প্রণামের ছলে আরডিএক্স বিস্ফোরণ! রাজীব হত্যায় ফাঁসির সাজা পেয়েও কেন মুক্ত নলিনী শ্রীহরণ?
Rajiv Gandhi Assassination: মালা পরিয়ে দিয়ে ধানু রাজীব গান্ধীকে প্রণাম করার জন্য নিচু হয় এবং সেই সময় পোশাকের নিচে বাঁধা ৭০০ গ্রাম ওজনের RDX ভর্তি বেল্টের ট্রিগার টেনে দেয়।
দীর্ঘ ৩১ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে মুক্তি। জেল থেকে ছাড়া পেলেন রাজীব গান্ধী হত্যা মামলার মূল দোষী নলিনী শ্রীহরণ। আর জেলমুক্ত হয়ে প্রথমেই রাজীব গান্ধীর পরিবারের প্রতি অনুতাপ প্রকাশ করলেন তিনি। নলিনী বললেন, "আমি সত্যিই দুঃখিত। সেই দিন বিস্ফোরণে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করছি। যা হয়েছে তার জন্য আমি অনুতপ্ত।" এছাড়াও তিনি আরও বললেন, "এটা নিয়ে আমরা অনেক বছর ধরে ভেবেছি। আমরা এর জন্য অনুতপ্ত। ওঁরা ওঁদের কাছের মানুষকে হারিয়েছেন। আমরা আশা রাখি এই যন্ত্রণা থেকে কখনও ওঁরা মুক্তি পাবেন।"
১৯৯১ সালের ২১ মে তামিলনাড়ুর শ্রীপেরুমবুদুরে এলটিটিই সদস্য এক নারীর আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। একটি নির্বাচনী জনসভায় রাজীব গান্ধীকে মালা দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়ার ছলে নিজের এই বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন হামলাকারী মিস ধানু। রাজীব গান্ধী এবং মিস ধানু সহ ১৬ জন ওই ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছিলেন। আর সেই ঘটনায় আহত হয়েছিলেন ৪৫ জন।
আদালতের আদেশে মুক্ত একমাত্র জীবিত সদস্য
শুক্রবার আদালতের নির্দেশে যাঁরা যাঁরা মুক্তি পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নলিনী শ্রীহরণও, যিনি রাজীব গান্ধীকে হত্যার জন্য গঠিত এলটিটিই-র ৫ সদস্যের আত্মঘাতী বোমারু দলের একমাত্র জীবিত সদস্য ছিলেন। তার সঙ্গেই মুক্তি পেয়েছেন নলিনীর স্বামী মুরুগান। এছাড়াও, এদিন আদালতের আদেশে মুক্তি পেয়েছেন সন্থান, যিনি আদতে ছিলেন শ্রীলঙ্কার নাগরিক। আরও দু'জন ১৯৯০ সালে উদ্বাস্তু হিসেবে শ্রীলঙ্কা থেকে তামিলনাড়ুতে এসেছিলেন। এ বছর মে মাসের সংবিধানের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও একজন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী পেরারিভালানকে মুক্তি দিয়েছিল শীর্ষ আদালত।
আগে ফাঁসির আদেশ, আর এখন মুক্তি
এলটিটিই সদস্য নলিনী শ্রীহরণ সহ বাকি আসামীদের গতকাল শীর্ষ আদালত মুক্তির নির্দেশ দিলেও এদের মধ্যে চারজনকে এর আগে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল এই সুপ্রিম কোর্টই। আর তিনজনকে দেওয়া হয়েছিল যাবজ্জীবন মৃত্যুদণ্ডের আদেশ। নিম্ন আদালত অবশ্য ধৃত ২৬ জনেরই ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল।
আরও পড়ুন- রাজীব হত্যার অভিযোগে জেল কুঠুরিতে কাটল ৩১টা বছর! কেমন ছিল নারকীয় দিনগুলো?
