দিনে একটা কলা হয়ে উঠবে ক্যানসার থেকে হৃদরোগের রক্ষাকবচ, বলছে গবেষণা

পটাশিয়াম-সমৃদ্ধ কলা খেলে কমবে রক্তচাপ এবং ক্যানসারের ঝুঁকি। এমনকী, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও কমিয়ে দিতে পারে কলা।

 

বিশ্বজুড়ে হু হু করে বাড়ছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা। একাধিক সমীক্ষার রিপোর্টও বলছে ভারতে অল্পবয়সিদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হার্ট অ্যাটাক। 'দ্য গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ' নামক সংস্থার পরিসংখ্যানও বলছে, ভারতে প্রতি দশ হাজার মৃতর মধ্যে ২৭২ জনের মৃত্যুর জন্য দায়ী হার্ট অ্যাটাক।এই সংখ্যা বিশ্বে গড় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তুলনায় বেশি। ২০১৭ সালে ভারতের ২.৬৩ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। অথচ, সমস্ত পুষ্টি উপাদান যথাযথভাবে গ্রহণ করলে এবং জীবনযাপন করলেই হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকখানি কমানো সম্ভব। তেমনই একটি ফল হলো কলা। পাঠকরা নিশ্চয় অবাক হচ্ছেন, আর ভাবছেন যে, কলা খেয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব! হ্যাঁ নতুন এক গবেষণায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে।

বিশ্বের বহুল জনপ্রিয় ও গৃহীত ফলগুলির মধ্যে অন্যতম কলা। মানুষের স্বাস্থ্যরক্ষার্থে যে যে পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন, তার সবই রয়েছে কলাতে। ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফাইবার, প্রোটিন এবং ভিটামিন বি-৬ এবং ভিটামিন সি রয়েছে কলায়। পটাশিয়াম-সমৃদ্ধ কলা খেলে কমবে রক্তচাপ এবং ক্যানসারের ঝুঁকি। এমনকী, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও কমিয়ে দিতে পারে কলা। প্রতিটি কলাতে ৪৫৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম রয়েছে আর হৃৎস্পন্দনে পটাশিয়ামের গুরুত্ব অপরিসীম। পাশাপাশি পটাশিয়াম স্নায়ুর ও পেশির কার্যকারিতাকে উন্নত করে। কিডনিতে রক্ত পরিশ্রুত করতে এবং প্রতিটি কোশে পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দিয়ে শরীরে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে।

নতুন গবেষণায় কী বলছে ?
নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, চিকিৎসকরা রোগীর দেহের পটাশিয়ামের মাত্রা পরীক্ষা করে হৃদযন্ত্রের বেশ কিছু অসুখের চিকিৎসা করতে পারবেন। গবেষকরা ইঁদুরের দেহে এই পরীক্ষা করেছেন। পরীক্ষায় দেখা গেছে, কম পটাশিয়ামযুক্ত খাদ্যগ্রহণের কারণে ধমনিতে ক্যালসিফিকেশন এবং মহাধমনি কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হার্ট অ্যাটাকের পূর্বেও সাধারণত মহাধমনি শক্ত হয়ে ওঠে, যা থেকেই বড় বিপদের পূর্বাভাস পাওয়া যায়। গবেষকরা জানিয়েছেন, যে ইঁদুরটিকে কম পটাশিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়ানো হয়েছে, তার ক্ষেত্রেই এই লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। অপর পক্ষে অন্য আরেকটি ইঁদুর সঠিক পরিমাণে পটাশিয়ামযুক্ত খাদ্যগ্রহণের কারণে মহাধমনিতে কোনও সমস্যা লক্ষ করা যায়নি।

আরও পড়ুন: অবসাদ আসলে বড় বিপদের সংকেত! সতর্ক হওয়ার সময় এখনই, বলছে গবেষণা

কলা হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে সাহায্য করে
নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে যে, নিয়মিত কলা খেলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যেতে পারে। কলা এবং অন্যান্য পটাশিয়াম-সমৃদ্ধ খাবারগুলি ধমনিকে শক্ত হয়ে যাওয়া এবং শুরু হয়ে যাওয়া থেকে প্রতিরোধ করতে পারে যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা হ্রাস পায়। একটি কলা দৈনিক পটাশিয়ামের প্রায় ১০% চাহিদা পূরণ করতে পারে। সমীক্ষা করে দেখা যায়, যাঁদের খাদ্যতালিকায় পটাশিয়ামের পরিমাণ সবচেয়ে কম, তাঁদের ক্ষেত্রে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি অন্যান্যদের তুলনায় প্রায় ৫০% বেশি।

আমরা সকলেই জানি অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের কারণে মানবদেহে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং ফলস্বরূপ হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিন্তু গবেষণা বলছে, লবণের নেতিবাচক প্রভাব কমাতে পারে কলা এবং তাতে হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বজায় থাকে। তবে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি কার্যকর বলেই প্রমাণিত হয়েছে গবেষণায়। প্রত্যেক চিকিৎসকই প্রতিদিন সীমিত মাত্রায় লবণ গ্রহণের পরামর্শ দেন। তবে বর্তমানে গৃহীত খাবারের বেশিরভাগই প্রক্রিয়াজাত খাবার হওয়ায় সীমিত মাত্রায় সোডিয়াম গ্রহণ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। পটাশিয়াম-সমৃদ্ধ কলা প্রস্রাবে সোডিয়ামের নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে।

কলার অন্যান্য উপকারিতা
হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি এই ফল গ্রহণের একাধিক উপকারিতা রয়েছে। একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যকে সার্বিকভাবে উন্নত করতে সক্ষম কলা।

উন্নত স্মৃতিশক্তি ও মেজাজ বজায় রাখে
কলায় থাকা ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। পাশাপাশি কোনও কিছু শেখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।

হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়
কলায় প্রচুর পরিমাণে জল ও ফাইবার থাকে যা হজমশক্তি উন্নত করতে সক্ষম। একটি মাঝারি আকারের কলা একজন ব্যক্তির দৈনিক প্রয়োজনীয় ফাইবারের প্রায় ১০% সরবরাহ করে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাদ্যগ্রহণের ফলে অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় থাকে, ফলে গ্যাস, পেটে ব্যথার মতো সমস্যাগুলি কমে যায়।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে
কলা এবং অন্যান্য ফাইবারযুক্ত ফল রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে যে, উচ্চ ফাইবার রয়েছে, এমন খাবার টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সক্ষম। তবে ডায়াবেটিস রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের পরিমিত পরিমাণে কলা খাওয়া উচিত।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
পটাশিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার কার্ডিওভাসকুলার স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। ফলে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই আজই সোডিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে খাদ্যতালিকায় কলা যোগ করুন।

ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস করে
গবেষকদের মতে, কলায় উপস্থিত লেকটিন প্রোটিনের কারণে লিউকেমিয়া কোশের বৃদ্ধি বাধা পায়। এক্ষেত্রে কলা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ফলে ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে যায়।

 

More Articles