শুধুই তথ্যের মারপ্যাঁচ মোদি সরকারের! বাস্তবে কতখানি উপকৃত দেশের চাষিরা?
PM-Kisan Samman Nidhi: ২০২২ সালে কৃষকের আয় দ্বিগুণ করার কথা ছিল, তার কী হলো? কৃষকের বর্তমান মাসিক আয়ের পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায় সরকারের প্রতিশ্রুতি কতটা অন্তঃসার শূন্য।
দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি নিজেকে ধার্মিক প্রমাণ করতে রাম মন্দির তৈরি করে তাতে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। পাপস্খলন করতে মহাকুম্ভে ডুব দিয়েছেন। সরকারি অর্থ ব্যয়ে তার ব্যাপক প্রচারও হয়েছে। আবার সেই প্রধানমন্ত্রীই দেশের কৃষকদের উন্নতির কথা বলতে গিয়ে মিথ্যের আশ্রয় নিচ্ছেন! সেটাও বিজ্ঞাপন দিয়ে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এটাই ভারতবর্ষ। এই না হলে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য! গত কয়েকবছর ধরে কৃষকের মন পেতে মোদি সরকার কৃষি সংক্রান্ত নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এই বছরের বাজেটেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। 'এগ্রিকালচার ইজ অ্যান ইঞ্জিন অফ গ্রোথ' – এই ভাবনায় ২০২৫ সালের বাজেটে বেশ কিছু ঘোষণা হয়েছে। তবে মোদি জমানায় কৃষকদের উন্নতির জন্য গৃহীত প্রকল্পগুলির সাফল্যের হার খুবই হতাশাজনক। সেই নিরিখে বিচার করলে বলতে হয়, মোদি সরকারের শুধুই 'কথার পিঠে কথা’।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি, কেন্দ্রীয় সরকার দেশের সমস্ত বড় কাগজে পাতা জুড়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছিল, কিষাণদের সম্মান জানাতে এই দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কতকগুলি কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। সেগুলি হচ্ছে–
• পিএম কিষাণ-এর ১৯তম কিস্তির ২২ হাজার কোটি টাকা ৯.৮ কোটি কৃষকের অ্যাকাউন্টে সরাসরি হস্তান্তর।
• ১০,০০০ কৃষক উৎপাদক সংস্থাকে (এফপিও) জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ।
• মোতিহারিতে দেশিয় পদ্ধতিতে প্রজননের জন্য উৎকর্ষ কেন্দ্র এবং বারাউনিতে দুগ্ধ-সামগ্রী উৎপাদন প্লান্টের উদ্বোধন।
এই কর্মসূচিগুলি উদ্বোধন হয়েছে ভাগলপুর থেকে। কেন বিহারের ভাগলপুর থেকে তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে একটা কথা না বললেই নয়, সরকারি কর্মসূচিতে জনগণের মঙ্গলের চেয়ে রাজনীতি প্রাধান্য পেলে সেই কর্মসূচি আপামর জনগণের খুব একটা কাজে আসে না। আর সেই রাজনীতির সঙ্গে যদি তথ্যের মারপ্যাঁচ মিলেমিশে যায় তাহলে একেবারে সোনায় সোহাগা। তখন জনগণের ‘হাতে রইল পেনসিল’।
আরও পড়ুন- অযোধ্যায় চাষিদের ঠকিয়ে, কোটি কোটি টাকায় জমি বিক্রি করা হয়েছে আদানি গোষ্ঠীকে?
