মিমি, নুসরত এমনকী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও! সংসদে সবচেয়ে কম উপস্থিত এই 'তারকা'রা

Nusrat Jahan - Mimi Chakraborty: সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি ১৩%। তিনি মাত্র ২টি বিতর্কে অংশ নিয়েছেন।

একজন অভিনেতা পরবর্তী জীবনে আরও কী হতে চান? নিজেকে কোন দিকে আবিষ্কার করতে চান? আরও কঠিন চরিত্র, নিজের ঠিক বিপরীত চরিত্র, আরও দুঃসাহসী কোনও চ্যালেঞ্জ! সেসব দিকে না গিয়ে এখন অনেক অভিনেতাই চলে আসেন রাজনীতির আস্তাবলে। অভিনয় জীবনের সমাপ্তির দিকে বা কিছু ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই রাজনৈতিক নেতা হয়ে ওঠার দিকে এগোচ্ছেন নায়ক-নায়িকা-অভিনেতারা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বিধায়ক বা সাংসদ হয়ে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হওয়ার পর খুব কমই ভালো কাজ করতে পারেন এই অভিনেতারা। জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে ভোট পাওয়া তারকারা নির্বাচিত হয়ে প্রায় কিছুই করতে পারে না।

এর সবচেয়ে জনপ্রিয় উদাহরণ হলো, বলিউড অভিনেতা ধর্মেন্দ্র এবং গোবিন্দা। তাঁরা দু'জনই ২০০৪ সালে সাংসদ হন এবং কিছুদিনের মধ্যেই রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসেন। কম উপস্থিতি, কোনও রকম প্রশ্ন না করা এবং জনগণের সমস্যায় অনাগ্রহ তাঁদের রাজনীতি থেকে চিরতরে বিদায় নিতে বাধ্য করে।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় বেশ কয়েকজন তারকা সংসদে এসেছেন কিন্তু, তিন বছর ধরে তাঁরা করলেনটা কী? 'সেলেব সাংসদ' তকমা নিয়ে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের উপস্থিতি ঠিকঠাক। আর অনেকে গুরুত্বপূর্ণ সংসদ অধিবেশনেও উপস্থিত হতে ব্যর্থ হয়েছেন।

আরও পড়ুন- অভিষেকের সম্পত্তির পরিমাণ ঠিক কত

সানি দেওল

 অজয় সিং ধর্মেন্দ্র দেওল, সবাই চেনেন সানি দেওল নামেই। গত তিন বছরে এই সাংসদের ভূমিকা অবাক করার মতো! বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন সানি দেওল। গুরুদাসপুর আসন থেকে বিজেপির টিকিটে কংগ্রেসের সুনীল জাখরের (যিনি নিজেই এখন বিজেপিতে) বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন সানি দেওল। সংসদের শেষ তিনটি অধিবেশনে তাঁর উপস্থিতি শূন্য।

নয়াদিল্লির একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরএস-এর তথ্য অনুসারে, সানি দেওলের লোকসভায় এখনও পর্যন্ত উপস্থিতি ২১%। গত তিন বছরে, ৬৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ কোনও বিতর্কে অংশ নেননি এবং ২০২০ সালের মার্চ মাসে নদী থেকে অবৈধভাবে বালি তোলা নিয়ে শুধুমাত্র একটি প্রশ্ন করেছেন।

সানি দেওল অবশ্য তাঁর ব্লকবাস্টার সিনেমা গদরের সিক্যুয়েলের শুটিংয়ে ব্যস্ত, যা ২০২৩ সালের অগাস্টেই মুক্তি পাওয়ার কথা। সুতরাং, ধরে নেওয়াই যায় এই অভিনেতা-সাংসদ আরও দীর্ঘ সময়ই সংসদে অনুপস্থিত থাকবেন।

হংস রাজ হংস

 পঞ্জাবি এই গায়ক তাঁর প্রথম নির্বাচনে উত্তর-পশ্চিম দিল্লি থেকে বিজেপির টিকিটে জিতেছিলেন। লোকসভায় তাঁর উপস্থিতিও নগণ্য। ৬০ বছর বয়সী গায়ক-রাজনীতিবিদ তাঁর প্রথম দিনে অবশ্য কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। উর্দু কবিতার অংশ উদ্ধৃত করে সমস্ত সাংসদদের কাছ থেকে প্রশংসিত হয়েছিলেন।

কিন্তু এরপর আর সংসদে হংসরাজ হংসের কাব্যিক প্রতিভা মানুষ দেখতে পাননি। পিআরএস লেজিসলেটিভ রিসার্চ অনুসারে, হংস রাজ হংসের গত তিন বছরে লোকসভায় উপস্থিতি ৪১%। পঞ্জাবি এই গায়ক ২০১৯ সালে মাত্র তিনটি বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন৷ তিনি লোকসভায় ১৫টি প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন এবং প্রায় সবগুলিই ওই ২০১৯ সালে এবং একটি মাত্র প্রশ্ন করেছিলেন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে৷ তারপর থেকে হংস রাজ হংস চুপ! ২০২২ সালে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে, হংস রাজ হংসের উপস্থিতি ছিল ৩১% ছিল।

আরও পড়ুন- ‘অটল মুখোশ মাত্র!’ এক চিঠিতেই বিজেপির ‘কম্পিউটার ম্যানে’র জীবন শেষ করেছিলেন বাজপেয়ী

নুসরত জাহান

নুসরত এই বঙ্গে জনগণের উন্নয়নের কোন কাজটা করবেন জানতে অপেক্ষা করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গবাসীরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বসিরহাট কেন্দ্র থেকে লোকসভা প্রার্থী হিসাবে নুসরতের নাম ঘোষণা করে সব্বাইকে চমকে দিয়েছিলেন। নুসরাত শুধু বসিরহাট আসনটিই জেতেননি, রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোট ব্যবধানে জিতেছিলেন। তারপর? সংসদে নিয়মিত উপস্থিতি পালন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া নুসরাত কতবার গেলেন সেখানে? ২০১৯ সালের জুন থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত তাঁর উপস্থিতি ২৮%।

বর্তমানে, পিআরএস অনুযায়ী নুসরতের উপস্থিতি ২২% যা জাতীয় গড় ৭৯% এবং রাজ্য গড় ৬৬%-এর কতখানি নীচে বলার অপেক্ষা রাখে না। নুসরত কোনও প্রাইভেট মেম্বার বিল পেশ করেননি এবং মাত্র ১১টি আলোচনায় অংশ নেন।

মিমি চক্রবর্তী

২০১৯ সালে যাদবপুর আসন থেকে অপ্রত্যাশিত জয় পাওয়া আরেক অভিনেত্রী মিমিও নুসরত জাহানের বন্ধু, অনুপস্থিতির ক্ষেত্রেও হরিহর আত্মা! ৩৩ বছর বয়সী এই টলিউড অভিনেত্রীকে শুরু থেকেই সংসদের নিম্নকক্ষে দেখাই যায় না।

পিআরএস থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, মিমির লোকসভায় উপস্থিতি ২৪%। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি ১৩%। তিনি মাত্র ২টি বিতর্কে অংশ নিয়েছেন।

তারকাদের মধ্যে, কিরণ খের, গৌতম গম্ভীর, মনোজ তিওয়ারি এবং রবি কিষাণের সংসদে প্রায় ৬০% এর বেশি উপস্থিতি রয়েছে।

 

More Articles