রোজ পাতে ডাল, বড় ভুল হচ্ছে না তো? যে তথ্য জানতেই হবে
নিরামিষ পাতে অথবা কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে বিউলির ডাল, মটর ডাল এবং অড়হর ডালের জুড়ি মেলা ভার।
বেশিরভাগ বাঙালি পরিবারেই দুপুরের খাবারে ডাল থাকে। স্বাদগন্ধের হেরফের থাকলেও ডাল খান অন্যান্য প্রদেশের সাধারণ মানুষও। দুপুরে বেশিরভাগ মানুষেরই প্রিয় খাবার হলো ভাত এবং ভাতের সঙ্গে মসুর ডাল কিংবা মুগ ডাল প্রতিটি বাঙালিরই অত্যন্ত পছন্দের। শুধু কি তাই, সকালে কিংবা রাতে অথবা রবিবারে পাতে লুচি থাকলে তার সঙ্গে ছোলার ডাল মাস্ট। নিরামিষ পাতে অথবা কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে বিউলির ডাল, মটর ডাল এবং অড়হর ডালের জুড়ি মেলা ভার।
সব মিলিয়ে বর্তমানে বাঙালি পরিবার-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যগুলিতে ডালের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এক্ষেত্রে শুধু কি স্বাদের বৈচিত্র, তা একদমই নয়। বিভিন্ন পুষ্টিগত দিক থেকেও একাধিক গুণধারী হলো এই খাবারটি। বিশেষত, যেখানে চিকিৎসক মহলের মতে, আমাদের প্রতিদিনের জীবনে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেয়ে চলা জরুরি; সেখানে এটির ভূমিকা আরো বহুগুণে বেড়ে যায়। আমরা সকলেই জানি, ডালের মধ্যে যে পরিমান প্রোটিন থাকে, তা অন্য কোন খাবারে পাওয়া বেশ মুশকিল। তাই চিকিৎসকদের মতে, প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ ডাল খেলে আমাদের প্রোটিনের চাহিদা যেমন পূরণ হয়, ঠিক তেমনভাবে ফাইবার সহ অন্যান্য একাধিক পুষ্টির চাহিদা মেটায় এটি।
এক্ষেত্রে অবশ্য মুদ্রার দুই পিঠই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি জিনিসের মত ডালেও উপকারের পাশাপাশি ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। এমন অনেক মানুষ বর্তমানে রয়েছেন যারা কেবলমাত্র প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করার জন্য তিনবেলা ডাল খেয়ে চলেন। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, এর ফলে উপকারের পরিবর্তে অনেক সময় শরীরে ক্ষতিকর দিকটিও আমরা নিজেদের অজান্তেই ডেকে আনি। ডাল জাতীয় খাবার যদি অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা হয়, তবে বেশ কয়েকটি ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে আমাদের শরীরে।
ডাল জাতীয় শস্য-এ প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এক্ষেত্রে ফাইবার বলতেই আমাদের প্রথম যেটি মাথায় আসে, তা হল এটি আমাদের হজমশক্তিকে ভালো রাখার পাশাপাশি সুঠাম দেহ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে যারা শরীরচর্চা করেন, তাদের ক্ষেত্রে অনেকেই অতিরিক্ত পরিমাণে ফাইবার গ্রহণ করে থাকেন। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র সিক্স প্যাক অ্যাবস(six pack abs) কিংবা সুঠাম চেহারা তৈরি করাই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়, তার থেকেও অনেক জরুরি হলো এমন শরীর গড়ে তোলা, যা সমস্ত পরিস্থিতিতে লড়াই করতে সক্ষম। অতিরিক্ত ফাইবার পাতে থাকলে হজমের গোলমাল হতে বাধ্য। যা পেটের গোলমাল কিংবা আমাশার মতো একাধিক সমস্যা ডেকে আনতে পারে। বিশেষত, যাদের আগে থেকেই পেটের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসক দ্বারা কম ফাইবার নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ফলে আপনিও যদি এই সমস্যার ভুক্তভোগী হয়ে থাকেন, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে ডাল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
