'ভারতমাতা খুন মণিপুরে', কেন লোকসভায় সিংহগর্জন রাহুলের?
Rahul Gandhi on Manipur: প্রধানমন্ত্রী মণিপুর যাননি কারণ তিনি রাজ্যটিকে ভারতের অংশ বলে মনেই করেন না।
তিনি ফিরেছেন। সাংসদ পদ ফিরে পেয়েছেন। ফিরেই দেশের কেন্দ্রে থাকা শাসককে বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রশ্ন তোলার ভূমিকা ভুলে যায়নি বিরোধীরা। হিংসার ৭৮ দিন পরে ৩০ সেকেন্ড মুখ খুলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। নির্বাচনের আগে ঘন ঘন গিয়েছেন, অথচ সারা বিশ্বের সামনে দেশকে নগ্ন করে দেওয়ার মতো ঘটনায় একবারও ওই পাড়ার ছায়াও স্পর্শ করেননি দেশের প্রধানমন্ত্রী। কেন? কারণ, মণিপুরকে ভারতের অংশ বলে মনেই করেন না মোদি। সাংসদ পদ ফিরে পেয়েই লোকসভায় বিজেপিকে এভাবেই তীক্ষ্ণ আক্রমণ করলেন রাহুল। দেশের দুই প্রান্তে, মণিপুর এবং হরিয়ানার হিংসা নিয়ে মোদির ভূমিকাকে বিবিধ প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছেন রাহুল। কংগ্রেস সাংসদ বলছেন, বিজেপি মণিপুরে ভারতকে খুন করেছে এবং এখন হরিয়ানায় আগুন লাগানোর চেষ্টা করছে। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের বিতর্ক চলাকালীন নিম্নকক্ষে রাহুল গান্ধি বলেন, "ভারত এক কণ্ঠস্বর, হৃদয়ের কণ্ঠস্বর। আপনি মণিপুরে সেই কণ্ঠকেই হত্যা করেছেন। আপনি মণিপুরে ভারত মাতাকে হত্যা করেছেন। আপনারা দেশদ্রোহী। আমার মা এখানে বসে আছেন। আর অন্য মা, ভারত মা, আপনি তাকে মণিপুরে হত্যা করেছেন। তাই প্রধানমন্ত্রী মণিপুরে আসেন না। আপনারা ভারত মাতার রক্ষক নন, আপনারা তার খুনি।"
২০১৮ সালের পর মোদি সরকারের বিরুদ্ধে এটিই দ্বিতীয় অনাস্থা প্রস্তাব। লোকসভায় রাহুল গান্ধির বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী মণিপুর যাননি কারণ তিনি রাজ্যটিকে ভারতের অংশ বলে মনেই করেন না। উল্টে বিজেপি মণিপুরকে গোষ্ঠীতে ভাগ করে ফেলেছে। ১৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু, মহিলাদের নগ্ন করে ঘোরানো, হাজার হাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুত হতে দেখেও দেশের প্রধানমন্ত্রী চুপ! রাহুলের অভিযোগ, কেন্দ্র সেনাবাহিনী ডেকে মণিপুরের হিংসা বন্ধ করতেই পারে কিন্তু করছে না। আসলে নরেন্দ্র মোদি ইচ্ছাকৃতভাবেই সর্বত্র কেরোসিন ছড়িয়েছেন, মণিপুরে আগুন লাগিয়েছেন। ঠিকই একই চেষ্টা তিনি করে চলেছেন হরিয়ানাতেও। গুরুগ্রাম এবং নুহতে সাম্প্রতিক হিংসায় ইতিমধ্যেই ছয়জন নিহত হয়েছেন। নরেন্দ্র মোদি সব দেখেও চুপ!
আরও পড়ুন- INDIA-র মুখ কে? আদর্শ দিয়ে কতটা লড়াই সম্ভব মোদির বিরুদ্ধে?
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের এক মানহানির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে লোকসভার সাংসদ পদটি চলে যায় রাহুলের। সেই সময় মোদি বিরোধিতার অন্যতম স্বরের এই সাংসদ পদ চলে যাওয়া নিয়ে বেশ স্বস্তিই পায় বিজেপি। কিন্তু কাঁটা হয়েই রইলেন রাহুল। সুপ্রিম কোর্টের আদেশেই তিনি সংশ্লিষ্ট পদে ফিরেছেন তিনি। যে কেন্দ্র সরকার বিরুদ্ধ স্বর শুনলেই তাঁকে 'দেশদ্রোহী' বলে দাগিয়ে দেয়, পড়শি দেশে যাওয়ার নিদান দেয়, সেই বিজেপি সরকারকেই দেশবিরোধী বলে অভিযোগ করেছেন রাহুল। নরেন্দ্র মদি অন্তত দেশপ্রেমিক হতে পারেন না কারণ তিনি ভারতকে হত্যা করেছেন, বক্তব্য রাহুলের। তবে লোকসভায় এই সমস্ত বিষয়টি রাহুল উত্থাপন করলেও মূল নজর ঘোরানো হয়ে গিয়েছে বিজেপির উদ্দেশ্যে রাহুলের উড়ন্ত চুম্বনের দিকে।
রাহুল গান্ধি যখন অনাস্থা প্রস্তাবের বক্তৃতার পরে লোকসভা প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন হাত থেকে তাঁর কয়েকটি ফাইল পড়ে যায়। রাহুল সেগুলি তুলতে নিচু হওয়ার কয়েকজন বিজেপি সাংসদ তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু করেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির বক্তৃতা চলছিল তখন। এই হাসির উত্তরে রাহুল গান্ধি বিজেপি সাংসদের দিকে উড়ন্ত চুমু ছুঁড়ে বেরিয়ে চলে যান।
'ফ্লাইং কিস' নিয়ে বেজায় চটে যান বিজেপির নেতারা। কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বলেন, একমাত্র অসভ্য পুরুষই সংসদে মহিলা সাংসদদের ফ্লাইং কিস দিতে পারেন। এমন নজির আগে কখনও দেখা যায়নি। মণিপুরের ঘটনার নজির উঠলেই ঢেকে যাচ্ছে তা, বারেবারে, বিবিধ উপায়ে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি মণিপুরে ভারত মাতা খুনের প্রসঙ্গ উঠতে, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার যারপরনাই চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। মণিপুরে বিজেপির ভূমিকা নিয়ে বা সমস্যা সমাধানের কোনও শব্দও উচ্চারণ না করে বিরোধীদের নয়া জোটের দিকেই আঙুল তুলেছেন। বলেছেন, বিরোধীরা "ভারত নয়"। বিরোধীরা আসলে INDIA। নাম নিয়ে, চুম্বন নিয়ে মেতে থাকুক লোকসভা। মণিপুর চলুক কবরের দিকে। বড় বড় দেশে, ছোট খাটো ঘটনা তো...