Khan Younis: খান ইউনিসে রাতারাতি বাস্তুচ্যুতির নির্দেশ! কী বলছে জাতিসংঘ?
Khan Younis: স্বাস্থ্য সংগঠনগুলি জানিয়েছে, ত্রাণশিবিরে ডায়রিয়াতে ভুগছেন প্রায় ৩৯ শতাংশে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খান ইউনিস এবং গাজা।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক বিভাগ (OCHA) বলেছে, ইজরায়েলি কর্তৃপক্ষ খান ইউনিসের দুটি এলাকায় রাতারাতি বাস্তুচ্যুতির নির্দেশ দিয়েছে। এখানে প্রায় ৮০,০০০ মানুষ বাস করতেন। ২ জুলাই জাতিসংঘ এই নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে। কী বলছে জাতিসংঘ?
বাস্তুচ্যুতির নির্দেশের পর থেকে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের জলাধার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে শহরের বিভিন্ন স্থানে জল সরবরাহের সমস্যা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। জল সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র- এই আল সাতার জলাধার।
ওসিএইচএ (OCHA) জানিয়েছে, গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ভূখণ্ডে বর্তমানে হয় বাস্তুচ্যুতির নির্দেশে দেওয়া রয়েছে অথবা সামরিক বাহিনীর দখলে। এতে নাগরিকরা ।
মার্চ মাসে ইজরায়েল অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি না মানার পর থেকে প্রায় ৭,১৪,০০০ ফিলিস্তিনবাসী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তার মধ্যে ২৯ জুন থেকে ৩০ জুন ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রায় ২৯,০০০ জনকে ওই এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়েছে। বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রগুলিতে ভিড় উপচে পড়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ জল, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার মতোও পরিস্থিতি নেই।
আরও পড়ুন- বিশ্বজুড়ে থাবা বসাচ্ছে খরা! কোটি কোটি মানুষ খাদ্যসঙ্কটে
স্বাস্থ্য সংগঠনগুলি জানিয়েছে, ত্রাণশিবিরে ডায়রিয়াতে ভুগছেন প্রায় ৩৯ শতাংশে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খান ইউনিস এবং গাজা। ঘনবসতিপূর্ণ আশ্রয়কেন্দ্র এবং পরিষ্কার জলের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন ফিলিস্তিন বাসী।
মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ইজরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ)-এর কার্যক্রম চালু হয় গাজায়৷ জিএইচএফ-এর পরিচালিত নতুন ত্রাণব্যবস্থায় খাবারের জন্য প্রায় প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ লাইন অপেক্ষা করেন৷ তাদের এই কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে৷ জাতিসংঘ অভিযোগ করেছে, খাবারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের করতে ইজরায়েলের এটি একটি পন্থা।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজায় ত্রাণ বিতরণের নতুন ব্যবস্থাটি ‘অনিরাপদ' এবং এই ব্যবস্থায় আরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে৷ গুতেরেস সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘মানুষ নিজের এবং তাদের পরিবারের খাবার জোগাড় করতে গিয়ে হত্যার শিকার হচ্ছেন৷ খাবারের সন্ধান কখনোই মৃত্যুদণ্ড হতে পারে না৷''
আরও পড়ুন- যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে মুনাফা লুটছে মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট?
গাজায় ইজরায়েল ও মার্কিন-সমর্থিত বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করা প্রাক্তন এক কর্মী বিবিসি-কে জানিয়েছেন, মেশিনগান দিয়ে ফিলিস্তিনিদের উপর গুলি চালানো হয়েছে। তাঁর কথায়, কয়েকজন নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে, শুধুমাত্র একটু ধীরে চলায় ওয়াচ টাওয়ার থেকে ইজরায়েল বাহিনী মেশিনগান দিয়ে গুলি চালায়। এই নিয়ে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফ-এর প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল বিবিসি। তারা জানায় অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে হামাসের হামলার পর এই সংঘর্ষ শুরু হয়। ওই দিন থেকে ইজরায়েল গাজায় নির্বিচার বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ৫৫ হাজারেরও বেশি সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশই শিশু। ইজরায়েলি সেনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে শিশুদের উপর সরাসরি হামলার পাশাপাশি খাদ্য ও চিকিৎসা পরিষেবায় বাধা দেওয়ার প্রমাণও পেয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এর আগে ২০২৪ সালে ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গাজার প্রতি ১০ ফিলিস্তিন শিশুর ৯ জনই ‘ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটে’ রয়েছে। ক্ষুধা, পিপাসা এবং মারাত্মক অপুষ্টির কারণে অনেক ফিলিস্তিন শিশু মারা গেছে। ওই বছরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, গাজার প্রতি ৫ শিশুর ৪ জনই প্রতি তিন দিনে অন্তত এক দিন পুরো দিন না খেয়ে থাকে। আর কত দিন চলবে এই নিসংসতা? সেই প্রশ্ন থাকছেই।