‘প্রধানমন্ত্রী কৃষি সম্মান নিধি’ প্রকল্পের ষষ্ঠ বর্ষপূর্তিতে ঘোষণা হয়, এই পর্যন্ত কৃষকরা প্রায় ৩.৫ লক্ষ কোটি টাকার সাম্মানিক পেয়েছেন। সুবিধাভোগীর মধ্যে আছেন ৮৫%-এর বেশি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি। প্রত্যেক ৪ জন সুবিধাভোগীর মধ্যে অন্তত একজন মহিলা। এ তো গেল বিজ্ঞাপনের কথা। এখন যদি কেউ বলেন, পিএম কিষাণের এই টাকা কৃষকদের নিজেরই। সরকার চাষিকে ঠকিয়ে ঘুরপথে টাকা আত্মস্থ করেছিল, তাহলে কি ভুল হবে? কীভাবে তা দেখা যাক। সরকার ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) নির্ধারণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন ‘কমিশন ফর এগ্রিকালচারাল কস্ট অ্যান্ড প্রাইস’-এর হিসাব অনুযায়ী এ২-র (শস্য উৎপাদনের মোট নগদ খরচ অর্থাৎ বীজ, সার, জ্বালানি এবং সেচ ইত্যাদিতে যে খরচ তার যোগফল) সঙ্গে এফ এল অর্থাৎ পারিবারিক শ্রমের মজুরি যোগ করে চাষের উৎপাদন ব্যয় ঠিক করে। তার উপর অতিরিক্ত ৫০% চাপিয়ে সরকার ফসলের এমএসপি নির্ধারণ করছে। কিন্তু এম এস স্বামীনাথনের নেতৃত্বাধীন ‘ন্যাশনাল ফার্মার্স কমিশন’–এর সুপারিশ অনুযায়ী হলে, চাষের মোট খরচ বা সি ২-র (এ২+এফ এল+কৃষি জমির ভাড়া এবং কৃষি মূলধনের সুদ) সঙ্গে অতিরিক্ত ৫০% যুক্ত করে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারিত হতো। এই দুইয়ের ফারাক বিস্তর। ২০২৪-২৫ রবি মরশুমে সরকার ঘোষিত গমের এমএসপি ২২৭৫ টাকা প্রতি কুইন্টাল কিন্তু স্বামীনাথন কমিটি অনুযায়ী হলে এটি দাঁড়াত ২৪৭৮ টাকায়। স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশে ব্যয়ের সমস্ত খরচ ধরা থাকে বলে সেটি অনেক বেশি যুক্তিসঙ্গত। সরকার এবং স্বামীনাথন কমিটির হিসেবের এই ফাঁকের কারণে ২০১৬-১৭ সাল থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত চাষিরা শুধু ধান-গমেই প্রায় তিন লক্ষ কোটি টাকা কম পেয়েছেন। বাকি সব শস্য ধরলে টাকার অঙ্ক সরকারের পিএম কিষাণে প্রদেয় অর্থের চেয়ে বেশি হবে।
বিজ্ঞাপনে বড় বড় করে লেখা, ফসলের বীজ তৈরি থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত সরকার কৃষকদের পাশে থাকে। কীভাবে থাকে সেটাও উল্লেখ করেছে। বিগত ১০ বছরে গম, চাল, তুলো, ডাল এবং তৈলবীজ ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কেনার জন্য ২০ লক্ষ কোটি টাকা সরকার ব্যয় করেছে। প্রশ্ন হলো, এই ব্যয়ে আদৌ চাষিরা লাভবান হয়েছেন? সে খবর কি সরকার রেখেছে? চাষিরা যদি লাভবানই হবেন তাহলে সঠিক এমএসপি নির্ধারণ ও তার আইনি স্বীকৃতির দাবিতে কেন আন্দোলন করবেন? কেনই বা তাঁরা রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে শম্ভু ও খানৌরি সীমান্তে গত এক বছর ধরে বসে থাকবেন? সরকার যে এমএসপি নির্ধারণ করছে আর চাষি যে এমএসপি চাইছেন, তার মধ্যে বিস্তর ফারাক ইতিমধ্যেই উল্লিখিত। এছাড়া সরকার এমএসপি ঘোষণা করলেও সব শস্যের সরকারি ক্রয় এমএসপি-তে হয় না। এমএসপি-র আইনি স্বীকৃতি না থাকায় এমএসপি ঘোষণা ও এমএসপি-তে সরকারি ক্রয় সবটাই সরকারের মর্জি মাফিক।
