শুধু জরিমানা নয়, বাধা পড়বে এই ২২ টি সরকারি কাজও, কেন তড়িঘড়ি লিংক করাবেন প্যান-আধার?

Pan Aadhar Link : আধার কার্ড-প্যান কার্ড লিংক না হলে এই ২২ টি সরকারি সুবিধা পাবেন না! জেনে নিন কী কী?

রোজই একটু একটু করে কমছে সময়সীমা, হাতে মাত্র দিন দশেক। কার্যত দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আম আদমির। ৩১ মার্চ-এর মধ্যেই প্যান কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের লিংক করানো না হলে হতে পারে সমূহ বিপদ। গত বছরই ছিল ডেডলাইন। যদিও সেই ডেডলাইন মেনে কিছুই হয়নি। সরকার বাধ্য হয়েছিল এক বছর সময়সীমা বাড়িয়ে দিতে। তবে আগে এর জন্য কোনও জরিমানা দিতে হতো না। এখন লিংক করতে গেলেই কার্ড পিছু দিতে হচ্ছে ১০০০ টাকা করে লেট ফাইন। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে আর জানানো হয়েছে যে, ৩১ মার্চের মধ্যে এই কাজ সম্পূর্ণ না করলে প্যান কার্ড তো নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবেই, পাশাপাশি পরবর্তীতে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা লাগতে পারে।

লিংক এবং লাইন জীবনের গতিপথে এ যেন দস্তুর মতো হয়ে ঠেকেছে বর্তমানে। এদিক থেকে ওদিক হলেই মোটা অঙ্কের জরিমানার ফতোয়া। এক অদ্ভুত ভয়েই ছুটছে মানুষ। একটার পর একটা নিয়মের বেড়াজালে ‘লিংক’ করিয়ে নিচ্ছে নিজেদের। ব্যক্তি পরিচয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত একাধিক কার্ড, আর তার একটার সঙ্গে অপরটার লিংক করানো, এটাই মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকে লম্বা লাইন, সাইবার ক্যাফেগুলোয় উপচে পড়া ভিড়; যখন যেমন সরকারি ফতোয়া জারি হচ্ছে, তখন ঠিক তেমন করে নিজেদের লিংক করিয়ে নেওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছে আম আদমি। খবরের শিরোনামে এখন কেবল প্যান এবং আধার লিংকের প্রসঙ্গ। ইতিমধ্যে তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। দাবী উঠেছে সময়সীমা বাড়ানোর। যদিও এখনও অবধি সেই বিষয়ে কোনও নোটিশই দেওয়া হয়নি সরকারে তরফে। বরং বারবার সামনে আসছে এই কাজ না করা হলে কী কী সমস্যা হতে পারে সেই সমস্যার দিকগুলোই।

আরও পড়ুন - লাখ দুয়েক মানুষকে ছাড় সরকারের, প্যান আধার লিংক না করলেও জরিমানার ভয় নেই কাদের?

ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, আধার লিংক করানো না হয়ে থাকলে নিষ্ক্রিয় হতে যাবে প্যান কার্ড। কিন্তু জানেন কি শুধু এখানেই শেষ নয়, এর পাশাপাশি যেমন মোটা অঙ্কের জরিমানা রয়েছে তেমনি রয়েছে অজস্র সরকারি সুবিধা বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও। একটা দুটো নয়, প্রায় ২২টি সরকারি কাজ করতে পারবেন না বাতিল হয়ে যাওয়া প্যান কার্ড দিয়ে। জানেন সেগুলো কী কী?

১. কোনরকম ব্যাংকিং সংক্রান্ত খাতে সঞ্চয় বা বিনিয়োগ করতে পারবেন না। সমস্ত সরকারী প্রকল্পের টাকাও আটকে যাবে।

২. নতুন করে ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে চাইলে সেটিও সম্ভব হবে না। ভারতের যেকোনো সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে গেলে প্রয়োজন আধার এবং প্যান কার্ড। যেহেতু ৩১ মার্চের মধ্যে এই দুইয়ের মধ্যে লিংক করা না হলে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে প্যান কার্ড, ফলে সেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া প্যান কার্ড কোনও নতুন ব্যাংক একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে গ্রাহ্য হবে না।

