২ ঘণ্টা ২০ মিনিটের ভাষণে ১০ মিনিট ঠাঁই মণিপুরের! মোদির মূল্যবান সময় যাচ্ছে কোথায়?
PM Modi On Manipur: প্রধানমন্ত্রী মোদি বিকেল ৫টায় বক্তৃতা শুরু করেন। ঘড়িতে যখন সন্ধা ৬ টা ৪২, তখন তিনি প্রথমে মণিপুরের কথা উল্লেখ করেন!
২ ঘণ্টা ২০ মিনিট! টানা কথা বলেছেন নরেন্দ্র মোদি। এই প্রায় আড়াই ঘণ্টায় মোদি বলেছেন তাঁর মন কি বাত, দেশ কি বাত। দেশের উত্তরপূর্বের ছারখার হয়ে যাওয়া রাজ্যের 'বাত' করেছেন মেপে মেপে ১০ টি মিনিট। জাতি হিংসায় জ্বলে ওঠা মণিপুর নিয়ে আগে ৩০ সেকেন্ড আর এবার ১০ মিনিট! নিন্দুকেরা অল্পে খুশি নাও হতে পারেন, তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী একটি রাজ্যের জন্য সাড়ে ১০ মিনিট দিয়েছেন, একি কম নাকি! নিন্দুকেরা বলতে পারেন মণিপুর প্রসঙ্গে বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে উদাসীন। কিন্তু মোদি বলছেন, তাঁর সরকার শান্তি রক্ষার কাজই করছে। ১০ মিনিট মণিপুরের জন্য বরাদ্দ করে বাকি ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট নিয়ে কী করলেন নরেন্দ্র মোদি? পাটিগণিত ও রাজনীতির সরল অঙ্ক বলছে, বাকিটা জুড়েই কংগ্রেস, পূর্ববর্তী ইউপিএ সরকার, বিরোধী দল ইন্ডিয়া জোটকে আক্রমণ এবং মোদি সরকারের নয় বছরে উত্তর পূর্বে আনা উন্নয়নের জোয়ার নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
অনাস্থা প্রস্তাবের লক্ষ্যই ছিল প্রধানমন্ত্রীকে সংসদেরর মধ্যে মণিপুরের হিংসা বিষয়ে কথা বলানো। কিন্তু মোদির নাটকীয় বক্তৃতায় মণিপুরের কোনও উল্লেখ না থাকায় বক্তৃতার ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট পরেই ওয়াকআউট করেন বিরোধীরা। সংসদে বিরোধী সাংসদের অনুপস্থিতিতে অনাস্থা প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত ধ্বনিভোটে হেরে যায়।
আরও পড়ুন- সারা বিশ্বের সামনে স্পষ্ট হয়ে গেল নরেন্দ্র মোদির নির্বুদ্ধিতা
প্রধানমন্ত্রী মোদি বিকেল ৫টায় বক্তৃতা শুরু করেন। ঘড়িতে যখন সন্ধা ৬ টা ৪২, তখন তিনি প্রথমে মণিপুরের কথা উল্লেখ করেন! ততক্ষণে বিরোধী সাংসদরা ওয়াকআউট করেছেন। ১০ মিনিটে কী কহিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী? মোদি বলছেন, অমিত শাহ জানান মণিপুরের উচ্চ আদালত থেকে একটি আদেশ এসেছে, রাজ্যে হিংসার ঘটনার ক্রমটি তাতে স্পষ্ট। অনেক পরিবার তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে। মহিলাদের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং এটি নিন্দনীয়। মোদি বলছেন, দুষ্কৃতীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য দুই সরকারই যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। সমস্ত নাগরিককে তিনি আশ্বস্ত করতে চান যে শীঘ্রই মণিপুরে শান্তি ফিরবে, মণিপুর আবার উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে। মণিপুরের মেয়েদের উদ্দেশ্যে তিনি বলছেন, দেশ এবং সংসদ মণিপুরের 'মা বোনেদের' সঙ্গে আছে। মণিপুর নিয়ে বলতে বলতে, ওই বরাদ্দ ১০ মিনিটের মধ্যেই মোদি বিরোধীদের আক্রমণ করেছেন। “ওরা অমিত শাহের অনুরোধে রাজি হলে আমরা ভালো আলোচনা করতে পারতাম। অমিত শাহ গতকাল একটি বিশদ বিবৃতি দিয়েছেন এবং মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধীদের ছড়ানো মিথ্যাচারে দেশ অবাক হয়ে যাচ্ছে,” বলছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী।
মোদির দাবি, সরকার বলেছিল বসে এই মণিপুর প্রসঙ্গে আলোচনা হোক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি চিঠিও লেখেন। কিন্তু সামনাসামনি বসে আলোচনার কোনও উদ্দেশ্য বা সাহস বিরোধীদেরই আসলে ছিল না। মোদি আরও বলছেন, গত কয়েক বছরে মণিপুরের সমস্যাগুলির জন্ম হয়নি। মণিপুরে এই হংসা, মেয়েদের নগ্ন করে ঘোরানো, মৃত্যু সব কিছুর জন্যই দায়ী কংগ্রেস। মোদি বলছেন, “মণিপুরের সমস্যাগুলি এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন এই সমস্যাগুলি সম্প্রতি শুরু হয়েছে। উত্তর-পূর্বের সমস্যার মূল হলো কংগ্রেস। উত্তর-পূর্বের মানুষ নয়, কংগ্রেসের রাজনীতিই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী”।
আরও পড়ুন- কী দিন চেয়েছিলেন আর কী পেলেন মণিপুরের সেই নগ্নিকারা?
প্রধানমন্ত্রীর দাবি, কংগ্রেস সরকাররা উত্তরপূর্বের জন্য কিছুই করেনি। কংগ্রেস কখনই উত্তরপূর্বের আবেগ বোঝার চেষ্টা করেনি। মোদি কি করেছেন? “আমি ৫০ বার উত্তরপূর্বে গিয়েছি। এটি কেবল তথ্য নয়, এটি উত্তরপূর্বের প্রতি আমার উত্সর্গ," বলছেন মোদি। অর্থাৎ মণিপুর নিয়ে যতটা দরদ তিনি এই ১০ মিনিট ও আগের ৩০ সেকেন্ডে দেখিয়েছেন, সেটুকুও কংগ্রেস দেখায়নি। দেখায়নি বলেই মানুষ মরছে, মেয়েদের অবস্থা তথৈবচ। কংগ্রেস বংশ পরম্পরার রাজনীতি করে বলেই মণিপুর জ্বলছে। মোদি তো জিতেই গিয়েছেন এই কৌশলে। দেড় ঘণ্টা পার করেও মণিপুর নিয়ে কিছু বলছেন না দেখে যেই বিরোধীরা ওয়াক আউট করে গেলেন, ওমনি মোদি ১০ মিনিট বের করে মণিপুর নিয়ে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিলেন। আর স্পষ্ট করে দিলেন, তাঁর সময় আছে মণিপুর নিয়ে, তাঁর ভাবনা আছে মণিপুর নিয়ে কিন্তু বিরোধীরাই তো প্রধানমন্ত্রীর কথা শোনার জন্য প্রস্তুত নয়!
বিরোধীদের সময় নেই, দেশের একাংশের আস্থা নেই। মোদি ভাবছেন মণিপুরের জন্য, ১০ মিনিট ভাবছেন। কংগ্রেস তো স্বাধীনতার আমল থেকেই ভাবেনি। অতএব, শুধু বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা! মোদির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার জন্যই এত কিছু। আসলে দেশের আস্থা তো জিতেই নিয়েছেন মোদি। মোদি হ্যায় বলেই না মণিপুর হাসছে, হাসবে, মোদি আছেন বলেই না জাতপাতের লড়াই মুছে যাচ্ছে, মোদি আছেন বলেই না হাথরাস উজ্জ্বল হয়ে আছে। মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়, বাকিটা নিন্দুকদের রটনা মাত্র।