পশুর মতো প্রবৃত্তি! ধৃত সঞ্জয় রায়ের মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা যা বলছে

RG Kar Rape Accused Psychoanalytic Test: প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সঞ্জয় রায় ৮ অগাস্ট মধ্যরাতের পরে উত্তর কলকাতায় সোনাগাছির যৌনপল্লীতেও গেছিলেন।

আরজি করে কর্তব্যরত তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে এখনও অবধি একজনকেই গ্রেফতার করতে পেরেছে কলকাতা পুলিশ। তারপর অবশ্য মামলার তদন্তভারটাই চলে যায় সিবিআইয়ের হাতে। সিবিআই নতুন করে শুরু থেকে খতিয়ে দেখছে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ ও জবানবন্দি। তদন্তের ভার হাতে নিয়েই ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের মনস্তাত্ত্বিক প্রোফাইল তৈরির নির্দেশ নিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেই রিপোর্ট হাতে এসেছে সিবিআইয়ের। আরজি করে ডাক্তারের ধর্ষণ ও খুনের মামলার প্রধান অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের মনস্তাত্ত্বিক প্রোফাইল বলছে, পর্নোগ্রাফিতে মারাত্মক আসক্ত ছিলেন তিনি। 'পশুর মতো প্রবৃত্তি' ছিল সঞ্জয়ের। এই অপরাধের জন্য কোনও অনুশোচনা নেই তার, জানিয়েছেন সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের একজন আধিকারিক।

সিবিআই গত ১৮ অগাস্ট সিএফএসএল-এর বিশেষজ্ঞদের ধৃত সঞ্জয় রায়ের নতুন করে মনস্তাত্ত্বিক প্রোফাইল তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল। কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করা হয় গত ১০ অগাস্ট। ৯ অগাস্ট আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৩১ বছর বয়সি ওই তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছিল ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে। যদিও তারপর বহু সময় কেটে গেলেও সঞ্জয় রায় কী বয়ান দিয়েছেন, বা ঘটনার সময় তিনি একাই ছিলেন কিনা, কেন এই ধর্ষণ ও খুন এই নিয়ে বিশদ কিছুই প্রকাশ করেনি পুলিশ।

আরও পড়ুন- আরজি করে মাদক, যৌনচক্র, মানব অঙ্গ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ! কেন চুপ মুখ্যমন্ত্রী?

বৃহস্পতিবার সিবিআইয়ের এক আধিকারিক সংবাদমাধ্যমকে জানান, "লোকটির কোনও অনুশোচনা দেখা যায়নি। প্রতি মিনিটের বিশদ বিবরণ দিয়েছে সে এবং কোথাও বিন্দুমাত্র না থেমে, দ্বিধায় বা ভয়ে না থেকেই ঘটনার বর্ণনা করেছে সে।" উল্লেখ্য, সিবিআই এই মামলার ভার নেওয়ার আগেই কলকাতা পুলিশ বলেছিল নির্যাতিতার নখের নীচে পাওয়া রক্ত এবং ত্বক সঞ্জয় রায়ের হাতে থাকা আঘাতের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।

কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআইয়ের কাছে এই তদন্তের ভার দেওয়ার আগে, পুলিশ সঞ্জয় রায়ের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা মোবাইল ফোনে ঢালাও পর্নোগ্রাফির সন্ধান পেয়েছিল। এখন সিবিআইও জানাচ্ছে, প্রযুক্তিগত এবং বৈজ্ঞানিক দুই ধরনের প্রমাণ থেকেই এটুকু বিষয় সাফ যে সঞ্জয় রায় অপরাধের সময় ওই স্থানে উপস্থিত ছিলেন।

হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে, সঞ্জয় রায়কে ৮ অগাস্ট সকাল ১১টার নাগাদ চেস্ট বিভাগের ওয়ার্ডের কাছে দেখা যায়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সঞ্জয় রায় ৮ অগাস্ট মধ্যরাতের পরে উত্তর কলকাতায় সোনাগাছির যৌনপল্লীতেও গেছিলেন। ঘটনার দিন প্রচণ্ড নেশাগ্রস্ত ছিলেন সঞ্জয় এবং পরে জনৈক মহিলার কাছ থেকে নগ্ন ছবিও চেয়েছিলেন।

আরও পড়ুন- ১৩ ঘণ্টা ধরে ক্রাইম সিন খোলা! আরজি করে পুলিশের কর্তব্যে গাফিলতি, নাকি অভিসন্ধি?

সিবিআইয়ের আধিকারিক জানিয়েছেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে যে ৯ অগাস্ট ভোর ৪টে নাগাদ আবার একই বিল্ডিংয়ে ঢুকছেন সঞ্জয়। ওই চিকিৎসকের মৃত্যুর আনুমানিক সময় ছিল ৯ অগাস্ট ভোর ৩ টে থেকে ৫টার মধ্যে। তাহলে যে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠছে, বা সঞ্জয়ের সঙ্গে আরও অনেকের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠছে তা কি সত্য? সঞ্জয় রায়ের ডিএনএ পরীক্ষা বা গণধর্ষণের আশঙ্কা সম্পর্কে অবশ্য কোনও তথ্য প্রকাশ মন্তব্য করতে চাননি সিবিআই আধিকারিক।

ভবানীপুরে সঞ্জয় রায়ের বাড়িতেও গেছিলেন সিবিআই অফিসাররা। সঞ্জয়ের পরিবার, প্রতিবেশী এবং কলকাতা পুলিশ বাহিনীতে তার সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছে সিবিআই। সিবিআইয়ের তদন্তকারী দল ধর্ষণ ও খুনের মামলায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং অন্য চার চিকিৎসকের পলিগ্রাফ টেস্ট করতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে।

More Articles