৩. প্যান আধার লিংক না থাকলে মিউচুয়াল ফান্ডেও কোন রকম বিনিয়োগ করতে পারবেন না।

৪. এমনকি ইতিমধ্যেই থাকা ব্যাংক একাউন্টের পাসবুক আপডেট করার ক্ষেত্রেও অসুবিধার হতে পারে এবং ব্যালেন্স চেক সংক্রান্ত বিষয় ও সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন।

৫. কোনও ব্যাঙ্কে কোনও ফিক্সড ডিপোজিট করা থাকলে সেটিও অকেজো হয়ে যাবে।

৬. প্যান আধার লিংক ছাড়া শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে না

৭. নিজের নামে কোনরকম ট্রাস্ট বা এনজিও রেজিস্টার করতে পারবেন না।

৮. সম্পত্তি কেনা অথবা বিক্রি করার ক্ষেত্রে প্রভূত সমস্যা হবে প্যান কার্ড আধার কার্ডের সঙ্গে লিংক করা না থাকলে।

৯. নতুন করে ডিমাট একাউন্ট খুলতে পারবেন না।

১০. যারা বর্তমানে চাকরি করছেন ও পেনশন তুলছেন তাদের পেমেন্ট সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে এই বিষয়ে।

আরও পড়ুন - কী এমন ভয়? কেন তড়িঘড়ি লিংক করাবেন প্যান এবং আধার কার্ড?

১১. যেকোনও ধরনের লোন পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।

১২. এই লিঙ্ক প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ না হলে আপনার বৈধ প্যান কার্ড থাকবে না। আর তার ফলে নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় আপনার ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে না। ফলে এই বাজারে চাকরি পেয়েও তা হাতছাড়া হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে। এটা সরকারি-বেসরকারি দুই ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে।

১৩. যেকোনও ধরনের বিমার প্রিমিয়াম জমা দেওয়া বা ক্লেম করে তার অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে।

১৪. অনলাইন জালিয়াতি হলে অথবা কোনও লেনদেন অসফল হলে সেই টাকাও ফেরত পাওয়া যাবে না।

১৫. ব্যাঙ্কের ড্রাফট এবং চেক সংক্রান্ত যে কোনো কাজে অসুবিধে হবে।

১৬. একসঙ্গে ৫০,০০০ টাকা বা তার বেশি কোনও টাকা দেওয়া বা নেওয়া কিছুই করতে পারবেন ব্যাংকের সাহায্যে। এমনকী ব্যাংক থেকে টাকা তুলতেও পারবেন না।

১৭. প্যান আধার লিংক ছাড়া ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার কেওয়াইসি করতে সমস্যা হবে।

১৮. গুগল পে, ফোন পে, আমাজন পে ইত্যাদি অনলাইন অ্যাপের সাহায্যে টাকা আদান প্রদানের ক্ষেত্রেই সমস্যা হতে পারে।

১৯. সক্রিয় প্যান কার্ড না থাকলে নতুন ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

২০. প্যান-আধার লিঙ্ক না হলে ব্যাঙ্ক সহ সমস্ত আর্থিক সংস্থার কেওয়াইসি প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ হবে না। ফলে সেখানেও আপনার অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হবে।

২১. নিয়মিত যেসব মাসিক ভাতা পান, সেগুলোও আটকে যেতে পারে। যেমন বার্ধক্য ভাতা, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, আবাস যোজনার মত সামাজিক প্রকল্পের অর্থ পাওয়াও বন্ধ হয়ে যাবে।

২২. নতুন সম্পত্তি ক্রয়ের পাশাপাশি পুরনো গাড়ি বা বাড়ি বিক্রি করতে গেলেও সমস্যা হবে।

তবে ৩১শে মার্চ- এর মধ্যে প্যান এবং আধার কার্ড লিঙ্ক করিয়ে নিলে উপরিউক্ত কোনো সমস্যারই সম্মুখীন হতে হবে না। এখন ঘরে বসেই করে নেওয়া যাবে এই কাজ। ভারতীয় আয়কর বিভাগের ইনকাম e-filing পোর্টাল অর্থাৎ incometaxindiaefilling.gov.in ওয়েবসাইট থেকে ফর্ম ফিলাপ করে আবেদন করতে হবে। আবেদন পদ্ধতি সম্পূর্ণ হওয়ার পর পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগছে লিংক পদ্ধতি সম্পন্ন হতে। এছাড়াও SMS এর মাধ্যমেও লিংক করা যাচ্ছে Pan-Aadhaar।

More Articles