আন্তর্জাতিক সম্মান জয়! তাও কেন এই তিন ভারতীয়কে অভিনন্দন জানাননি মোদি?
Narendra Modi: একা বানু মুশতাক নন, আরও এমন অন্তত দু'টি উদাহরণ রয়েছে যেখানে মোদি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতির ক্ষেত্রে ভারতীয় সাফল্য স্বীকার করতে চাননি।
ক্রীড়া হোক, চলচ্চিত্র হোক, মহাকাশবিজ্ঞান হোক — যে কোনও ক্ষেত্রেই কৃতি মানুষদের বিশেষ কোনও সম্মান অর্জনের ক্ষেত্রে সব সময়ই দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গর্ব বোধ করেছেন। আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতীয়দের সাফল্য তিনি প্রকাশ্যে স্বীকার করেন, উদযাপন করেন। এটি খণ্ড সত্য। আসলে এই সত্যের এক উল্টো দিকও আছে। সকল সম্মানের ক্ষেত্রে বা সকলের সম্মানের ক্ষেত্রেই যে তিনি একইরকম খুশি তা নয়। এর উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম আছে। একাধিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতীয়দের বিশেষ খ্যাতির পরেও তাঁর নীরবতা ছিল স্পষ্ট, অর্থবাহী।
এর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হলেন বানু মুশতাক। এবছর লেখিকার কন্নড় ছোটগল্প সংকলন হৃদয় দীপা (হার্ট ল্যাম্প) আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জিতেছে। নিঃসন্দেহে এই কৃতিত্ব ভারতীয় সাহিত্যের পক্ষে বিশাল এক অর্জন! দেশের এত বড় সম্মান যাঁর হাত ধরে এল, সেই লেখিকাকে কোনও অভিনন্দনই জানাননি নরেন্দ্র মোদি। একা বানু মুশতাক নন, আরও এমন অন্তত দু'টি উদাহরণ রয়েছে যেখানে মোদি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতির ক্ষেত্রে ভারতীয় সাফল্য স্বীকার করতে চাননি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ এবং সমাজকর্মীদের একাংশের বিশ্লেষণ, এই নীরবতা সম্ভবত নির্বাচনী। সম্ভবত সম্মান প্রাপকদের রাজনৈতিক বা আদর্শিক অবস্থান, অথবা তাঁদের কাজের বিষয়বস্তুকে সমর্থন করেন না নরেন্দ্র মোদি। যেহেতু ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ এবং বিভাজনবাদের সমালোচনা এবং ভারতে বহুত্ববাদের পক্ষে সমর্থনই এই বিশিষ্ট মানুষদের কাজের নিরবচ্ছিন্ন অংশ, তাই এক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদির নীরবতাই বাঙ্ময়।
রবীশ কুমার: র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার (২০১৯)
হিন্দি ভাষার প্রবীণ সাংবাদিক রবীশ কুমার ২০১৯ সালে বিখ্যাত র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার অর্জন করে। এই সম্মানকে এশিয়ান নোবেল পুরস্কারও বলা হয়। ভারতীয় বিরোধী রাজনৈতিক মহল থেকে ব্যাপক অভিনন্দনবার্তা এসেছিল ঠিকই কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি এই কৃতিত্বের জন্য রবীশ কুমারকে প্রকাশ্যে কোনও অভিনন্দন বার্তা জানাননি।
গীতাঞ্জলি শ্রী: আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার (২০২২)
গীতাঞ্জলি শ্রী ২০২২ সালে তাঁর হিন্দি উপন্যাস টম্ব অফ স্যান্ড-এর (রেত সমাধি) জন্য আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জয় করেন। তিনিই এই সম্মান অর্জন করা প্রথম ভারতীয় লেখক। কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি সহ ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এই কৃতিত্ব সম্পর্কে উল্লেখযোগ্যভাবে নীরব ছিল। অথচ প্রথম কোনও বই দক্ষিণ এশিয় ভাষার কাজ হিসেবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই সম্মান জিতেছিল, ফলে বইটির বিশেষ তাৎপর্য ছিল।
নরেন্দ্র মোদি সরকারের হিন্দিভাষার প্রচার নিয়ে সরব। কিন্তু হিন্দি ভাষাতেই এই বইটির এমন কৃতিত্ব নিয়ে কথা হয়নি। গীতাঞ্জলি শ্রী-র বইটি বহুত্ববাদের এক সাহসী অন্বেষণ, সীমান্তের অর্থহীনতা এবং একজন মুসলিম পাকিস্তানি পুরুষ এবং একজন হিন্দু ভারতীয় মহিলার মধ্যে দৃঢ় সম্পর্কের চিত্রই তুলে ধরে রেত সমাধি।
বানু মুশতাক: আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার (২০২৫)
বানু মুশতাক এবছর তাঁর কন্নড় ভাষায় ছোটগল্প সংকলন 'হৃদয় দীপা'-এর (হার্ট ল্যাম্প) জন্য আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জয় করেছেন। বিরোধী নেতাদের তরফে বানু মুশতাককে অভিনন্দন জানানোর ঝড় উঠলেও, এই কৃতিত্বের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদি কোনও অভিনন্দন বার্তা জানাননি।
কন্নড় সাহিত্য এবং ভারতীয় লেখার আন্তর্জাতিক মঞ্চে এমন খ্যাতি পেল, অথচ তা নিয়ে নরেন্দ্র মোদির নীরবতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বানু মুশতাকের বইটি লিঙ্গচেতনা সম্পর্কিত। এই বইয়ের গল্পগুলি পিতৃতন্ত্রকে আক্রমণ করে। একজন মুসলিম, মহিলা, কন্নড়, উর্দু, দক্ষিণী এবং হিন্দি ভাষাভাষী হিসেবে লেখিকার নিজস্ব পরিচয়কে সামনে নিয়ে আসে।