সংবিধান সদন : নতুন যে নামে পুরনো সংসদ ভবনকে চিনতে চলেছে দেশ

Sambidhan Sadan: শুধু সংবিধান সদন নামেই কি আটকে থাকবে সংবিধান অনুসরণ? নাকি সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা করবে শাসকদল?

M

বিশেষ অধিবেশনের প্রাক্কালেই নতুন সংসদ ভবনে প্রবেশ করেছেন সাংসদরা। নতুন সংসদ ভবন ঘিরে প্রস্তুতিও তুঙ্গে। এর মধ্যেই নতুন ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির।

কী বললেন প্রধানমন্ত্রী:

পুরনো সংসদ ভবনের গরিমায় যেন কোনও কালিমা না পড়ে। পুরনো সংসদ ভবন পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকবে, তা হতে পারে না। এমনটাই বলতে শোনা গেল মোদিকে। একইসাথে তিনি পুরনো সংসদ ভবনের নাম 'সংবিধান সদন' রাখার আবেদন জানান অন্যান্য সাংসদদের কাছে। পুরনো সংসদ ভবন থেকে এই শেষ ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, তাঁর শেষদিনের এই বক্তৃতায় উঠে এসেছে ৩৭০ ধারা এবং ৩৭৭ ধারা রদের নানা প্রসঙ্গ। বারবার উঠে এসেছে আত্মনির্ভরতার প্রসঙ্গও। নতুন ভবিষ্যতের প্রতীক হিসেবে নতুন সংসদ ভবনকে উল্লেখ করেছেন নরেন্দ্র মোদি।

আরও পড়ুন: সাংসদদের জন্য তাক লাগানো আসন! নতুন পার্লামেন্টে ঠিক কী কী রয়েছে?

পুরনো সংসদ ভবনের ইতিহাস:

১৯২৭ সালে পুরনো সংসদ ভবনের নির্মাণ করা হয়। তারপর থেকে দীর্ঘ প্রায় ১০০ বছর ধরে এখানে চলেছে সংসদ অধিবেশনের কাজ।

কী আছে নতুন সংসদ ভবনে:

মোট ৬ টি প্রবেশপথ আছে এই নতুন সংসদ ভবনে, যে ভবনের নাম পার্লামেন্ট হাউস অফ ইন্ডিয়া। প্রবেশপথগুলির নাম - গজ দ্বার, অশ্ব দ্বার, গরুড় দ্বার,মকর দ্বার, শার্দুল দ্বার, হংস দ্বার। প্রতিটি নামের ক্ষেত্রেই পুরাণের অনুষঙ্গ জড়িয়ে আছে। প্রশ্ন হল, সংবিধান রচনার এত বছর পরেও, ধর্মনিরপেক্ষ একটি দেশে, শুধুমাত্র পুরাণের অনুষঙ্গ টেনেই কেন প্রবেশপথের নামকরণ হল। প্রবেশাধিকার কি শুধুই ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতেই ক্রমশ সংকুচিত হতে থাকবে ভবিষ্যতে?

কেন নাম বদল:

এর আগে জি-২০ সম্মেলনের সময় ইন্ডিয়া বনাম ভারত নাম নির্বাচনের তরজা চলেছিল জোরকদমে। এবার পুরনো সংসদ ভবনের নাম সংবিধান সদন নাম হল কেন? সংবিধানের কতটুকু অনুসরণই বা করছে বর্তমানের কেন্দ্র সরকার? ভারতের নাম প্রসঙ্গেই আসা যাক। সংবিধানের প্রথম বাক্যটিই হল- " India, that is Bharat, shall be a union of state. "

ভারতের বিচারব্যবস্থার দিকে তাকালেও সেই একই চিত্র। ২০১৬ সালের মে মাসে, দেশের নাম ভারত করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। বিচারপতি টি.এস.ঠাকুর সেই জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে দেন। এবং এই বিষয়ে কোর্টের গুরুত্বপূর্ণ সময় অপচয় করার জন্য ভর্ৎসনা করেন। খারিজ করার যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছিল, যাঁর ইচ্ছে ভারত নামে ডাকার তিনি ডাকতে পারেন। যাঁরা ইন্ডিয়া নামে ডাকতে চান, তাঁদের সেই সুযোগ দিতে হবে। সংবিধানে এই দুই নামেরই উল্লেখ রয়েছে। বোঝা যায়, তখনও শাসকদলের তরফে কোনও বিশেষ নাম চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়ে যায়নি। পরে, ক্রমশই বদলে যেতে থাকে পরিস্থিতি। ২০২০ সালে দিল্লির এক ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টে ফের জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। সংবিধানের ১ নং ধারার বদল চেয়ে তিনি ইন্ডিয়া নাম বাতিলের পরামর্শ দেন। তাঁর যুক্তি ছিল, ইন্ডিয়া নাম বাতিলের মধ্যে দিয়ে পূর্বপুরুষদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হবে। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বদেশচেতনা প্রকট হবে। যদিও এই মামলাও খারিজ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: নতুন পার্লামেন্ট গড়তে ৮৩৬ কোটি! পুরনো সংসদ ভবন তৈরি হয়েছিল কত টাকায়?

যদি বর্তমানে, ভারত নামটিই শুধুমাত্র ব্যবহার করতে চাওয়া হয়, সেই ক্ষেত্রে সংবিধানে সংশোধন ঘটাতে হবে। কোন পথে হাঁটছে কেন্দ্র সরকার?

শুধু সংবিধান সদন নামেই কি আটকে থাকবে সংবিধান অনুসরণের প্রমাণ? নাকি সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা করবে শাসকদল? সেইদিকে তাকিয়ে গোটা দেশ।

More Articles