শুধু স্বাদে নয়, গুণেও ফলের রাজা তাল! ক্যানসার থেকে দৃষ্টিশক্তি সারিয়ে তুলতে রোজ খেতেই হবে

পাকা তালের ঘন নির্যাস থেকে তৈরি পিঠে, তালের ক্ষীর, বড়া, কেকের স্বাদ জিভে জল আনতে বাধ্য। তবে শুধু স্বাদ নয়, তালের গুণাগুণও রয়েছে অনেক।

সামনেই জন্মাষ্টমী। আর জন্মাষ্টমীর কথা মাথায় এলেই তালের বড়ার নাম উঠবেই। একসময় গ্রামবাংলার মেঠো পথে ভাদ্রমাস পরলেই তাল কোড়ানোর জন্য কচিকাঁচাদের হুলুস্থুল লেগে যেত। আমাদের দেশের পরিচিত ফলগুলির মধ্যে অন্যতম তাল। কচি তালের শাঁস খেতে ভারি সুস্বাদু। পাকা তালের ঘন নির্যাস থেকে তৈরি পিঠে, তালের ক্ষীর, বড়া, কেকের স্বাদ জিভে জল আনতে বাধ্য। তবে শুধু স্বাদ নয়, তালের গুণাগুণও রয়েছে অনেক।

কচি তালের শাঁসের পুষ্টিগুণ
১০০ গ্রাম কচি তালের শাঁসের ৯২.৩ শতাংশ জলীয় অংশ। এছাড়াও ক্যালোরি থাকে ২৯ গ্রাম, শর্করা ৬.৫ গ্রাম, ক্যালশিয়াম ৪৩ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১ মিলিগ্রাম। ভিটামিন সি, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন মানবদেহের জন্য ইত্যাদি প্রয়োজনীয় উপাদানও রয়েছে।

পাকা তালের পুষ্টিগুণ
পাকা তালের প্রতি ১০০ গ্রাম ঘন নির্যাসে কার্বোহাইড্রেট থাকে ৮৭ কিলোক্যালোরি, জলীয় অংশ ৭৭.৫ গ্রাম , ক্যালশিয়াম ২৭ গ্রাম, ফসফরাস ৩০ গ্রাম, শর্করা ১০.৯ গ্রাম। কচি তালের শাঁসের মতো পাকা তালেও ভিটামিন সি, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন ইত্যাদি উপাদান থাকে।

আরও পড়ুন: দিনে একটা কলা হয়ে উঠবে ক্যানসার থেকে হৃদরোগের রক্ষাকবচ, বলছে গবেষণা

তালের শাঁসের উপকারিতা
১. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
তালের শাঁসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এটি আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি লিভারের সমস্যাও দূর করতে সাহায্য তালের শাঁস।

২. ক্যানসার প্রতিরোধে
তালের শাঁসে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যানসারের মতো রোগপ্রতিরোধেও সাহায্য করে।

৩. দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় রোধে
তালের শাঁসে ক্যালশিয়াম থাকায় এটি আমাদের দাঁত এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং মজবুত করতে সাহায্য করে। এটি আমাদের দাঁতের এনামেল ভালো রাখে। শরীরের হাড়কে শক্তিশালী করতে তালের শাঁস খুবই উপকারী।

৪. দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়
তালের শাঁসে পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, আয়রন, সালফার, ম্যাঙ্গানিজ, কপার এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো উপকারী উপাদান রয়েছে, যা আমাদের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। রাতকানা রোগ থেকে চিরতরে বাঁচতে এবং চোখের অন্যান্য রোগের প্রকোপ কমাতে তালের শাঁস অত্যন্ত উপকারী।

৫. রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ
তালের শাঁস আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি খেলে আমাদের শরীরে নাইট্রেটের পরিমাণ বেড়ে যায়, ফলস্বরূপ প্রাকৃতিক উপায়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও এতে থাকা পটাশিয়াম আমাদের রক্তরস এবং কোশের জন্য অত্যন্ত দরকারি উপাদান। একই সঙ্গে এটি আমাদের হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। শরীরের রক্তশূন্যতা দূর করতেও তালের শাঁস খেতে পারেন।

পাকা তালের উপকারিতা
১. বকবকানি কমাতে
অনেকেই আছেন অনর্গল কথা বলতে থাকেন। পাশের লোক বিরক্ত হচ্ছে বুঝেও কিছুতেই থামাতে পারেন না নিজের কথা। এই অবস্থায় সকালবিকেল দেড় কাপ করে তালের রস খেলে কমে যেতে পারে অনর্গল কথা বলার এই অভ্যেস। পুরনো দিনের মানুষ একে ঘরোয়া টোটকা হিসেবে ব্যবহার করতেন।

২. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
পাকা তালে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার থাকায় তা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৩. কাশি সারাতে
বহুদিন ধরে কাশির সমস্যায় ভুগলে তিন-চার চামচ তালের রস দুধের সঙ্গে মিশিয়ে সকালবিকেল কয়েকদিন খেলেই সেরে যাবে কাশির সমস্যা। এই পদ্ধতিতে তালের রস গ্রহণের একাধিক উপকারিতা রয়েছে। বমি বমি ভাব, বুক ধড়ফড়ানি, পুরুষত্বহীনতার মতো সমস্যা দূর হবে তালের রস গ্রহণ করলে।

৪. দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়রোধে
পাকা তালে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকায় মানবদেহে দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় রোধ করে তাকে শক্তিশালী ও মজবুত করতে পারে।

৫. ক্যানসার প্রতিরোধ
তালের শাঁসের মতো পাকা তালেও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যানসারের মতো মারণ রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এছাড়া শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে এটি।তাল স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও খুবই উপকারী।

৬. অনিদ্রা দূর করতে
তাল শরীরে ভিটামিন বি-এর অভাব দূর করে। ফলে নিয়মিত তাল খেলে সর্দি, মাথাব্যথা, অনিদ্রার মতো রোগ সেরে যায়। এমনকী, কৃমি থেকে বাঁচতে তালের রস খেতে পারেন,খুবই উপকারী।

পাকা তাল যে যে উপায়ে খাওয়া যায়
তাল খাওয়ার নানা উপায় অনেকেরই জানা। যে যে পদ্ধতিতে তালের তৈরি পদ বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে,

১. তালসত্ব: তালের রস এবং চিনি মিশিয়ে বানানো হয় তালসত্ব। এই মিশ্রণটি রোদে শুকিয়ে সারা বছর খাওয়া যায়। অনেকেই ভাতের সঙ্গে বা দুধে তালসত্ব খেয়ে থাকেন।

২. তালের ক্ষীর: পাকা তালের ঘন নির্যাস বের করে তার সঙ্গে চিনি, কলা,নারকেলের কুচি, দুধ মিশিয়ে ভালোভাবে জাল দিয়ে খেয়ে থাকেন। খুবই সুস্বাদু খেতে হয় তালের ক্ষীর।

৩. তালের বড়া: পাকা তালের ঘন নির্যাস বের করে তাতে সুজি, কলা ও মিশিয়ে বড়ার মতো ভেজে নেওয়া হয় যা অনেকেরই প্রিয়।

৪. তালের কেক: কেকের সব উপকরণের সঙ্গে তালের রস মিশিয়ে তৈরি করা হয় তালের কেক, যার রং খুবই আকর্ষণীয় হয়। তবে তালের কেকের মধ্যে কম চিনি এবং ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করলে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য খুবই ভালো খাবার হতে পারে।

More Articles