তবে রাজীব গান্ধীর স্ত্রী সোনিয়া গান্ধী ২০০০ সালে নলিনীকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই এই মামলার মোড় পরিবর্তন হয়। এরপর ২০১৪ সালে বাকি ফাঁসির আসামীদের মৃত্যুদণ্ড সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে রদ করে দেওয়া হয়। সেই সময় আদালতের তরফ থেকে যুক্তি দেখানো হয়েছিল, আসামীদের ক্ষমা ভিক্ষার আর্জি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে রয়েছে, এবং সেই কারণেই তাঁদের মৃত্যুদণ্ড রদ করা হলো।
মুক্তির জন্য দীর্ঘ আইনি লড়াই
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত এই আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে মুক্তি পাওয়ার জন্য আইনের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। এরা সবাই প্রায় তিন দশক ধরে রয়েছেন কারাগারে, এই যুক্তি দেখিয়ে ২০১৮ সালে তামিলনাড়ুর মন্ত্রিসভা আসামীদের মুক্তি দেওয়ার জন্য রাজ্যপালের কাছে সুপারিশ করে। সুপ্রিম কোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চ শুক্রবার তাদের রায় ঘোষণা করেছে যে, দোষীরা জেলে থাকার সময়টায় পড়াশোনা করেছেন এবং ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং তাদের ব্যবহারও ভালো ছিল।
মুক্তির নির্দেশে স্বভাবতই কংগ্রেস অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে কংগ্রেস দল। এই প্রসঙ্গে কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ একটি বিবৃতিতে বলেছেন, রাজীব গান্ধীর খুনিদের ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ভুল। সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে ভারতের ভাবাবেগের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। তবে তামিলনাড়ুর রাজনীতি রাজীব গান্ধীর হত্যাকারীদের নিয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত ভাবে কাজ করে। সেখানে কিন্তু কংগ্রেস কিংবা তাদের ভাবাবেগ খুব একটা বড় ফ্যাক্টর নয়। ডিএমকে হোক বা এআইএডিএমকে যে দলই রাজ্য সরকারে থেকেছে, তারাই এই আসামীদের মুক্তির জন্য সরব হয়েছে, কারণ সেখানকার একাংশ মনে করেন এই দোষীরা ছিলেন আসলে দাবার বোড়ে। রাজীব গান্ধীর হত্যার মূল চক্রান্ত সম্বন্ধে এরা বিশেষ কিছুই জানতেন না।
রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ড ও এলটিটিই যোগ
রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ খোঁজার জন্য যেতে হবে ঠিক বত্রিশ বছর পিছনে। বিরোধী দলের নেতা থাকাকালীন ১৯৯০ সালে সানডে ম্যাগাজিনে ২১ অগাস্টের সংখ্যায় রাজীব গান্ধী একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেই সাক্ষাৎকারে একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, পরবর্তী নির্বাচনে যদি প্রধানমন্ত্রিত্ব তিনি পান তাহলে শ্রীলঙ্কায় আবারও ভারতীয় শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানো হবে। এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ হওয়ার পর লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম বা এলটিটিই মরিয়া হয়ে ওঠে রাজীব গান্ধীকে হত্যা করার জন্য। সেই সময় সমস্ত জরিপ অনুযায়ী রাজীব গান্ধী ছিলেন অন্যান্যদের থেকে অনেকটা এগিয়ে। এলটিটিই হিসাব কষে দেখেছিল, রাজীব গান্ধীর কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ভারতীয় শান্তিরক্ষা বাহিনী এসে যোগ দেবে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর সঙ্গে। ফলে বেশ খানিকটা কঠিন হয়ে যাবে তাঁদের যুদ্ধ। এর সঙ্গেই যোগ হয়েছিল আগের পুষে রাখা ক্ষোভ, যার কারণ ছিল ইন্দিরা গান্ধীর এলটিটিইকে সমর্থন।
