নেতানিয়াহু ট্রাম্পের নাগালের বাইরে! প্রমাণ ইরান আক্রমণ
Israel-Iran tensions: ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি চেয়ে বিবৃতি দেন দিন কয়েক আগে। পাশাপাশি ইরানের পারমানবিক নিস্ক্রিয়তা বিষয়ে কথাবার্তাতেও নামতে দেখা যায় তাঁকে, কিন্তু এই হামলা তাঁকে কিছুটা ব্যাকফুটেই ঠেলে দিল।
আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। শুক্রবার ভোররাতে ইজরায়েল হামলা চালাল ইরানে। ইজরায়েলের পাখির চোখ ছিল ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটি, সামরিক ঘাঁটি। সেইসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বেছে বেছে টার্গেট করা হয় এই হামলায়। ইজরায়ালের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে চলেছে, তাই এই হামলা জরুরি ছিল। কিন্তু প্রত্যাঘাতের বার্তা দিতে শুরু করেছে তেহরান। ফলে এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করেছে। একই সঙ্গে পরিষ্কার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা, সমস্ত কূটনৈতিক প্রচেষ্টাই বিশ বাঁও জলে চলে গিয়েছে।
শুক্রবার ভোরে ২০০টি যুদ্ধবিমান নিয়ে ইরানের ১০০টিরও বেশি টার্গেটে হামলা চালায় ইজরায়েল। তার মধ্যে ছিল ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্র। এই কেন্দ্র ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ বলে খবর। নেতানিয়াহুর দাবি, ইরানের কাছে নটি পারমাণবিক বোমা তৈরির মতো উপাদান রয়েছে এবং তারা অস্ত্র তৈরির দিকে এগোচ্ছে। হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের বিমান বাহিনীর কমান্ডার আমির আলি হাজিজাদেহ, সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল মহম্মদ বাগেরি-সহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক নেতা ও বিজ্ঞানীরা নিহত হয়েছেন। নেতানিয়াহু বলেছেন, এই অভিযান চলবে। ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে একটি কূটনৈতিক চুক্তির চেষ্টা করছিলেন। ট্রাম্প নরমে-গরমে বার্তা দিচ্ছিলেন যাতে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বন্ধ রাখে। পাশাপাশি সোমবার তিনি নেতানিয়াহুকে ফোনে হামলা না করার অনুরোধ করেছিলেন বলেও খবর। কিন্তু বুধবার থেকে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন দূতাবাস ও ঘাঁটি থেকে কর্মীদের সরিয়ে নিতে শুরু করেন। হামলার পর মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, এই হামলা ইজরায়েলের একতরফা সিদ্ধান্ত ছিল। আবার একটি ইজরায়েলি টিভির খবরে বলা হয়েছে, হামলাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে করা হয়েছে। ট্রাম্প বলছেন, তিনি যুদ্ধ চান না, তবে এই হামলা ইরানকে চুক্তিতে রাজি করতে পারে, আবার তা ব্যর্থও হতে পারে। অর্থাৎ পরিষ্কার এই পরিস্থিতিতে দৌত্যের ক্ষমতা ট্রাম্পের নেই, অন্যদের মতোই তিনি প্রত্যক্ষদর্শী। নেতানিয়াহুকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাই তাঁর নেই।
এই আবহে ইরান কিন্তু চুপ করে বসে থাকছে না। এই হামলাকে স্পষ্টতই যুদ্ধঘোষণা বলেছে তেহরান। প্রতিশোধের হুমকিও দেওয়া শুরু হয়েছে তেহরান প্রশাসনের তরফে। শুক্রবার ভোররাতে তেহরানে বিস্ফোরণে বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষ এই অপ্রত্যাশিত আক্রমণে অতি শঙ্কিত। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইজরায়েলের প্রধান সমর্থক হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর পরিণতির জন্য দায়ী থাকবে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, হামলাকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে তারা উপযুক্ত জবাব দেবে। উল্লেখ্য, ইরান ইতিমধ্যে এ বছর দুবার ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা চালিয়েছে, আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে এর পরের হামলাটি স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
ইউরোপের একটা বড় অংশ এই হামলাকে উদ্বেগজনক বলছে। সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে তাদের তরফে। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ বলেছেন, নেতানিয়াহু তাঁকে ফোনে হামলার কথা জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে জার্মানি কূটনৈতিকভাবে উত্তেজনা কমাতে কাজ করবে। ফ্রান্স ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির নিন্দা করেছে, একই সঙ্গে সবাইকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান আবার এই হামলাকে প্রকাশ্য উস্কানি বলে নিন্দা করেছেন। ক্রমশই পরিস্ফূট হবে, কে কোন অক্ষে অবস্থান করছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস লাগাতার গাজায় চলমান যুদ্ধ, ইজরায়েলের সঙ্গে ইরান-সমর্থিত হুথি ও হামাসের সংঘাত এই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়েছে। ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি চেয়ে বিবৃতি দেন দিন কয়েক আগে। পাশাপাশি ইরানের পারমানবিক নিস্ক্রিয়তা বিষয়ে কথাবার্তাতেও নামতে দেখা যায় তাঁকে, কিন্তু এই হামলা তাঁকে কিছুটা ব্যাকফুটেই ঠেলে দিল। ট্রাম্প সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেই ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি বাড়িয়েছে। আর এখন, ট্রাম্প কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ।
এই পরিস্থিততে ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করছে ইরান। আর আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলি শান্তি ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক চেষ্টা চালাচ্ছে। ট্রাম্প বলেছেন, ইরান যদি মার্কিন স্বার্থজড়িত কোনো স্থানে হামলা করে, তবে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নেতানিয়াহু আরও হামলার বার্তা দিয়েই রেখেছে। ফলে গোটা বিশ্ব তাকিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে। নতুন করে অশান্তি বাড়বে? প্রত্যাঘাত করবে ইরান? প্রশ্নে অপেক্ষমান গোটা বিশ্ব।