সরকার এও বলেছে, ১২ লক্ষ কোটি টাকার ভর্তুকির ফলে কৃষকরা সঠিক সময়ে এবং ন্যায্য মূল্যে সার পাচ্ছেন। এই তথ্য কোথা থেকে এল বোঝা গেল না! বাজেটে ২০২৫-২৬ সালের জন্য সারের ভর্তুকিতে বরাদ্দ হয়েছে ১.৬৭ লক্ষ কোটি টাকা যা ২০২৪-২৫ সালের ১.৭১ লক্ষ কোটি টাকার চেয়েও কম। ২০২৩-২৪ সালে সারের ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ১.৮৮ লক্ষ কোটি টাকা। প্রতি বছর সারের ভর্তুকি ক্রমশ কমছে। উল্টোদিকে, খোলা বাজারে ইউরিয়া, ডিএপি, পটাশের দাম প্রতি বছর বাড়ছে। সরকার নির্ধারিত এক বস্তা ইউরিয়ার দাম ২৬৬ টাকার সঙ্গে কিনতে হবে ২২০ টাকার এক ইউনিট ন্যানো ইউরিয়া। মোট ৪৮৬ টাকা। চাষিরা ন্যানো ইউরিয়া ব্যবহারে অনিচ্ছুক। খুচরো ব্যবসায়ী প্রিন্টেড দামে চাষিকে শুধু দানা ইউরিয়ার বিক্রি করতে পারছেন না, কারণ তাঁকে দানা ও ন্যানো ইউরিয়া একসঙ্গে কিনতে হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা একে ‘ট্যাগিং’ সার বলে। ফলে চাষিকেও ‘শুধু’ দানা ইউরিয়া কেনার জন্য সরকার নির্ধারিত ২৬৬ টাকার অনেক বেশি দাম দিতে হচ্ছে। রেক পয়েন্ট (যেখানে রেলের ওয়াগন সার বণ্টন করে) থেকে দূরত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বস্তা পিছু সারের পরিবহণ ব্যয় বাড়ে, সঙ্গে দামও। শুধু ইউরিয়া নয়, ডিএপি, পটাশ, ফসফেট, গোমোর সব সারের ক্ষেত্রেই এক ছবি। ফলে সরকারি ঘোষণার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই।
কৃষি বাজেটের রেকর্ড বৃদ্ধি ঘটেছে তা জানাতে সরকার ভোলেনি। বিজ্ঞাপনে রয়েছে, ২০১৪ সালে কৃষিক্ষেত্রের বরাদ্দ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা, তা আজ ৫ গুণ বেড়ে ১.২৭ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এটা যেমন ঠিক, তেমনই ২০১৪ সালে এক বস্তা ডিএপি-র দাম ছিল ৮৫০-৯০০ টাকা ২০২৪-২৫ সালে চাষিকে তা কিনতে হচ্ছে ১৬০০-১৭০০ টাকায়। অর্থাৎ সারের দামেরও রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি ঘটেছে। যা চাষির উৎপাদন ব্যয়কে বহুগুণ বাড়িয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-২০২৫ সাল পর্যন্ত ফসল বিমা প্রকল্পে কৃষকরা ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা পেয়েছেন। শুধু টাকার অংকেই মিলবে প্রকল্পের সাফল্য? প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা দেশের ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প। প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা কীটনাশকের আক্রমণে ফসল নষ্ট হলে নিয়মানুযায়ী দু’মাসের মধ্যে ‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা (পিএমএফবি)’-র বিমাকৃত রাশি চাষির অ্যাকাউন্টে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। ২০২৩-২৪ সালে মহারাষ্ট্রে পিএমএফবিওয়াই-এর প্রিমিয়াম সংগৃহীত হয়েছিল ১০,১৪১ কোটি টাকা। চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় মাত্র ৩৫৫১ কোটি টাকা। ওই বছর রাজ্যের ভালো অংশের ফসল খরায় নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বিমাকৃত রাশি তাঁদের বেশিরভাগেরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি। এই খামতি দেশের সর্বত্র। ২০১৬ সালে পিএমবিওয়াই শুরুর দিন থেকে এখনও পর্যন্ত এই খামতি দূর করা সম্ভব হয়নি।
১৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে জৈব ও প্রাকৃতিক উপায়ে চাষে ২৫ লক্ষ কৃষক উপকৃত হয়েছেন। সরকার যখন বিজ্ঞাপন দিয়ে এটা জানাচ্ছে ঠিক তখনই সরকারি গবেষণা উল্টো কথা বলছে। ‘আইসিএআর-আইআইএফএসআর’, তিন বছর ধরে উত্তরাখণ্ডের পন্তনগর, পঞ্জাবের লুধিয়ানা, হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র এবং উত্তরপ্রদেশের মোদিপুরমে প্রাকৃতিক কৃষি পদ্ধতিতে বাসমতি চাল-গম চাষের উপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে উৎপাদন ব্যয় কম হওয়া সত্বেও কৃষকের আয় কম কারণ ফলন তুলনায় কম। প্রচলিত চাষের তুলনায় প্রাকৃতিক চাষে বাসমতি চাল ও গম উৎপাদনের খরচ যথাক্রমে ২২.৬% এবং ১৮.২% কম কিন্তু প্রাকৃতিক চাষে বাসমতি চাল ও গমের উৎপাদনশীলতা রাসায়নিক চাষের তুলনায় যথাক্রমে ৩২% এবং ৫৮% কম। ফলে প্রাকৃতিক চাষে চাষির আয় কম। এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে ‘ন্যাশনাল আকাডেমি অফ এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেস’-এর পরামর্শ, ভারতীয় জনগণের ক্ষুধা, অনাহার, স্টান্টিং এবং রক্তাল্পতা দূর করতে এই মুহূর্তে প্রাকৃতিক চাষ বিকল্প হতে পারে না। তাদের মতে এই কৃষি পদ্ধতি প্রযুক্তিগতভাবে কার্যকরী তো নয়ই বরং অবৈজ্ঞানিকও।
আরও পড়ুন-বাজেট ২০২৫: কৃষকের স্বপ্ন কেন এবারও অধরাই থেকে গেল?
বিজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে, ই-নাম প্ল্যাটফর্মে ১৪০০০ কৃষি বাজার যুক্ত হয়েছে, ৪ লক্ষ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। তথ্যের কোনও ভুল নেই। এই প্ল্যাটফর্মের সুযোগ পৌঁছেছে বড় চাষি এবং এক শ্রেণির ব্যবসায়ীদের কাছে। কিন্তু ভারতের ৮৫% চাষি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক। তাঁদের অনেকেরই স্মার্টফোন, কম্পিউটার না থাকায় তাঁদের কাছে ইন্টারনেটের কোনও অ্যাক্সেস নেই। ফলে তাঁদের পক্ষে এই বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা কঠিন। এছাড়া সার্ভারের ত্রুটি, বিদ্যুৎ সংযোগের সমস্যা তো রয়েইছে। মধ্যস্থতাকারীদের হ্রাস করার জন্য ই -নাম প্ল্যাটফর্ম চালু কিন্তু এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে গিয়ে চাষিদের কারও না কারও উপর নির্ভর করতেই হচ্ছে, যা তাঁদের ঠকাতে পারে।