ইন্দিরা গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন এলটিটিইকে সমর্থন করেছিলেন তিনি। সেই জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ পেতেন সরাসরি ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী মারা যাওয়ার পর যখন রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হলেন সে সময় এলটিটিই অত্যন্ত লাগাম ছাড়া হয়ে গিয়েছিল। ভারতীয় আধিকারিকদের তোয়াক্কা করত না তারা। তার পাশাপাশি 'গেরিলা মনোভাব' এবং 'সমস্ত তামিলদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র'- এই বীজ বপন শুরু হয়েছিল ভারতের তামিলনাড়ুর বাসিন্দাদের মনের মধ্যে। এই কারণে রাজীব গান্ধী প্রশাসন ঠিক করেছিল লাগাম টেনে ধরতে হবে। যে কারণে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল অর্থ এবং অস্ত্র সরবরাহ। তবে এতেও, এলটিটিই নেতা প্রভাকরণের ঔদ্ধত্য না কমলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ভারতীয় শান্তিরক্ষা বাহিনী। আর এটাই ছিল এলটিটিইর জন্য বিশ্বাসঘাতকতা।
এই জঙ্গি সংগঠনটি ঠিক করে, নির্বাচন প্রচারণা চলাকালীন সময় রাজীব গান্ধীকে হত্যা করবে তারা, কারণ এই সময় তিনি বিরোধী দলের নেতা হিসেবে নিরাপত্তা পাচ্ছেন। যদি আবার তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান তাহলে তাঁকে ঘিরে শক্ত নিরাপত্তা বলয় তৈরি হয়ে যাবে, তখন আর তাঁকে হত্যা করা সহজ হবে না। সেইমতো ১৯৯০ সালের নভেম্বর মাসে এলটিটিই নেতা প্রভাকরণ তাঁর বিশ্বস্ত যোদ্ধা বেবি সুব্রামনিয়াম, মুরুগান, মথুরাজা এবং শিবরাসান নির্দেশ দেন রাজীব গান্ধীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার। বেবি সুব্রামনিয়াম সেই সময় ছিলেন একটি প্রিন্টিং প্রেসের মালিক। সেই সূত্রে ভারতীয় তামিলদের মধ্যে এলটিটিইর এজেন্ডা ছড়িয়ে দিতে এবং সহানুভূতি আদায় করার জন্য তিনি কাজ করতেন।
অন্যদিকে, মুরুগান ছিলেন একজন গেরিলা প্রশিক্ষক এবং বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। মুরুগান মাদ্রাজে বসবাসকারী তিন তামিল আরিভু, ভাগ্যনাথান এবং তাঁর বোন নলিনীকে দলে নিয়ে শুরু করেন প্রশিক্ষণ। এই তিনজনের আগে থেকেই এলটিটিইর প্রতি সহানুভূতি ছিল। আরিভু ছিলেন কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা এবং তিনি বোমা বানাতে পারদর্শী ছিলেন। সুব্রামনিয়াম তাঁদেরকে বুঝিয়েছিলেন, রাজীব গান্ধীর পররাষ্ট্রনীতির কারণেই শ্রীলঙ্কায় তামিলদের এত খারাপ অবস্থা। সেই কারণে রাজীব গান্ধীকে হত্যা করতে হবে, তবেই ভারতকে একটা উচিত শাস্তি দেওয়া যাবে। আর মধু রাজা ছিলেন একজন স্থানীয় সংবাদ কর্মী এবং ফটোগ্রাফার। তবে সেখান থেকে হরিবাবু নামের এক তরুণ বেপরোয়া ফটোগ্রাফারকে তিনি তাঁদের দলে নিয়ে আসেন।
১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শিভরাসান শ্রীলঙ্কা থেকে মাদ্রাজে (বর্তমান চেন্নাই) আসেন সমস্ত অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য। কিন্তু ততদিনে মথুরাজা, আরিভু, সুব্রামনিয়াম, মুরুগান, ভাগ্যনাথান, এবং নলিনীর ব্রেনওয়াশ করা হয়ে গেছে। তাঁদের মাথায় তখন একটাই কথা ঘুরছে, যদি রাজীব গান্ধী আবার ক্ষমতায় আসেন তাহলে তামিলদের স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে। শিবরাসান নিজেও ছিলেন একজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ এবং তিনি আরিভুকে নির্দেশ দিয়েছিলেন এমন একটা বিস্ফোরক বানাতে যা লুকিয়ে বহন করা যায়।
শিবরাসান শ্রীলঙ্কায় ফেরত যান মার্চ মাসে আর সেখান থেকে এলটিটিই আত্মঘাতী স্কোয়াডে দুইজন সদস্য ধানু এবং সুভাকে নিয়ে আবার ফেরত আসেন মাদ্রাজে। ধানু এবং সুভা দুজনেই ছিলেন তাঁর খুড়তুতো বোন। মাদ্রাজে এসে ধানু এবং সুভা নলিনীর সঙ্গে থাকতে শুরু করে। এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে শিবরাসান আরিভুকে নির্দেশ দেয় কীরকম ধরনের বোমা লাগবে তা তৈরি করতে। অল্পদিনের মধ্যেই বোমা বানিয়েও ফেলে আরিভু যা সহজেই একজন মহিলা লুকিয়ে তাঁর শরীরে বেঁধে নিতে পারবেন। মুরুগান স্থানীয় একজন দর্জিকে দিয়ে এই বোমা ফিট করার জন্য একটি জামা তৈরি করেন।
আরও পড়ুন- সনিয়ার কন্যাদান করেন হরিবংশ রাই বচ্চন! কীভাবে নষ্ট হল অমিতাভ-রাজীব গান্ধীর বন্ধুত্ব?
