একই দিনে উত্তরে মোদি-মমতার সভা! হারানো আসন ফিরে পাবে তৃণমূল?

Modi Mamata North Bengal: মোদি সব প্রশ্ন হেলায় উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেছেন বিজেপির উদ্দেশ্য সৎ!

উত্তরবঙ্গ দিয়ে বাংলায় প্রথম দফার লোকসভা নির্বাচন শুরু হচ্ছে আগামী ১৯ এপ্রিল। ফলে উত্তরে এখন হাই-প্রোফাইল রাজনৈতিক সভা! নরেন্দ্র মোদি নিজে এসেছেন, হাজির মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। একই দিনে সভা করে ক্ষমতা প্রদর্শনের সমস্ত পথই ব্যবহার করছে যুযুধান দুই পক্ষ। এরই মধ্যে নরেন্দ্র মোদি ধন্যবাদও জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। গতবার মোদির জনসভার মাঠ ছোট করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এবার তেমন ঘটনা না ঘটায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মোদি। তবে পাশাপাশি, মরিয়াভাবেই বোঝাতে চেয়েছেন বাংলার ৪২ আসন দখলে কোনও কসুরই করবে না গেরুয়া বাহিনী।

মোদি বলছেন, মোদি জমানার গত দশ বছর ছিল স্রেফ ট্রেলার! পিকচার আভি বাকি হ্যায়। ট্রেলারের শেষভাগে এসে মোদি দাবি করেছেন ইডির মাধ্যমে উদ্ধার হওয়া ৩৫০০ কোটি টাকা জনতার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে। মমতা পাল্টা প্রশ্ন করছেন, এই টাকা সকলের মধ্যে ভাগ করতে গেলে বাংলার জনগণ পাবেন ২১ টাকা করে। বাংলাকেই ভাবতে হবে তারা ২১ টাকা চান না কি বাংলাকে বাঁচাতে চান।

মমতা একদিকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প নিয়ে ভোট টানতে চাইছেন, পাল্টা নরেন্দ্র মোদি বলছেন লাখপতি দিদি প্রকল্পের কথা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার একান্তই তৃণমূল সরকারের প্রকল্প, বিজেপি তা চুরি করতে চাইছে। "ওরা ৪০ শতাংশ মা-বোনকে দেবে। আমরা ১০০ শতাংশ দিই", বলছেন মমতা। ভোটের আগে ভাণ্ডারের ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করার কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিশীথ প্রামাণিকের প্রচারে এসে মোদি বলছেন, বাংলার ৩ কোটি মহিলাকে ‘লাখপতি দিদি’ বানাবে মোদি সরকার। বলছেন, ‘‘আমরা লাখপতি বানাব তিন কোটি মহিলাকে। ওঁদের ড্রোন পাইলট বানাব। এতে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রকল্পে গতি আসবে। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে অন্তত সম্ভাবনা রয়েছে। বিজেপি এখানে তাই বিকাশের জন্য নিরন্তর কাজ করে চলেছে।’’

আরও পড়ুন- বিজেপির উপর গোঁসা করেই তৃণমূলে! ‘বহিরাগত’ শত্রুঘ্ন এবারও জিতবেন?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে মমতা প্রশ্ন করেছেন, ১১ লক্ষ আবাসের তালিকা নিয়ে, ১০০ দিনের টাকা নিয়ে। আর মোদি এসব প্রশ্ন হেলায় উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেছেন বিজেপির উদ্দেশ্য সৎ! উদ্দেশ্য সঠিক ও সৎ বলেই নাকি কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিল করতে পেরেছেন তিনি। উদ্দেশ্য সৎ ছিল বলেই সংসদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ চালু করতে পেরেছেন। উদ্দেশ্য সৎ ছিল বলেই ৫০০ বছরের সংগ্রামের ফসল রাম মন্দির তৈরি হয়েছে। বাস্তব বলছে, মোদির এই সমস্ত সিদ্ধান্তের অধিকাংশই ধর্মীয় মেরুকরণের উদ্দেশ্যে নেওয়া। এখনও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, এক দেশ-এক নির্বাচন, ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণার মতো কতগুলো জটিল প্রক্রিয়া বাকি। সিএএ শুরু হয়ে গেলেও এনআরসির মতো জটিল বিষয় বাকি। মমতা বলছেন, ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে এক দেশ, এক রাজনৈতিক দলের মতো স্বৈরাচার চলতে পারে না। অথচ বিজেপি তা-ই করছে।

উত্তরবঙ্গ বিজেপির শক্ত ঘাঁটি। তাই এবারের লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গকে বাড়তি সময় দিচ্ছেন মমতাও। ময়নাগুড়িতে সাইক্লোনের ধাক্কা সামাল দিতে গেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই থেকে রয়েই গেছেন। মোদির কোচবিহার সভার দিনেই নিজে দু'খানা সভা করছেন। বিজেপির কাছ থেকে উত্তরের আসন ছিনিয়ে নেওয়াই এখন তৃণমূলের লক্ষ্য। ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে জয়ের পর তাই উত্তরবঙ্গে বারবার এসেছেন মমতা, সভা করেছেন। জনসংযোগের সমস্ত চেষ্টা করেছেন। ১৯ এপ্রিল জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারের পর ২৬ এপ্রিল ভোট রয়েছে দার্জিলিং, রায়গঞ্জ, বালুরঘাটে। ৭ মে ভোট রয়েছে মালদহ উত্তর, মালদহ দক্ষিণে। তিন দফায় উত্তরবঙ্গ ভোটে হৃতগৌরব ফেরাতে পারবেন মমতা, না কি উত্তরে এবার আরও বেশি আসন দখল করবে নরেন্দ্র মোদির দল?

 

More Articles