চিকিৎসাক্ষেত্রেও গুরুত্ব রয়েছে অ্যাটোসেকেন্ড পালসের।
পরমাণুর অন্তরে কখন কী করছে ইলেকট্রন? কল্পনাকে বাস্তব করে নোবেলজয়ী ত্রয়ী
Nobel Prize in Physics 2023 : এ যেন পরমাণুর ভেতরে প্রবেশ করার মতো অভিজ্ঞতা।
২০২৩ সালে পদার্থবিদ্যায় যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেলেন ডঃ পিয়ার আগোস্তিনি, ডঃ ফেরেন্স ক্রাওস এবং ডঃ অ্যান লিয়ের। তাঁরাই প্রথম অ্যাটোসেকেন্ড পালস তৈরি করেছেন। শুধু তাই নয়, অ্যাটোসেকেন্ড পালসের সাহায্যে কোনও পরমাণুর ভেতর ইলেকট্রন কণার অবস্থান, তার নড়াচড়ার
গতিও পরীক্ষা করে দেখেছেন তাঁরা। সেই গবেষণার জন্যেই দ্য রয়াল সুইডিশ আকাডেমি অফ সায়েন্স চলতি বছর এই তিন বিজ্ঞানীর হাতে নোবেল পুরস্কার তুলে দিচ্ছে।
ফরাসি-মার্কিন পদার্থবিদ ডঃ পিয়ার আগোস্তিনি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির এমেরিটাস প্রফেসর। ডঃ ফেরেন্স ক্রাওস হাঙ্গেরিয়-অস্ট্রিয়ান তাত্ত্বিক পদার্থবিদ। ২০০৩ সাল থেকে জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অফ কোয়ান্টাম অপটিক্সে ডিরেক্টর পদে রয়েছেন তিনি।
এর পাশাপাশি ২০০৪ সাল থেকে তিনি জার্মানির লুডউইক ম্যাক্সিমিলিয়ান ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনার সঙ্গেও যুক্ত। ফরাসি-সুইডিয় পদার্থবিজ্ঞানী ডঃ অ্যান লিয়ের বর্তমানে লুন্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক এবং অধ্যাপক। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই পরমাণুর উপর লেজার রশ্মির প্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করছেন। ২০০৪ সাল থেকে দ্য রয়াল সুইডিশ আকাডেমি অফ সায়েন্সের সদস্যপদে রয়েছেন তিনি। অ্যাটোসেকেন্ড পালস নিয়ে মূল গবেষণা তাঁরা একজোটে এই লুন্ড ইউনিভার্সিটিতেই করেছিলেন।
আরও পড়ুন- বিতাড়িত হয়েছিলেন কর্মক্ষেত্র থেকে, যে আবিষ্কার নোবেল এনে দিল এই বিজ্ঞানীকে
অ্যাটোসেকেন্ড আসলে কী? সহজভাবে বোঝানো যাক। ধরা যাক, আমাদের হৃদস্পন্দন হতে এক সেকেন্ড সময় লাগে। সেই এক সেকেন্ডকে আপনি এক হাজার দিয়ে ভাগ করলেন। যে সংখ্যাটা পাওয়া গেল তাকে আপনি আবার ভাগ করলেন এক হাজার দিয়ে। এইভাবে পাঁচবার এক হাজার দিয়ে ভাগ করলে, যে সংখ্যাটা শেষমেশ পড়ে রইল, সেই সময়টা লাগে একটি পরমাণুর নড়াচড়া করতে। আবার এই সংখ্যাটাকে যখন আরও একবার হাজার দিয়ে ভাগ করেন, সেই সংখ্যাটাকে বলে অ্যাটোসেকেন্ড।
এই আবিষ্কারের কী গুরুত্ব? পরমাণুর নড়াচড়ার সময় জেনে কী হবে? ধরা যাক কোনও পরমাণুর উপর এই অ্যাটোসেকেন্ড পালস নিক্ষেপ করে দেখা হলো। এই পালস সহজেই জানিয়ে দেবে কোন ইলেকট্রন কণা, কোন কক্ষে রয়েছে। সেই ইলেকট্রন কণা, কক্ষের সঙ্গে খুব আষ্টেপৃষ্টে রয়েছে, না কি হালকা মৃদুমন্দ ছন্দে কক্ষে ঘোরাফেরা করছে, তাও জানা যাবে।
ভেবে দেখলে অবাকই লাগে, এতদিন স্কুলপাঠ্যেই এসব পড়া। ইলেকট্রনের দুনিয়াকে আরও ভালো করে বুঝতে পারার সুযোগ বাড়ছে ক্রমেই। এ যেন পরমাণুর ভেতরে প্রবেশ করার মতো অভিজ্ঞতা। যা এতদিন, স্কুলের বই মারফৎ কেবল কল্পনাই করে এসেছে মানুষ, তা বাস্তব হতে চলেছে। এই আবিষ্কার
বিজ্ঞানের এক অজানা জগত সাধারণ বিজ্ঞান-অনুসন্ধিৎসুদের সামনে খুলে দিচ্ছে। খুলে দিচ্ছে বিজ্ঞানের এক নতুন বিষয়ের দরজা, সেই বিষয়কে আমরা অ্যাটোকেমিস্ট্রিও বলতে পারি। এই অ্যাটোকেমিস্ট্রিই জানান দেবে, পরমাণুর ভেতরে থাকা ইলেকট্রনগুলি কী করছে। তারা শান্ত অবস্থায় আছে, না কি
অশান্ত হয়ে ছুটোছুটি করছে পরমাণুর ভেতর।
আরও পড়ুন- পুরস্কারের লজ্জা! নোবেল পায়নি জগদীশ বসু, মেঘনাদ সাহাদের
অ্যাটোসেকেন্ড পালসের সাহায্যে সিলিকনের মতো ডাই-ইলেক্ট্রিক মেটেরিয়ালকে ইন্সুলেটর থেকে কন্ডাক্টরে রূপান্তর করা যাবে সহজেই। এক ফেমটোসেকেন্ডেই ডাই-ইলেক্ট্রিক মেটেরিয়ালের তড়িৎপরিবাহী ক্ষমতা প্রায় আঠেরো গুণ বাড়িয়ে দেবে এই পালস। ফলে অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র তৈরিতে কাজে লাগানো যেতে পারে এই আবিষ্কার।
এখানেই এই তিন বিজ্ঞানীর কালজয়ী আবিষ্কারের উপকারিতা শেষ নয়। চিকিৎসাক্ষেত্রেও গুরুত্ব রয়েছে অ্যাটোসেকেন্ড পালসের। কোশে বা রক্তে সামান্য অস্বাভাবিকতা থাকলেই, সঙ্গে সঙ্গে জানান দেবে অ্যাটোসেকেন্ড পালস। ক্যান্সারের মতো রোগে যেখানে রোগ ধরা পড়তে পড়তেই অনেকটা সময়
চলে যায়, সেখানে একদম শুরুর ধাপেই ক্যান্সার ধরা পড়লে রোগীকে বাঁচানোর সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যায়। ক্যান্সার নির্ণয়েও ব্যবহার করা যেতে পারে অ্যাটোসেকেন্ড পালসকে।