সেমিনার রুম নয়? কেন আরজি করের বন্ধ লিফটকেই রহস্যের চাবিকাঠি বলছে সিবিআই?
RG Kar Lift Mystery: সেমিনার রুমেই তিলোত্তমাকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়, নাকি অন্যত্র খুন করে দেহ এনে সাজিয়ে রাখা হয় সেমিনার রুমে?
ধর্ষণ ও হত্যার একমাস অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। সিবিআই তদন্তভার নেওয়ারও একমাস হতে চলল। এই একমাসের মধ্যে আরজি কর হাসপাতালে এমন সব কাণ্ড ঘটে গিয়েছে যে রব উঠেছে সিবিআই কোনও প্রমাণ সংগ্রহই করতে পারবে না কারণ তথ্য প্রমাণ সবই লোপাট করা হয়েছে, ভেঙে ফেলা হয়েছে, সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, ঘে&টে দেওয়া হয়েছে। তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পরে সেমিনার রুমের ভাইরাল ভিডিওতে যে পরিমাণ ভিড় দেখা যায় তাতে স্পষ্ট বহু প্রমাণই নষ্ট। যেভাবে মৃত্যুর পরপরই সেমিনার রুম সংলগ্ন এলাকা মেরামতের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, তাতে স্পষ্ট 'ক্রাইম সিন' নষ্টের ভরপুর চেষ্টাই হয়েছে কর্তৃপক্ষের মদতে। কিন্তু এবার প্রশ্নটাই ঘুরে গিয়েছে। সেমিনার রুম কি আদৌ ক্রাইম সিন?
ঘটনার তদন্তভার এখন সিবিআইয়ের হাতে। সেমিনার রুমেই তিলোত্তমাকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়, নাকি অন্যত্র খুন করে দেহ এনে সাজিয়ে রাখা হয় সেমিনার রুমে? সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা হাসপাতালের ফ্লোর ম্যাপ খতিয়ে দেখছেন। বিশেষ করে অর্থোপেডিক বিভাগ, চেস্ট মেডিসিনের ফ্লোর ম্যাপ। কেন? কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বিশেষ জোর দিচ্ছে অর্থো বিভাগের ফ্লোর থেকে বেরনোর সিঁড়ি ও লিফট। ৮ তলার স্পেশ্যাল সার্জারি বিভাগের ওটি রুমটিও নজরে রয়েছে তাঁদের। চেস্ট মেডিসিনের ফ্লোর ম্যাপ দেখে বোঝা যাচ্ছে, লিফট কমপ্লেক্স থেকে সেমিনার রুমের দিকে যে রাস্তা চলে যাচ্ছে চেস্ট মেডিসিনের ওয়ার্ডের সামনে দিয়ে সেই রাস্তাটি এবং সঙ্গে আরও তিনটি রাস্তা বিশেষ খুঁটিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন- আরজি কর মর্গ দুর্নীতি: গভীর রাতে যে সব ভয়াবহ কুকর্ম চলত মর্গে!
এই লিফটে করে ওপরের কোন কোন বিল্ডিংয়ে যাওয়া যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আসলে তদন্তকারীরা নিশ্চিত হতে চাইছেন, সেমিনার রুমেই হত্যা ও ধর্ষণ হয়েছে নাকি এই লিফট ও অন্য রাস্তাগুলি ব্যবহার করে কুকর্ম করে দেহ সেমিনার রুমে এনে রাখা হয়েছে। দেহ যে অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল, চাদর যেভাবে পাল্টেছে, যেভাবে তিলোত্তমার জুতো পাশে খোলা ছিল, মাথার উপর হাত রাখা ছিল তাতে প্রশ্ন উঠছে ধস্তাধস্তির পরেও, খুন হয়ে যাওয়ার পরেও এভাবে কী করে দেহ পড়ে থাকতে পারে? দেহের পাশে ডায়েরি পাওয়া যায়, যার কয়েকটি পাতাও ছিল ছেঁড়া। কারা ছিঁড়ল? কখন ছিঁড়ল?
আরও পড়ুন- আরজি কর: ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহে গাফিলতি? কতটা ক্ষতি করতে পারে তদন্তের?
তরুণী চিকিৎসকের দেহ যেখানে পাওয়া গেছে অর্থাৎ সেমিনার রুমের বাইরেই একটি বন্ধ লিফট রয়েছে। এই লিফটির সঙ্গে অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের যোগাযোগ আছে। আট তলায় অর্থোপেডিক-সহ বিভিন্ন বিভাগের ওটি আছে। তবে বিকেল পাঁচটার পর ওটি রুম খোলা হয় না। এই ঘরের চাবি কর্তৃপক্ষের কাছেই থাকে। ধর্ষণ ও হত্যার রাত্রে কি ওটি রুম খোলা হয়েছিল? বন্ধ লিফট ব্যবহার করা হয়েছিল? যদি খোলা হয়ে থাকে তাহলে কারা খুললেন? চাবি তো থাকে কর্তৃপক্ষের কাছে!
কলকাতা পুলিশ জানিয়েছিল, আরজি করের জরুরি বিল্ডিংয়ের চার তলায় যেখানে পালমোনারি মেডিসিন বিভাগ আছে সেখানে একটিই মাত্র সিসি ক্যামেরা রয়েছে। সেটির ফুটেজেই ধৃত সঞ্জয় রায়কে সেমিনার হলের দিকে যেতে দেখা গিয়েছিল। যদিও বাস্তবে ওই সিসিটিভি থেকে লম্বা করিডোরের একটা অংশই দেখা সম্ভব। ওই অংশ থেকে ডানদিকে রাস্তা বেঁকে যাচ্ছে নার্সিং স্টেশনের দিকে। সেমিনার হল তারও ভিতরে রয়েছে। নার্সিং স্টেশন পেরিয়েই ছোট লিফটের পাশ দিয়ে বাঁদিকে ঘুরে তবে সেমিনার হলে যাওয়া যায়। অর্থাৎ ওই জায়গার ফুটেজ নেই। সঞ্জয়ই ঢুকে খুন করেছে কিনা পোক্ত প্রমাণ কি আছে? সেমিনার রুম সংলগ্ন অংশে মেরামতির নির্দেশ দিয়ে সন্দীপ ঘোষ কি আসলে নজর ঘোরাতে চেয়েছিলেন তবে? উত্তর খুঁজছে সিবিআই।