বুকে ব্যথা, মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা! যে বিপদ মাথাচাড়া দিচ্ছে কোভিড ভ্যাকসিনের নেওয়ার পর
POTS : কোভিড ভ্যাক্সিন-পরবর্তী শারিরীক জটিলতার তালিকায় এবার সংযোজিত হল পসচ্যুরাল অর্থোস্ট্যাটিক ট্যাকিকার্ডিয়া সিন্ড্রোম। সংক্ষেপে POTS।
কোভিডের ভ্যাক্সিন নেওয়ার পরে একাধিক ব্যক্তির মধ্যে দেখা গিয়েছিল নানান রকম শারীরিক সমস্যা। না, সেই সমস্যা কেবল জ্বর, গায়ে-হাতে-পায়ে প্রবল যন্ত্রণা, কিংবা ঠান্ডা লাগাতে সীমাবদ্ধ ছিল না। সমস্যাগুলি ছিল তার থেকেও জটিল। এমনকী ভ্যাক্সিন-পরবর্তী শারীরিক জটিলতার কারণে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। ভারতে সেই ঘটনাগুলি ধামাচাপা দেওয়া হলেও, সারা বিশ্বে সেগুলি খুব বেশিদিন চাপা থাকেনি। ভ্যাক্সিন-পরবর্তী সেই শারিরীক জটিলতার তালিকায় এবার সংযোজিত হল পসচ্যুরাল অর্থোস্ট্যাটিক ট্যাকিকার্ডিয়া সিন্ড্রোম। সংক্ষেপে POTS।
দেখা যাচ্ছে, টীকাকরণের পর নব্বই দিনের মধ্যে এবং সেই সংশ্লিষ্ট লক্ষণ বেশি করে দেখা যাচ্ছে। টীকাকরণের আগের তুলনায়, টীকাকরণের পরে POTS-এ আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা তেত্রিশ শতাংশ বেড়েছে। ঠিক কী হয় পসচ্যুরাল অর্থোস্ট্যাটিক ট্যাকিকার্ডিয়া সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হলে? আদতে অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম-ঘটিত একটি অসুখ। সাধারণ অবস্থায় অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম আমাদের হার্ট রেট থেকে শুরু করে রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা যে অবস্থাতেই থাকি না কেন, আমাদের শারিরীক ভঙ্গি যা-ই হোক না কেন, অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম শরীরে রক্তসরবরাহের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখে। POTS-এ আক্রান্ত হলে বিঘ্নিত হয় সেই নিয়ন্ত্রণ। তখন শারিরীক ভঙ্গির অদল-বদলের সাথে রক্তজালিকার সংকোচন-প্রসারণ, হৃদপিন্ডের কাজ সামঞ্জস্য বজায় রাখতে পারে না। ফলে হার্ট রেট অত্যন্ত বেড়ে যায়। পাশাপাশি দেখা যায় মাথা ঝিমঝিম করা, মাথা ঘোরা এবং দূর্বলতার মতো সমস্যা।
আরও পড়ুন - করোনা হলেই নষ্ট হচ্ছে বীর্যের গুণগত মান! সমীক্ষায় উঠে এল ভয়াবহ তথ্য
POTS-এ আক্রান্ত হলে, বেশ খানিকক্ষণ বসে থাকার পর উঠে দাঁড়ালে, হার্ট বিট স্বাভাবিকের তুলনায় অন্তত তিরিশবার বেড়ে যায়। উঠে দাঁড়ানোর পরে দশ মিনিট পর্যন্ত চলতে পারে এই অবস্থা।স্বাভাবিক ক্ষেত্রে, উঠে দাঁড়ানোর পরেও আমাদের মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ হতে থাকে। হৃদপিন্ড রক্ত পাম্প করে পৌঁছে দিতে পারে মস্তিষ্ক অবধি। কিন্তু -এ তা হয় না। সেক্ষেত্রে, দাঁড়ানোর বেশ কিছুক্ষণ পরেও রক্ত মস্তিষ্কে না পৌঁছনোয়, মাথা ঝিমঝিম করে। আর এই অবস্থাটিকে শরীর যাতে দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারে, অর্থাৎ হৃদপিন্ড যাতে আবার মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ শুরু করতে পারে, তাই এপিনেফ্রিন এবং নরএপিনেফিনের মতো হরমোন ক্ষরণ শুরু হয়। তাতে আবার হিতে বিপরীত হয়। তখন হার্ট বিট অস্বাভাবিক বেড়ে যায়।