ডালের ভিতর দুই রকমের ফাইবার থাকে। একটি হলো দ্রবণীয় এবং অপরটি হলো অদ্রবণীয়। ফলে স্বভাবতই ডাল জাতীয় খাবার যদি আপনি বেশি পরিমাণে গ্রহণ করেন, তবে এই ফাইবারগুলির কারণে আপনার শরীর অধিক পরিমাণে জল চাইবে। তবে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে অনেক সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। ডালের পরিমাণ অধিক এবং জলের পরিমাণ কম রাখলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা শুরু হতে পারে। ফলে মনে রাখতে হবে, অধিক পরিমাণ ডাল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন নয়তো সঠিক পরিমাণে জল পান করুন; যাতে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।
ডাল খেলে আমাদের শরীরে প্রোটিনের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা যায়, এ কথা ঠিকই। নিয়মিত শরীরচর্চা করে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করার জন্য যেমন ডালকে বেছে নেয় ঠিক তেমনভাবে নিরামিষভোজীরাও প্রোটিনের প্রয়োজনে ডাল খেয়ে থাকেন। তবে জেনে রাখা দরকার, ডিম কিংবা মাংস থেকে আমরা সম্পূর্ণ পরিমাণে প্রোটিন পেয়ে থাকি। কিন্তু ডাল থেকে সেই সম্পূর্ণ প্রোটিন পাওয়া কখনো সম্ভব নয়। কারণ, এর মধ্যে প্রয়োজনীয় মিথিওনাইন প্রোটিন থাকে না। আপনি যদি ভেবে থাকেন যে, শুধুমাত্র ডাল খেলে আপনার শরীরের সম্পূর্ণরূপে প্রোটিন প্রবেশ করবে, তাহলে আপনার এই ধারণা ভুল।
অন্য দুটি সমস্যার কথা জেনে রাখা দরকার, তা হলো এলার্জি এবং মাইগ্রেন। প্রথমত, অনেক সময় ডাল জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেলে বহু মানুষের অ্যালার্জির সমস্যা দেখা যায়। তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার গ্রহণ করলে এই সমস্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায় না। কিন্তু সমস্যা তখনই হয়, যদি আপনি খাবারের পরিমাণ আচমকাই বৃদ্ধি করে দেন। দ্বিতীয়ত, মাইগ্রেনের সমস্যা। অতিরিক্ত পরিমাণে ডাল জাতীয় শস্য গ্রহণ করলে মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। এই প্রসঙ্গে অতীতে একাধিক মানুষের ওপর সমীক্ষা চালানো হয় এবং সেখানে উঠে আসে এই তথ্য। ফলে আপনার যদি মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে থাকে, তবে ডায়েটে অধিক পরিমাণে ডাল রাখা উচিত হবে না।
তবে একথাও ঠিক সঠিক পরিমাণে ডাল খেলে তা আপনার শরীরে কোনো রকম ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না। বরং ওজন নিয়ন্ত্রণ -সহ প্রোটিনের চাহিদা পূরণ এবং হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এই খাবার।
ওজন নিয়ন্ত্রণ
আমরা জানি ডাল প্রোটিন এবং ফাইবার দ্বারা সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। অর্থাৎ আপনি যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ ডাল খেতে পারেন, তবে তা বেশ কিছুটা পরিমাণে প্রোটিনের চাহিদা যেমন পূরণ করতে পারে, ঠিক তেমনভাবে এর মধ্যে উপস্থিত ফাইবার আপনার ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে।
সুস্থ হার্ট
নির্দিষ্ট পরিমাণে ডাল আপনার হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বর্তমানে যেভাবে সকল দেশবাসীর মধ্যে হার্টের অসুখ বেড়ে চলেছে তাতে এই খাবারটি গ্রহণ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ডাল রান্না করার সময় অতিরিক্ত লবণ কিংবা তেল দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এক্ষেত্রে আপনি গোলমরিচ কিংবা কালো মরিচ ব্যবহার করতে পারেন।