জনসংখ্যা মাত্র তিন! পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশের কাহিনি অবাক করবে আপনাকেও
World's Smallest Nation Sealand : সেই লোহার কাঠামোটাই নাকি একটা দেশ! এমনই আশ্চর্য গল্প জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে।
দেশ বলতে আমরা কী বুঝি? মোটামুটি একটা বড় ভূখণ্ড, বন জঙ্গল, নদী নালা… সেইসঙ্গে সেই দেশের মানুষজন। সঙ্গে অবশ্যই থাকবে অন্যান্য জীবজন্তু। সেই দেশের নিজস্ব সংবিধান, পতাকা, মুদ্রা থাকবে, আইন থাকবে। কিন্তু এমন কোনও দেশের ব্যাপারে শুনেছেন, যেটি মাঝসমুদ্রে মাত্র দুটি বিরাট পিলার বা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে! কোনও পাহাড়-পর্বত, গাছপালা কিচ্ছু নয়, স্রেফ একটা লম্বা, বড় প্ল্যাটফর্ম। দূর থেকে দেখে মনে হবে, সমুদ্রের ওপর কোনও হেলিপ্যাড, বা জাহাজ বন্দর, ছোট্ট কারখানা। সেই লোহার কাঠামোটাই নাকি একটা দেশ! এমনই আশ্চর্য গল্প জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে। আসুন, আলাপ করা যাক পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম দেশ, সিল্যান্ডের (Sealand) সঙ্গে।
সিল্যান্ড, সম্পূর্ণ ভাষায় বললে প্রিন্সিপ্যালিটি অফ সিল্যান্ড (Principality of Sealand)। দু’টো বিশাল। মোটা থামের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটা লোহার কাঠামো। সেটা কী করে একটা আস্ত দেশ হবে? তার জন্য একটু ফিরে যেতে হবে ইতিহাসে। সিল্যান্ডের মূল গল্প শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে। সেই সময় জার্মানির ফৌজ, বিমান ইংল্যান্ডকে তছনছ করে দিচ্ছে। তখনই ব্রিটিশ উপকূলের থেকে বেশ কয়েক মাইল দূরে দু’টি লম্বা টাওয়ার তৈরি করা হয়। তখন এর নাম ছিল ‘রাফস টাওয়ার’। বলা ভালো, ইংল্যান্ডের একপ্রকার দুর্গ ছিল এটি। সৈন্যসামন্ত, অস্ত্র, কামান, বন্দুক সবই মজুত থাকত এখানে। শত্রু বিমান দেখলেই সেগুলিকে আক্রমণ করা ও জার্মানদের গতিবিধি জানতে এই টাওয়ারটি ব্যবহার করছিল ব্রিটিশ ফৌজ।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৫৬ সাল নাগাদ ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি এই টাওয়ারটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে চলে যায়। ফাঁকাই পড়ে থাকল এই রাফস টাওয়ার। তবে ১৯৬৭ সাল থেকে এখানকার আসল গল্প শুরু হয়। যুদ্ধের সময় এই টাওয়ারে র্যা ডার, বেতার যন্ত্র ইত্যাদি বসানো হয়েছিল। ’৬৭ সালে একটি অবৈধ রেডিও সম্প্রচারকারী দল এই টাওয়ারে এসে ঘাঁটি গাড়ে। সেই দলেই ছিলেন রয় বেটস এবং তাঁর ছেলে মাইকেল বেটস। সবাই মিলে একসঙ্গে এখানে থাকতে শুরু করলেও একসময় রয় বেটসের কর্তৃত্ব চরমে ওঠে। তিনি ঠিক করেন, এই জায়গায় একাই বসবাস করবেন। যেমন ভাবা, তেমনই কাজ। তাঁর সঙ্গে থাকা সমস্ত বাসিন্দাকে উচ্ছেদ করেন তিনি।
এরপরই মাথায় আসে অন্য মতলব। রাফস টাওয়ারের অবস্থানটা ছিল একটু অদ্ভুত জায়গায়। প্রথমত, এর অবস্থান ছিল আন্তর্জাতিক জমসীমানায়। আর এই অঞ্চলে কারও কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। ধরা যাক, এই অঞ্চলের মধ্যে একটি ফাঁকা দ্বীপ আছে। তাহলে যে কেউ সেখানে এসে ঘাঁটি গাড়তেই পারেন। এছাড়াও ইংল্যান্ডেরও হাতের বাইরে এই অঞ্চলটি। সবদিক থেকেই সুবিধা পেলেন রয় বেটস। স্ত্রী আর পুত্রের সঙ্গে এই টাওয়ারকেই ঘোষণা করলেন নতুন দেশ হিসেবে। নাম দিলেন ‘প্রিন্সিপ্যালিটি অফ সিল্যান্ড’। তখন থেকে আজ অবধি বেটস পরিবারই এখানে বসবাস করছে।
১৯৭৫ সালে সিল্যান্ড নিজেদের সংবিধান প্রকাশ করে। তৈরি হয় পতাকা, প্রতীক, জাতীয় সঙ্গীত। এমনকী, এই দেশের নিজস্ব মুদ্রা, পাসপোর্টও রয়েছে। মাঝখানে বেশ কয়েকবার এই দেশটি দখল করার চেষ্টাও হয়েছিল বিপদে পড়েছিলেন রয় বেটসের ছেলে মাইকেল বেটসও। কিন্তু শেষমেশ বেটস পরিবারের হাতেই থেকে যায় দেশের মালিকানা। এখন এই দেশের জনসংখ্যা কত শুনবেন? মাত্র তিন থেকে চারজন! হাতেগোনা বাকি আরও কয়েকজন থাকলেও তাঁরা স্থায়ীভাবে থাকেন না। এখানে যেতে গেলে সঠিকভাবে পাসপোর্ট দেখিয়ে ঢুকতে হবে। সেইসঙ্গে আছে দেশটির নিজস্ব ওয়েবসাইট।
রয় বেটস এখন আর বেঁচে নেই। তাঁর জায়গায় সিল্যান্ডের দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন ছেলে মাইকেল বেটস। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার কী জানেন? এখনও কোনও দেশ সিল্যান্ডকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। মানচিত্রে দেখা গেলেও সিল্যান্ড নিজেকেই সার্বভৌম দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ, দাবি তাদের। কিন্তু দেশের মতো দেখতে কি! তখন খানিক অবাক হতেই হবে আপনাকে।