৫৮ দিন পর আরজি কর কাণ্ডে প্রথম চার্জশিট সিবিআইয়ের! কী রয়েছে ২১৩ পাতার সেই চার্জশিটে?
RG Kar CBI Chargesheet: সোমবার দুপুরে শিয়ালদহ আদালতে চার্জশিট জমা দেন সিবিআইয়ের আইনজীবীরা । সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট চার্জশিটের মূল অংশটি প্রায় ২১৩ পাতার।
গত ৯ অগস্ট আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয়েছিল তরুণী চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ। সেই ঘটনার তদন্তভার রাজ্যপুলিশের হাত থেকে গিয়েছিল সিবিআইয়ের হাতে। তার পর প্রায় দু'মাস কেটে গিয়েছে। শেষমেশ ৫৮ দিনের মাথায় আরজি কর কাণ্ডে প্রথম চার্জশিট পেশ করল সিবিআই।
সোমবার দুপুরে শিয়ালদহ আদালতে চার্জশিট জমা দেন সিবিআইয়ের আইনজীবীরা । সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট চার্জশিটের মূল অংশটি প্রায় ২১৩ পাতার। যেখানে অন্তত দু'শো জন সাক্ষীর নাম উল্লেখ রয়েছে। তবে সেই চার্জশিটে মূল অভিযুক্ত হিসেবে রয়েছে সেই ধৃত ভলিন্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের নামই। সিবিআইয়ের পেশ করা চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, আরজি কর চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সঞ্জয়ই।
যতদূর জানা গিয়েছে, সিবিআইয়ের চার্জশিটে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ-সহ বেশ কিছু প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে কে কী জানিয়েছে, সেই বয়ানের নথিও তুলে ধরা হয়েছে চার্জশিটে। একই সঙ্গে তাঁর সঙ্গে অপর দুই অভিযুক্ত সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলের কথা এই চার্জশিটে স্পষ্ট করা হয়েছে । চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে, ওই দুই ব্যক্তি আরজি করের ঘটনাকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন ৷ এর পাশাপাশি চার্জশিটে লেখা হয়েছে, তথ্য-প্রমাণ লোপাটেরও চেষ্টা করেছেন সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডল ।
আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডে বিচারের দাবি, দেবীপক্ষেও প্রতিবাদের যে ঢেউ উঠল মহানগরে
গত ৯ অগস্টের ওই ঘটনার পরের দিনই সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলিন্টিয়ারকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ। তার পরেই ওই মামলার দায়ভার পুলিশের হাত থেকে নিয়ে দেওয়া হয় সিবিআইয়ের হাতে। এর পর আরজি কর কাণ্ডে গ্রেফতার করা হয় আরজি কর কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার প্রাক্তন অফিসার ইনচার্জ অভিজিৎ মণ্ডলকে।
বর্তমানে আরজি করের ঘটনার দুটি দিকের তদন্ত করছে সিবিআই। তার মধ্যে একটি চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা, দ্বিতীয়টি আরজি কর হাসপাতালে কোটি কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত। যার মূল মাথা হিসেবে সিবিআই গ্রেফতার করেছে আরজি করে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। আরজি কর কাণ্ডের ৫৮ দিন পর মূল ঘটনা অর্থাৎ চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের মামলায় চার্জশিট পেশ করল সিবিআই।
আরজি করের ঘটনার পর থেকেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে কলকাতা-সহ গোটা রাজ্য। রাতদখল থেকে শুরু করে একাধিক আন্দোলনের সাক্ষী হয়েছে মহানগর। কিছুদিন আগেই ফের আন্দোলনে ফিরেছে জুনিয়র ডাক্তারেরা। আমরণ অনশনের ডাক দিয়েছেন ৬ জুনিয়র ডাক্তার। ধর্মতলার ধর্নামঞ্চে তাদের বিক্ষোভ প্রদর্শন চলছে। যদিও সিবিআইয়ের এই চার্জশিট নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি জুনিয়র ডাক্তারেরা। সোমবার দুপুরে ধর্মতলার অনশন মঞ্চ থেকে আন্দোলনকারীদের অন্যতম প্রতিনিধি দেবাশিস হালদার বলেন, “সংবাদমাধ্যম থেকে যা তথ্য পেয়েছি, সেই অনুযায়ী এটি একটি প্রাথমিক চার্জশিট। তার ভিত্তিতে এই মুহূর্তে কোনও মন্তব্য করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলব। তার পরে এই বিষয়ে আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাব।”
আরও পড়ুন:মেয়েকে ছাড়া শুধুই অন্ধকার! পুজো যেভাবে কাটাবেন নির্যাতিতার পরিবার
ইতিমধ্যেই পঞ্চমীর দিন সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে ১২ ঘণ্টা প্রতীকী অনশনের ডাক দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। গোড়া থেকেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়েছে আরজি করে ঘটনায় একজনই জড়িত, নাকি একাধিক জড়িত রয়েছেন এর সঙ্গে। তদন্তে নেমে একাধিক বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন খোদ সিবিআই আধিকারিকেরা। ময়নাতদন্ত থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। তদন্তের বিষয়ে সিবিআইয়ের আইনজীবীরা এতদিন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে বা নিম্ন আদালতে যা সওয়াল-জবাব করেছেন, তাতে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে বারবারই এই ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকার আভাস মিলেছে। তবে তাদের প্রথম চার্জশিটে সেই এক অভিযুক্তের দিকেই আঙুল তোলা হল। স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।