ভারতের প্রায় ৬ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত, যে সমীক্ষা চিন্তা বাড়াচ্ছে দেশের চিকিৎসকদের

Fungus Disease India : এবার করোনা নয়, আরও বেশকিছু রোগ চোখ রাঙাচ্ছে। আর সেই গান পয়েন্টের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারত।

২০২০ সাল। গোটা পৃথিবীতে আছড়ে পড়ল একটি ছোট্ট শব্দ – ‘করোনা’। সেই ঢেউইয়েয়াক্রান্ত হল ভারতও। আণুবীক্ষণিক এই ভাইরাস, আর তার জন্য কয়েক কোটি মানুষের জীবন নিয়ে টানাটানি শুরু হল। অনেকে দুর্বল শরীর নিয়েও বেঁচে রইলেন, অনেকে হার মানলেন। তারপর কেটে গিয়েছে অনেকগুলো দিন। এই মুহূর্তে করোনার সেই বীভৎসতা এখন নেই। চিনের নতুন কোভিড ভ্যারিয়েন্ট ভয় দেখালেও, আগের ভয়াবহ পরিস্থিতি এখনও আসেনি। কিন্তু এবার করোনা নয়, আরও বেশকিছু রোগ চোখ রাঙাচ্ছে। আর সেই গান পয়েন্টের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারত।

ডেঙ্গু থেকে হাম, ২০২২ সাল বেশকিছু চেনা রোগের বাড়বাড়ন্তের সাক্ষী থাকল। ভারতের অনেক জায়গাতেই থাবা বসিয়েছিল এই দু’টি রোগ। এদিকে সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ‘পিকচার তো আভি শুরু হুয়ি হ্যায়।’ সম্প্রতি এইমস দিল্লি ও কলকাতা, ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কয়েকটি বড়ো প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা একজোট হয়ে একটি বিশেষ সমীক্ষা চালান। বিশ্বের মোট ৪০০টি রিপোর্ট ঘেঁটে এই বিশেষ সমীক্ষার ফল সামনে আনেন। মূলত ফোকাস ছিল ভারতের বিভিন্ন রোগ এবং তার ভবিষ্যৎ নিয়ে।

সেই সমীক্ষাতেই উঠে এল চাঞ্চল্যকর একটি তথ্য। করোনা বা সেরকম কোনও মারণ ভাইরাস নয়; ভারতের এই মুহূর্তে চিন্তার বিষয় ‘ছত্রাক’। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন সময় মানুষের মধ্যে ছত্রাকঘটিত রোগ দেখা যায়। অত্যন্ত পরিচিত বিষয় এটি। কিন্তু সাম্প্রতিক এই সমীক্ষায় বলা হচ্ছে, ভারতের জনসংখ্যার ৪.৪ শতাংশ মানুষ জটিল ছত্রাকঘটিত রোগে আক্রান্ত! সংখ্যার বিচারে প্রায় ৬ কোটি ভারতীয় এমন গান পয়েন্টের সামনে দাঁড়িয়ে। এই ৬ কোটির মধ্যে ১০ শতাংশ মানুষের দেহে আবার মারণ আকার নিয়েছে এই ছত্রাকঘটিত রোগগুলি। এমন পরিসংখ্যানই চিন্তায় ফেলেছে বিজ্ঞানীদের।

ছত্রাকঘটিত রোগের বিভিন্ন প্রকারভেদ ভারতে এমনিই দেখা যায়। সেটা অত্যন্ত স্বাভাবিক বলেই ধরে নেওয়া হয়। যেমন দেখা যায় টিনিয়া ক্যাপিটিসের ক্ষেত্রে। এটি চুলের ফাঙ্গাল ইনফেকশন। সাধারণত স্কুলে পড়া কিশোর কিশোরীদের চুলের তালুতে এই ছত্রাকঘটিত রোগ বাসা বাঁধে। কিংবা প্রজননের সময় মেয়েদের যোনিতেও ছত্রাকঘটিত একপ্রকার সামান্য ইনফেকশন দেখা যায়। মূলত ইস্টের কারণে এই রোগটি হয়। এরকমই বেশকিছু রোগ আছে, যেগুলি গোটা ভারতে হরদম দেখা যায়। এইমসের গবেষক ও চিকিৎসকরা এই মনোভাবকেই দায়ী করেছেন। তাঁরা বলছেন, অধিকাংশ ভারতীয়ের মতে সমস্ত ফাঙ্গাল ইনফেকশন, ছত্রাকঘটিত রোগ অত্যন্ত সাধারণ। কিন্তু এগুলোও যে মারণ আঘাত দিতে পারে, সেই সম্পর্কে এখনও আমরা অসচেতন।

উদাহরণ হিসেবে গবেষকরা তুলে ধরেছেন বেশকিছু ছত্রাকঘটিত রোগের কথা। ফুসফুস ও সাইনাসে ছত্রাকঘটিত রোগে ভারতে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ আক্রান্ত। অন্তত ৩৫ লক্ষ ভারতীয় ফুসফুসের ফাঙ্গাস অ্যালার্জিতে আক্রান্ত। এই দুটো রোগই সময় সময় প্রাণঘাতী চেহারা নেয়। সরাসরি ফুসফুস ও শ্বাসতত্নত্রে আঘাত করার ফলে শ্বাসকষ্টও শুরু হয়। ইদানিং করোনা ভাইরাসের আক্রমণের কারণে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটু হলেও দুর্বল হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে এই ফাঙ্গাল ইনফেকশন ও অ্যালার্জি যে আরও বড় ছাপ ফেলবে না, কে বলতে পারে?

এছাড়াও গবেষকরা বলেছেন, ভারতের প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের চোখেও ফাঙ্গাল ইনফেকশন দেখা যায়। যার ফলে অন্ধ হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। দিনের শেষে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও নষ্ট করে দেয় এই ছত্রাকগুলি। গবেষকদের সাবধানবাণী, এমন রোগগুলিকে দূরে সরিয়ে রাখা যাবে না। যত দিন যাবে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়বে। ফলে এই ধরণের রোগ আরও বাড়বে। হয়তো প্রাণঘাতীও হতে পারে। তাই এখন থেকেই সবার সাবধান হওয়া জরুরি।

More Articles