনুষ্ঠানে খিচুড়ি ভোগ থাকেই। বানানোও খুব সহজ। পাড়ার কর্তৃপক্ষ যদি এবার পুজোর খাওয়া দাওয়া বাতিল করে তাহলে বাড়িতেই অষ্টমীর দিন নিজে নিজে বানিয়ে ফেলুন।
আরও পড়ুন- একা ‘দাদা-বৌদি’-ই বদলে দিয়েছে সোদপুরের ছবি! নামজাদা রেস্তোরাঁর ঠিকানা এখন মফসসল
২. সরষে ইলিশ -
কথায় আছে মাছে ভাতে বাঙালি। খেতে বসলে পাতে একপিস মাছ থাকবে না, এটা হয়ই না। পুজোর ক’টাদিন নিয়ম মেনে চলতে হবে না। পাতলা ঝোলের বদলে সরষে-পোস্ত দিয়ে ইলিশ রাঁধুন। বাজারে এখন পাওয়াও যাচ্ছে ভালো মানের ইলিশ। ফলে পুজোয় একটা দিন ইলিশ খাওয়া থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না।
৩. আলু পোস্ত -
ধরুন, পুজোর সময় বাড়িতে কোনও অবাঙালি বন্ধু এসেছেন যিনি নিরামিষ খেতে পছন্দ করেন। তাঁকে সবার আগে যে খাবার রেঁধে খাওয়ানো উচিত সেটা হল আলু পোস্ত। বাসমতি চালের ভাত, সোনা মুগ ডাল সঙ্গে আলু পোস্ত। নিরামিষ খাবারের স্বাদও মুখে লেগে থাকবে।
৪. ঘুগনি -
সন্ধের জমজমাটি গানের লড়াই চলার সময় পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের জন্য স্ন্যাকস হিসেবে ঘুগনি পারফেক্ট। এর উপরে কুচিকুচি করে কাটা পেঁয়াজের টুকরো ছড়িয়ে দিতে পারলে তো আর কোন কথাই নেই।
৫. চিংড়ি পোস্ত -
সরষে ইলিশের নাম নেওয়ার পর যদি চিংড়ির নাম না করি তাহলে ঘটিরা আবার খুব রেগে যাবেন। চিংড়ি পোস্ত এমনই এক পদ যা ঘটি বাঙাল সকলেই পছন্দ করবেন। মালাইকারির মত মিষ্টি না। অন্যস্বাদের এই রান্না পুজোর একদিন করতেই পারেন।
৬. সন্দেশ -
মিষ্টি ছাড়া পুজো হয়! রসের মিষ্টি ছাড়া যারা একটু শুকনো মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এই সন্দেশ। কলকাতার সব মিষ্টির দোকানে সন্দেশের প্রচুর ভ্যারাইটি থাকে, যেকোনও একটা বা দু’টো বেছে নেওয়াই খুব মুশকিল।
৭. লুচি -
পুজোর ক’টাদিন ব্রেকফাস্টে লুচি, আলুর দম থাকবে না এটা কখনও হয়! আটা না, ময়দার তৈরি লুচি নরম হয় বেশি। আলুর তরকারির সঙ্গে বেশি মানানসই। পরপর পাঁচ দিন না হোক, অন্তত দু’ একদিন সকালে তো অবশ্যই খাবেন।
আরও পড়ুন- Karim’s vs Kareem’s: এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়! পুজোয় কোথায় কোন বিরিয়ানি সেরা?
৮. মোচার চপ -
যতই মোচার নাম করুক, চপের মূল উপাদান কিন্ত পাকা কলা আর আলু। বিকেলবেলার আড্ডায় চায়ের সঙ্গে মোচার চপ থাকলে একেবারে জমে যাবে।
৯. মোচার ক্রকেটস্-
সেদ্ধ আলু খোসা ছাড়িয়ে গ্রেট করে নিতে হবে৷ সেদ্ধ আলু, জল ঝরানো সেদ্ধ মোচা, বিটনুন, ভাজা মশলা, আম-আদা বাটা একসঙ্গে ভালো করে মেখে মণ্ড তৈরি করতে হবে৷ ওই মণ্ড ছোট ছোট গুলি করে ভাগ করে প্রতিটি গুলির ভিতর চিজ পুরে চারিদিক থেকে আটকে কর্নফ্লাওয়ারের গোলায় ডুবিয়ে বিস্কুটের গুঁড়ো মাখিয়ে ছাঁকা তেলে ভেজে নিতে হবে। তাহলেই তৈরি হয়ে মজাদার মোচার ক্রকেটস্।
১০. কষা মাংস -
নবমীর দুপুরে কবজি ডুবিয়ে মটন কষা খায় না এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তেল, মশলা, খুব ঝাল দিয়ে তৈরি হয় এই রান্না। এবার পুজোতেও কিন্তু খেতে ভুলবেন না।
১১. রসগোল্লা -
কলকাতার রসগোল্লা সারা পৃথিবী বিখ্যাত। দেশ বিদেশ থেকে কলকাতায় এলে সবার আগে রসগোল্লার স্বাদ নেয় সকলে। পুজোর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাঙালির পাতে মিষ্টি থাকবেই। আর রসগোল্লা ছাড়া বিজয়া তো ভাবাই যায় না।