প্রতি ফোঁটায় আরও ফসল (পার ড্রপ মোর ক্রপ), ক্ষুদ্র সেচের আওতায় জমির পরিমাণ ৪২ লক্ষ হেক্টর থেকে বেড়ে ১০০ লক্ষ হেক্টরে পৌঁছেছে। এতে ভূগর্ভস্থ জলের উত্তোলন কমে জল সংরক্ষণ বাড়ার কথা। কিন্তু চাষে বৈচিত্র্য বাড়িয়ে জলনিবিড় শস্যের চাষ কমাতে না পারলে ভূগর্ভস্থ জলের উত্তোলন কমানো যাবে না। সঙ্গে প্রয়োজন, মাটির নীচ থেকে বেআইনি জল উত্তোলন ঠেকাতে কঠোর শাস্তি। ভূগর্ভস্থ জল রাজ্যের বিষয় এই যুক্তিতে কেন্দ্র হাত গুটিয়ে থাকলে মাইক্রো সেচের সুফল পাওয়া মুশকিল।
দেশজুড়ে প্রায় ২৫ কোটি ‘সয়েল হেলথ কার্ড’ প্রদানের কথা বলা হচ্ছে। ২০১৫ সালে সুস্থায়ী কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে এটি চালু হয়। মাটি পরীক্ষা করে মাটির চাহিদা অনুযায়ী সারের যথাযথ প্রয়োগে সারের ব্যবহার ১০% থেকে ২০% কমে। এতে দূষণ কমে এবং মাটির সংরক্ষণ বাড়ে। সম্ভব হয় জমির উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। কিন্তু ভারতে চাষিদের সচেতনতার অভাবে, ‘সয়েল হেলথ কার্ড’ জমি ও কৃষক কারওই শ্রীবৃদ্ধি ঘটায়নি। পঞ্জাব, রাজস্থান, অন্ধপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের কিছু বড় চাষি মাটির প্রয়োজন অনুযায়ী জমিতে সার প্রয়োগ করলেও দেশের বেশিরভাগ চাষি মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগের চেয়ে নিজের ও প্রতিবেশী চাষির অভিজ্ঞতাতেই ভরসা রাখেন বেশি। ফলে সয়েল হেলথ কার্ড সংখ্যায় বাড়লেও তা সারের ব্যবহার কমিয়ে সাধারণ চাষিদের চাষের খরচ কমাতে ও পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে ব্যর্থ।
বিজ্ঞাপনে একটা কথা বলা নেই, ২০২২ সালে কৃষকের আয় দ্বিগুণ করার কথা ছিল, তার কী হলো? কৃষকের বর্তমান মাসিক আয়ের পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায় সরকারের প্রতিশ্রুতি কতটা অন্তঃসার শূন্য। দেশের কৃষকরা ঋণের ভারে জর্জরিত। ফসলের সঠিক দাম না পাওয়ায় সেই বোঝা প্রতিদিন ভারী হচ্ছে। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের চাষিরা আলু তুলছেন। জমিতে নতুন আলুর দাম ৫ টাকা প্রতি কেজি (চাষি পাচ্ছেন)। ফলন ভালো হওয়ায় বিঘা প্রতি তাদের আলুতে বর্তমানে আয় সর্বোচ্চ কুড়ি হাজার টাকা। ওই আলু চাষে ব্যয় হয়েছে ৩৫০০০ টাকা। বিঘা প্রতি লোকসান ১৫০০০ টাকা। চাষি জানেন না কীভাবে ব্যাঙ্ক ঋণ শোধ করবেন। এটাই গ্রাউন্ড রিয়ালিটি। তথ্যের মারপ্যাঁচে হয়তো নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যায়, কিন্তু দেশের অন্নদাতাদের মুখে হাসি ফোটানো যায় না। মোদি সরকারের প্রসঙ্গে রিয়াসাত আল ওয়াসিফের কবিতার একটি লাইন দারুণ ভাবে মনে পড়ে যায়, "শুধু মানুষের কাছে যত মিথ্যা বলা/ দিনরাত শুধু মিথ্যা মিথ্যি খেলা!" আর এই 'মিথ্যামিথ্যি' খেলাটা যদি কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে হয় তাহলে জনগণের কী-ই বা করার থাকে?