এপ্রিল মাসের ২১ তারিখ এবং মে মাসের ১২ তারিখ মুরুগান হরিবাবু, ধানু এবং সুভাকে নিয়ে দু'টি জনসভায় যান এবং সেখানে নির্দেশ দেন মঞ্চের কাছে যেতে এবং যদি পারা যায় নেতাদের প্রণাম করতে। ধানু দুই জায়গাতেই প্রণাম করতে সফল হয় এবং সেই ছবি তুলে রাখে হরিবাবু।
এরপর, সকলেই অপেক্ষা করতে থাকে সঠিক সুযোগের। মে মাসের ১৯ তারিখ স্থানীয় পত্রিকায় খবর আসে, ২১ মে শ্রীপেরুমবুদুরে নির্বাচনী জনসভায় যোগদান করতে আসবেন রাজীব গান্ধী। এই পত্রিকার একটি কপি নিয়ে আসেন শিভারাসান। ধানু এবং সুভাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় ২১ তারিখ ঠিক কি করতে হবে। ২০ তারিখ বার কয়েক রিহার্সালও দেওয়া হয়। ২১ তারিখ বিকেলে শিভারাসান সকলকে নিয়ে রওনা দেন। বাসস্ট্যান্ডে এসে মিলিত হন হারিবাবুর সঙ্গে। হরিবাবুকে এর আগেই বলা হয়েছিল একটি ফুলের মালা নিয়ে আসার জন্য। একসঙ্গে মিলিত হয়ে পাঁচজন বাসে চড়ে পৌঁছন রাজীব গান্ধীর জনসভায়। রাত ৮:০০ টায় দলটি পৌঁছে যায় সেই সভাস্থলে। ধানুর শরীরে তখন বাঁধা রয়েছে বিস্ফোরক।
তাঁরা ধীরে ধীরে এগিয়ে যান ভিআইপি বেষ্টনীর কাছে। অপেক্ষা করতে থাকেন রাজীব গান্ধীর আগমনের। রাত সাড়ে আটটার সময় অনুসুয়া কুমারী নামের একজন মহিলা সাব ইন্সপেক্টর এসে তাঁদের নাম এবং পরিচয় জানতে চান। হরিবাবু তাঁকে জানান, তিনি একজন প্রেস ক্যামেরাম্যান এবং তাঁর ডিউটি এই মহিলা (ধানু) যখন রাজীব গান্ধীকে মালা পরিয়ে দেবেন সেইটার ছবি তোলা। অনুসূয়া কুমারী তাদের এখান থেকে সরে দাঁড়াতে বলেন কারণ রাজীব গান্ধী প্রায় চলে এসেছেন।
সুভা এবং নলিনী একটু দূরে গিয়ে বসেন। হরিবাবু এবং ধানু রেড কার্পেটের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন আর শিভারাসান মঞ্চের কাছে গিয়ে দাঁড়ান। ধানু এবং হরিবাবুর গতিবিধির উপরে সন্দেহ হওয়ায় অনুসূয়া কুমারী তাঁদের প্রতি নজর রাখতে শুরু করেন। ঠিক দশটা নাগাদ রাজীব গান্ধী এসে পৌঁছন মঞ্চে। সমর্থক পরিবেশিত হয়ে মঞ্চের দিকে এগিয়ে যান। অনেক সমর্থকদেরকে মালা পরিয়ে দিতে শুরু করেন। এই সময় ধানুও তাঁর দিকে এগিয়ে যান। অনুসূয়া একবার তাঁকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু রাজীব গান্ধীর নজর পড়ে সেই দিকে। তিনি অনুসূয়া কুমারীকে ইশারা করেন, ধানুকে কাছে আসতে দিতে।
অনুসূয়া কুমারী সরে দাঁড়ান, রাজীব গান্ধীর কাছে এগিয়ে এসে তাঁকে মালা পরিয়ে দেন ধানু। একটু দূর থেকে ছবি তোলেন হরিবাবু। মালা পরিয়ে দিয়ে ধানু রাজীব গান্ধীকে প্রণাম করার জন্য নিচু হয় এবং সেই সময় পোশাকের নিচে বাঁধা ৭০০ গ্রাম ওজনের RDX ভর্তি বেল্টের ট্রিগার টেনে দেয়। বিস্ফোরণের আঘাতে রাজীব গান্ধীর দেহ প্রায় ২ মিটার দূরে ছিটকে পড়ে, মৃত্যু হয় তৎক্ষণাৎ।
পাশাপাশি ধানুর শরীরও ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। মাথা গিয়ে পড়ে ২৪ মিটার দূরে। এর সঙ্গেই মারা গিয়েছিলেন আরও ১৪ জন যাদের মধ্যে একজন ছিলেন হরিবাবু। হরিবাবু হয়তো জানতেন, ধানু শুধুমাত্র রাজীব গান্ধীকে প্রণাম করে চলে আসবে। কিন্তু বিস্ফোরণের আঘাতে হরিবাবুর প্রাণ চলে যায় মুহূর্তেই। কিন্তু তাঁর ক্যামেরাটি ছিল তখনও জীবিত। সেই ক্যামেরা থেকেই এই পুরো হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা এবং সেই সম্পর্কিত বিভিন্ন ছবি খুঁজে পান ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীরা।
হত্যা তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের আইজিডিআর কার্তিকেয়নের নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠিত হয়। কয়েক মাসের মধ্যেই সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। মূল অভিযুক্ত শিভারাসান এবং তাঁর কয়েকজন সঙ্গী ধরা পড়ার আগেই সায়ানাইড বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে। আর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান নলিনী শ্রীহরণ।