ভারতবর্ষে চিকিৎসার খরচ বা মেডিক্যাল এক্সপেন্সেস বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন?

মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে ভারতবর্ষে দিন দিন বাড়ছে চিকিৎসাবিদ্যার খরচ। তুলনামূলক ভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের থেকে ভারতবর্ষে চিকিৎসার খরচ কম হলেও ভারতবাসীদের কাছে আজকের দিনে ঠিক কতটা পকেট ফ্রেন্ডলি চিকিৎসা বিদ্যার খরচ? এই প্রশ্নের উত্তরের সন্ধান করতে গেলে জানতে পারবেন যত দিন যাচ্ছে তত বাড়ছে মেডিক্যাল এক্সপেন্সেস। সামান্য হেলথ চেকআপ, টেস্ট রিপোর্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন জটিল জটিল রোগ নিরাময়ের খরচ হয়েছে আকাশছোঁয়া। যা সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু কেন? আসুন জেনে নেওয়া যাক।

■ চিকিৎসার দাম :

মেডিক্যাল ইনফ্লেশন দিন দিন বেড়েই চলেছে ভারতবর্ষে। কারণ হিসাবে দেখতে গেলে দেখা যাবে মেডিক্যাল সাপ্লাই যথা কাঁচা মাল, সার্ভিস ইত্যাদির মূল্য ইদানিং কালে রেকর্ড সংখ্যক বেড়েছে গোটা বিশ্বব্যাপী। ট্যাক্স বা কর, বহন ভাড়া, ওয়ারহাউসের ভাড়া ইত্যাদি যত বাড়ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে দিয়ে বাড়ছে চিকিৎসার দাম ও। সাধারণত কোনও দ্রব্যের দাম বাড়লে তার চাহিদা কমতে থাকে বাজারে, কিন্তু চিকিৎসা এমন এক জরুরি কমডিটি যার মূল্য যতই বাড়ুক না চাহিদার কখনও ঘাটতি হয় না। মানুষ বাঁচতে চায়। তাই মূল্যবৃদ্ধি হলেও সে চায় তার শেষ অবলম্বনটুকুর সাহায্য নিয়েও বেঁচে থাকতে। তাই চাহিদার অভাব না হওয়ায় মূল্যবৃদ্ধির এই ঘনঘটা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে আরও।

ভারতবর্ষে চিকিৎসার খরচ বা মেডিক্যাল এক্সপেন্সেস বৃদ্ধি

ছবি সৌজন্যে: Google || চিকিৎসার খরচ বা মেডিক্যাল এক্সপেন্সেস বৃদ্ধির একটি নমুনা

■ হেল্থকেয়ার সামগ্রীর আধুনিকীকরণ :

মারণ রোগগুলোর মুখ থেকে রুগীদের জীবনের স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য হেল্থকেয়ার সামগ্রীর আধুনিকীকরণ চিরন্তন। মারণ রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত বিশেষ বিশেষ যন্ত্রগুলো আধুনিক প্রযুক্তির দ্বারা সমৃদ্ধ। এই মেশিনাড়িগুলো ব্যবহার করতে প্রয়োজন দামি দামি টেকনিশিয়ান, দামি দামি সফ্টওয়্যার। যা এর ব্যবহারের মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে আরও। এই সমস্ত আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ মেডিক্যাল যন্ত্রপাতিগুলোর বেশিরভাগটাই ভারতবর্ষে আমদানি করা হয় বিদেশ থেকে। ফলাফল হিসাবে হসপিটাল, নার্সিংহোম কতৃপক্ষকে খরচ করতে হয় একটা বিপুল অংকের টাকা। যা মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়।

■ স্বাস্থ্য পর্যটন :

বিদেশের বহু রুগী ভারতবর্ষে আসেন যেহেতু তাদের দেশের তুলনায় ভারতবর্ষে রোগ নিরাময়ের খরচ কম। ক্যান্সার, কিডনি ফেলিওর, অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট, আয়ুর্বেদ ইত্যাদি বিভিন্ন বিভিন্ন জটিল রোগের নিরাময় ভারতবর্ষে অন্যান্য দেশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত সস্তা। তাই তারা নিজেদের খরচ বাঁচাতে ভারতবর্ষে এসে চিকিৎসা করানো পছন্দ করেন। যার ফলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়। চাহিদা বৃদ্ধি পেলে এবং সাপ্লাই লিমিটেড হলেই মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। বড় বড় নার্সিংহোমগুলো নিজেদের ছবি পরিষ্কার রাখতে, এবং বিদেশি রুগীদের আকৃষ্ট করতে বেশি বেশি বিজ্ঞাপন দেন, বড় বড় ডাক্তার রাখেন, আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় বেশি নজর দেন। যে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসার মূল্যবৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

■ উপার্জনের ভেদাভেদ :

ভারতবর্ষে স্পষ্টত ভাবে উপার্জনের ভেদাভেদ লক্ষণীয়। গরিবরা দিন দিন আরও গরিব হয়ে যাচ্ছে, বড়োলোকেরা আরও বড়লোক। উঁচু পদের কর্মীর সাথে নিচু পদের কর্মীর বেতনের বিশাল ফারাক, বিভিন্ন ধরণের জোচ্চুরি, স্ক্যাম, অপরাধ, শিক্ষার অভাব, সুযোগের অভাব এর মূল কারণ। ফলস্বরূপ বড়োলোকেরা চিকিৎসার এই ক্রমবর্ধমান মূল্যের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছেন। যথা যে বড়লোক ক্যান্সার পেশেন্ট একটা কেমো নিতে খরচ করছেন লাখ লাখ টাকা, সেই একই কেমো নেওয়ার খরচ জোগাড় করতে হিমসিম খাচ্ছেন কোনও গরিব ক্যান্সার পেশেন্ট। কিন্তু মেডিক্যাল কতৃপক্ষের তাতে কোনও হেলদোল নেই, তারা মূল্য হ্রাস করছে না কারণ, বড়লোক রুগীদের দ্বারা তাদের ডিমান্ড পূরণ হয়েই যাচ্ছে।

■ প্যান্ডেমিক :

ইদানিংকালে প্যান্ডামিক মেডিক্যাল মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। মেডিক্যাল সাপ্লাইয়ের আমদানি তে যে সাময়িক বিরতি তার ফলে দেশের মধ্যে সাপ্লাইয়ের অভাব দেখা যাচ্ছে। সাপ্লায়ের দের কাছে সীমিত স্টক রুগীদের চাহিদা পূরণ করতে অক্ষম হচ্ছে। ফলে বাড়ছে কালোবাজারি। ইঞ্জেকশন থেকে শুরু করে অক্সিজেন সিলিন্ডার, সমস্ত কিছুরই দাম বাড়ছে।

■■ উপায় কী?

মূল্যবৃদ্ধির এই ক্রমবর্ধমান বাজারে নিজেকে বাঁচানোর উপায় একটাই, হেল্থ ইন্স্যুরেন্স বা মেডিক্লেম। মেডিক্লেম যে কোনও রুগীর একমাত্র অস্ত্র, চিকিৎসা খরচের ক্রমবৃদ্ধিমান এই রমরমা বাজারে মাথা তুলে নির্ভয়ে দাঁড়িয়ে থাকার।

Source: www.careinsurance.com

More Articles