ভারত থেকে বিদায় হোয়াটসঅ্যাপের? পরিষেবা বন্ধ নিয়ে ঠিক কী জানাল মেটা?
WhatsApp in India: তবে এবার ভারতীয়দের জন্য বন্ধ হতে পারে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই অ্যাপ। তেমনই আশঙ্কার কথা জানাল হোয়াটসঅ্যাপের মাদার সংস্থা মেটা।
সকালে দিনশুরু থেকে শুরু করে রাতে চোখবোজা পর্যন্ত, যে অ্যাপটি না হলেই আমাদের নয়, তা বোধহয় হোয়াটসঅ্যাপ। এমনকী পৃথিবীর সর্বাধিক ব্যবহৃত মেসেজিং অ্যাপগুলির মধ্যে অন্যতম মার্ক জুকেরবার্গ সংস্থা মেটার আওতায় থাকা এই মেসেজিং অ্যাপটি। তবে এবার ভারতীয়দের জন্য বন্ধ হতে পারে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই অ্যাপ। তেমনই আশঙ্কার কথা জানাল হোয়াটসঅ্যাপের মাদার সংস্থা মেটা।
হোয়াটসঅ্যাপের সব চেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য এর গোপনীয়তা। এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন ফিচারের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপে যে কোনও চ্যাট অন্য যে কোনও মেসেজিং অ্যাপের তুলনায় অনেক বেশি সুরক্ষিত বলে দাবি করে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। সেই এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন পলিসি নিয়েই এবার প্রশ্নের মুখে হোয়াটসঅ্যাপ। ২০২১ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষিত তথ্যপ্রযুক্তি মামলায় সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্টে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে হোয়াটসঅ্য়াপ। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, নিজেদের গোপনীয়তা সংক্রান্ত নিয়ম তারা লঙ্ঘন করবে না কিছুতেই। হাইকোর্টে সে কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ। মেটার তরফে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনে ভারত ছেড়ে চলে যেতেও রাজি হোয়াটসঅ্যাপ।
মেটার তরফে আইনজীবী এদিন আদালতে জানিয়েছেন, গোপনীয়তার কারণেই মানুষের মন জিততে পেরেছে হোয়াটসঅ্যাপ। এত মানুষের হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের অন্যতম কারণ তার এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন পলিসি। ফলে তার সঙ্গে কোনও মতেই আপস করবে না মেটা। এই মুহূর্তে ভারতের বাজারে ৯০ কোটিরও বেশি হোয়াটসঅ্যাপ ইউজার রয়েছেন। যারা প্রতিদিনের কাজে এই অ্যাপটিতে কার্যত অপরিহার্য বানিয়ে ফেলেছেন। হোয়াটসঅ্যাপ ভারত থেকে বিদায় নিলে বড়সড় সমস্যার মুখে পড়বেন তাঁরা। একই সঙ্গে অসুবিধায় পড়বে হোয়াটসঅ্যাপও। কারণ এই বিপুল সংখ্যক ইউজার তারা হারাবে।
আরও পড়ুন: হোয়াটসঅ্যাপ হোক বা স্ন্যাপচ্যাট, ইউক্রেনের সঙ্গে জড়িয়ে বহু টেক জায়ান্টের জন্মরহস্য
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় তথ্য প্রযুক্তি দফতর একটি নতুন আইন আনে। সেই ইনফরমেশন টেকনোলজি (ইন্টারমিডিয়েটরি গাইডলাইনস অ্যান্ড ডিজিটাল মিডিয়া এথিক্স কোড) আইনের আওতায় বলে দেওয়া হয়েছিল, টুইটার (বর্তমানে এক্স), ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াট্সঅ্যাপের মতো সমাজমাধ্যমগুলিকে নতুন নিয়ম মেনে চলতে হবে। প্রয়োজনে চ্যাট অনুসরণ করে কোনও ভাইরাল তথ্যের উৎস সন্ধান করতে হবে। যা আদতে হোয়াটসঅ্যাপের এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন নীতির বিরোধী।
