বাংলার চাকরিতে বাঙালিরই নামকাটা! বিজ্ঞাপন বিতর্কে মার্লিনের উত্তর
Merlin Group Viral Advertise: গর্গ জানতে চান, বাংলায় কাজ করে মার্লিন সংস্থা, বহু বাঙালি ক্রেতা রয়েছে তাঁদের। তাহলে সেলস ম্যানেজার পদে কেন বাঙালি নেওয়া হবে না?
বাঙালি বাতিল। চাকরি দেবে মার্লিন গ্রুপ কিন্তু বাঙালি প্রার্থী হলে ঠাঁই নেই। খোদ বাংলায় বসে, বাংলাতেই ব্যবসা করে ফুলে ফেঁপে ওঠা একটি সংস্থা এমনই কর্মখালির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে 'Only Non Bengali Candidates preferred’। কয়েকদিন আগেই এজিএম সেলস বিভাগে সিনিয়র ম্যানেজার পদে প্রার্থী চেয়ে বিজ্ঞাপন দেয় মার্লিন গ্রুপ। তাতে প্রার্থীর যোগ্যতা উল্লেখ করার সময় স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়া হয়, বাঙালি হলে এই চাকরির জন্য আবেদন না করাই ভালো।
মার্লিন গ্রুপ ১৯৮৪ সালে তৈরি হয়। ভারতের রিয়েল এস্টেট শিল্পের এক বিখ্যাত নাম মার্লিন গ্রুপ। আবাসিক, বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স, অফিস এবং একাধিক টাউনশিপ রয়েছে মার্লিনের। কলকাতার পাশাপাশি আহমেদাবাদ, রায়পুর, পুনে, চেন্নাই এবং কলম্বোতেও মার্লিনের ব্যবসা রয়েছে। মার্লিন গ্রুপ এখন শপিং মল, রিসর্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট, ক্লাবও তৈরি করছে। এক কথায় বিলাসবহুল যাপনের, গ্ল্যামারাস যাপনের সব চাহিদা পূরণ করে মার্লিন গ্রুপ। সেই গ্রুপেরই বিজ্ঞাপনে তাহলে কেন শুধু অবাঙালি প্রার্থীকের মান্যতা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে? কলকাতায় গোষ্ঠীর অফিস, বাংলাতে জমিয়ে ব্যবসা করছে সংস্থা। তাহলে কেন বাঙালির প্রতি এই বৈষম্য?
মার্লিন গোষ্ঠীর অফিসে ফোন করেছিলেন বাংলাপক্ষের সাধারণ সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায়। গর্গ জানতে চান, বাংলায় কাজ করে মার্লিন সংস্থা, বহু বাঙালি ক্রেতা রয়েছে তাঁদের। তাহলে সেলস ম্যানেজার পদে বাঙালি নেওয়া হবে না, এই জাতীয় বিজ্ঞাপন কেন দেওয়া হয়েছে? গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে গর্গকে বারেবারে বলা হয়, বিজ্ঞাপনে লেখা আছে 'নন বেঙ্গলি প্রেফারড'। 'প্রেফারড' শব্দের অর্থ বাঙালিকে নেওয়া হবে না এমন নয়। মার্লিন গোষ্ঠীর কোনও মালিক বা শেয়ারহোল্ডার বাঙালি নন। কিন্তু অনেক কর্মচারীই আছেন বাঙালি। তাই বিজ্ঞাপনের ওই একটি বাক্য এখানে অতটাও গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে বোঝানো হয়। গর্গ চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, একটি সংস্থা, যেটি বাংলাতেই ব্যবসা করে, বাংলা থেকেই টাকা রোজগার করে, সেখানে বাঙালি প্রার্থীকে নেওয়া হবে না এই ধরনের মানসিকতা জন্মাল কোত্থেকে? গর্গর ফোন কেটে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন- বাংলায় এত অবাঙালি প্রার্থী কেন তৃণমূলের?
আরও পড়ুন-বাংলা ভাষা বাঁচাতে বাংলাপক্ষ আদৌ প্রয়োজনীয়?