এ ছাড়াও একাধিক লক্ষণ দেখা যেতে পারে, POTS আক্রান্ত হলে। যার মধ্যে অন্যতম দমবন্ধ লাগা (ডিসপনিয়া), মাথা যন্ত্রণা, সংজ্ঞা হারানো, বুকে ব্যথা, নার্ভাস বোধ করা, হাত-পা কাঁপা, অত্যধিক হারে ঘেমে যাওয়া, ব্রেনফগ, এবং ভুলে যাওয়ার প্রবণতা।
তবে কেবল কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পরেও, কোভিড-পরবর্তী শারিরীক সমস্যা হিসেবে যে POTS দেখা যায়নি, তেমনটাও কিন্তু নয়। কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরে অনেকেই জানিয়েছেন, তাঁরা POTS-এর সমস্যায় ভুগছেন। আশার বিষয় হল, টীকাকরণের পরে যত সংখ্যাক মানুষ POTS-এ আক্রান্ত হয়েছে, কোভিড-পরবর্তী সময়ে তার থেকেও পাঁচগুণ বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এই অসুখে।
POTS প্রাণঘাতী হয়তো নয়। কিন্তু এর ফল অবশ্যই গুরুতর। এবং বিশেষ কিছু শারীরিক অবস্থায় থাকলে এর ফলাফল কিন্তু মারাত্মক হতে পারে ।
কোভিডের একটি টীকাকরণের পরে অনেক কমবয়সীদের মধ্যেই মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধা বা রক্তক্ষরণের মতো সমস্যা দেখা গেছে। রক্তের জমাট বাঁধা কেবল মস্তিষ্কেই যে সীমিত থেকেছে তা নয়। রক্তজালিকার গভীরে তারা জমাট বেঁধে, স্তব্ধ করে দিয়েছে রক্তপ্রবাহের পথ। যে অবস্থাটাকে ডাক্তারির ভাষায় থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া বলা হয়। হৃদপিন্ড, বৃক্ক, যকৃতের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে রক্ত পৌঁছতে না পেরে, একেবারের মতোই বিকল হয়ে গেছে সেই সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। দেখা গিয়েছে মায়োকার্ডাইটিসের মতো সমস্যাও। কোভিডের ভ্যাক্সিন নেওয়ার পরে অনেকেই অ্যানাফাইলেক্সিসের মতো অ্যালার্জির সমস্যা, থ্রম্বোসিস, এমনকি প্যারালাইসিসেও আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুর মুখেও ঢলে পড়েছেন একাধিক ব্যক্তি।
আরও পড়ুন - ফের করোনার বাড়াবাড়ি! মরণ কামড় এড়াতে দেশে কী কী বিধিনিষেধ আরোপ হল, জেনে নিন
একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে কোভিডের বাজারচলতি ভ্যাক্সিনগুলি নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে, এবং ভাইরাল লোড কমাতে যথেষ্ঠ কার্যকরী। যদিও ভ্যাক্সিন নেওয়ার পরে এই ধরণের গুরুতর অসুস্থতার ঘটনা হাতে গোনাই, ভ্যাক্সিন পরবর্তী কুপ্রভাবের থেকে সুপ্রভাবের ঘটনাই বেশি। কিন্তু তা বলে ভ্যাক্সিন-পরবর্তী শারিরীক সমস্যাগুলিকে এড়িয়ে যাওয়া চলে না।
তাই কোভিডের ভ্যাক্সিন নেবেন কি-না, শেষ পর্যন্ত এই মহামূল্যবান প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে কোভিডের টীকা অবশ্যই নেবেন। যাতে আগামী দিনে কোভিড মহামারীর সাম্ভাব্য ঢেউগুলিকে আমরা আটকে দিতে পারি। আশঙ্কায় দিন না গুণে যাতে পৃথিবীকে আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনতে পারি। কিন্তু পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের একাংশ এই আর্জিও জানাচ্ছেন, কোন কোন বিশেষ শারিরীক অবস্থায় থাকলে, কোভিডের টীকা এড়িয়ে যাওয়া উচিত। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কোভিডের টীকাকরণের ফলে কী কী শারিরীক জটিলতা দেখা যেতে পারে, তার সেই বিষয়ে বিশদ গবেষণার আশু প্রয়োজন, জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।