কী এই এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন পরিষেবা? সূত্রের খবর, এই পলিসির কারণেই কোনও চ্যাট সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাইরের কেউ চাইলেও এই কথপোকথনের নাগাল পান। সেই গোপনীয়তা নীতি এমনই, সেই কথপোকথন পড়তে পারে না মেটা খোদও। এদিকে ২০২১ সালের কেন্দ্রের ওই আইনের আওতায় হোয়াটসঅ্যাপকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যাতে প্রয়োজনে ওই নিয়মের বেড়াজাল সরিয়ে ফেলা যায়। আর তাতেই রাজি হয়নি মেটা।
শুক্রবার সেই মামলাটির শুনানি ছিল দিল্লি হাইকোর্টে। যেখানে বিচারপতি মনমোহন ও বিচারপতি মনমীৎ প্রীতম সিংহ অরোরার বেঞ্চে হোয়াটসঅ্যাপের তরফে আইনজীবী সাফ জানিয়ে দেন, যে পদ্ধতিতে হোয়াটসঅ্যাপ ওই গোপনীয়তা রক্ষা করে, তা ভাঙা অসম্ভব। কারণ সেটা করতে হলে প্রতিটি চ্যাটের দীর্ঘতালিকা দীর্ঘ সময়ের জন্য সঞ্চয়ে রাখতে হবে হোয়াটসঅ্যাপকে। যা তাদের পলিসিবিরুদ্ধ। কারণ কবে কোন চ্যাটের গোপনীয়তা ভাঙার প্রয়োজন হবে, তা তো বলা যায় না। ফলে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মেসেজ বছরের পর বছর ধরে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে মেটাকে। যা অসম্ভব বলেই আদালতে জানিয়েছেন আইনজীবী। হোয়াটসঅ্যাপের তরফে এ দিন আদালতে সাফ জানানো হয়েছে, সত্যিই যদি হোয়াটসঅ্যাপকে কেন্দ্রের ওই আইন মানতে হয়, তাহলে ভারত ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া আর উপায় থাকবে না মার্ক জুকেরবার্গের সংস্থা মেটার।
এদিকে কেন্দ্রের তরফে আইনজীবী আদালতে যুক্তি দিয়েছেন, বহু সময়েই হোয়াটসঅ্যাপের অপব্যবহার হয় আজকের দিনে। হোয়াটসঅ্যাপের মতো অ্যাপকে হাতিয়ার করে আপত্তিকর বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় সমাজমাধ্যমে। যা আসলে সমাজ এবং জনমানসের জন্য ক্ষতিকর। অনেক সময় সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বার্তাগুলির জন্য বড়সড় অশান্তিও তৈরি হয়। সেই পরিস্থিতি আটকাতেই ২০২১ সালে ওই আইনটি চালু করা হয়।
আরও পড়ুন:‘হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি’ বন্ধ হয়ে গেলে কার অসুবিধা সবচেয়ে বেশি?
তবে ওই আইনটি মানতে অস্বীকার করেছে হোয়াটসঅ্যাপ। কেন্দ্র জানিয়েছেন, অনলাইন সুরক্ষা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষতিকর কনটেন্টের ছড়িয়ে পড়া আটকাতেই মূল প্রেরককে চেনা বা শনাক্ত করা জরুরি। আর সেই ভুয়ো খবর বা হিংসা ছড়ানো অভিযুক্তকে চিহ্নিত করার দায়িত্বও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলির। আর সেই সব সমস্যাগুলিতে চিহ্নিত করতে অ্য়াপগুলোর নিজস্ব মেকানিজম থাকা জরুরি বলেই জানিয়েছে কেন্দ্রে। তবে সে কথা মানতে নারাজ হোয়াটসঅ্যাপ। প্রাইভেসি ও ওইসব ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনতে কী করা উচিত, তা ভাবার কথা জানিয়েছে হাইকোর্ট। এখন কেন্দ্রের সঙ্গে বিবাদে ভারতকে হোয়াটসঅ্যাপহারা হতে হয় কিনা, আপাতত সেটাই ভাবাচ্ছে আম আদমিদের।