এর পরে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে বহু বহু স্তরে মার্লিনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখাতে থাকেন মানুষ। বিষয়টা অন্যদিকে যাচ্ছে দেখে হাল ধরার চেষ্টা করে মালিকপক্ষ। মার্লিন গোষ্ঠীর সিইও সাকেত মোহতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ইনস্ক্রিপ্ট। তিনি বলেছেন,
"আমরা যেটুকু করেছি বাঙালিরা আমাদের সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়েছে বলেই করতে পেরেছি৷ আমরা সব ধরনের বাঙালির জন্য ফ্ল্যাট বানাই। আপনি একটু শহরাঞ্চলে গেলে দেখতে পাবেন, কুড়ি লাখ-পঁচিশ লাখ টাকাতেও ফ্ল্যাট দিয়েছি আমরা। আসলে কলকাতায় ভালো মারোয়াড়ি বলিয়ে-কইয়ে খুব বেশি পাওয়া যায় না। আমরা তেমন কাউকে খুঁজছিলাম। কিন্তু এই বিজ্ঞাপনে আমাদের অধঃস্তন কথাটা গুছিয়ে বলতে পারেনি। বরং একটা ভুল বার্তা গিয়েছে। তবে আবারও বলছি, এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কাউকে আহত করতে বা বাঙালিবিদ্বেষ থেকে এই কাজ করা হয়নি আমাদের তরফে৷"
কেন এই জাতীয় বিজ্ঞাপন তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মার্লিন গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় ইনস্ক্রিপ্টকে বলেন, হিন্দু-মুসলিম, বাঙালি-অবাঙালি জাতীয় বৈরিতা বা বিভাজন নেই মার্লিনে। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে তাদের অফিস। তারা নিয়োগের সময় বা ফ্ল্যাট বিক্রির সময় ধর্ম, জাতপাত দেখেন না। অনির্বাণের ব্যাখ্যা, এক্ষেত্রে যে বিজ্ঞাপনটি প্রকাশিত হয়েছে তার বয়ান নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। ইনস্ক্রিপ্টকে অনির্বাণ বলেন,
"আসলে আমরা বলতে চেয়েছিলাম, বাংলা ঘেঁষা উচ্চারণে যারা হিন্দি বলেন তেমন বাঙালি কর্মী আমরা চাই না। চোস্ত হিন্দি বলিয়ে দরকার। কিন্তু যেভাবে তা বললে আক্ষরিক অর্থে বোঝানো যেত তা 'নন-বেঙ্গলি প্রেফারড' বলে বোঝানো যাচ্ছে না। এখানে মানবসম্পদ বিভাগের তরফে ভুল হয়ে গিয়েছে। আমরা দুর্গাপুজো প্রচার করি বিভিন্ন আবাসনে। বাঙালির সংস্কৃতি সম্পর্কে আমরা অবগত। আমাদের জনসংযোগ আধিকারিক নিজে একজন বাঙালি। সেলস হেড বাঙালি, সংস্থায় বহু বাঙালি কর্মচারী আছে। আমি নিজেও বাঙালি। কাজেই বাঙালি-অবাঙালি বৈরিতা তৈরি করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না।"
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইডি দাবি করে, 'কালীঘাটের কাকু' অর্থাৎ সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের মাধ্যমে মার্লিন গ্রুপে বিনিয়োগ করা হয়। এই ঘটনার রেশ কেটে গিয়েছে, নতুন করে বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে এই বিজ্ঞাপন বিতর্ক। তা তড়িঘড়ি সামলাতে বিজ্ঞপ্তি জারি করে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে মার্লিন সংস্থা। সংস্থা এমন বিজ্ঞাপন তৈরি ও তা পোস্ট করার দায় চাপিয়েছে একজন অধঃস্তন কর্মচারীর উপর। পোস্ট প্রত্যাহার করেছে তারা। লিখেছে, "অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ক্ষমাপ্রার্থী। বিজ্ঞাপনে ভুলভাবে বলা হয়েছে যে শুধুমাত্র অবাঙালি প্রার্থী প্রয়োজন ছিল, এটি একেবারেই অনিচ্ছাকৃত ছিল।"