পুলিশের ১৫ দফা পদক্ষেপ! এই নীতি মানলেই সুরক্ষিত হয়ে যাবেন রাজ্যের মহিলারা?

RG Kar Rape Case: আন্দোলন আর শুধুমাত্র চিকিৎসকদের মধ্যেও সীমাবদ্ধ নেই। রাস্তায় নেমেছেন, নামছেন সব স্তরের মানুষ। রাতের রাস্তা দখলের ডাক দিয়েছেন মহিলারা।

প্রতিটা ধর্ষণের পর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ওঠে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বিচারবিভাগ হিসেব কষে 'দৃষ্টান্তমূলক' শাস্তি দেয়। ফাঁসি হয়। তারপর আবার কোথাও না কোথাও কোনও না কোনও মেয়েশরীর ধর্ষিত হয়েই যায়। কেউ কেউ খুনও হয়ে যায়। তারপর আবার নড়েচড়ে বসে প্রশাসন-পুলিশ। অসুখ মরে না আসলে, উপসর্গ ঠেকাতে নানা দাওয়াই ধেয়ে আসে। যেমন আরজি কর-কাণ্ডের পর দাওয়াইয়ের তালিকা দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। মহিলাদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিয়ে একাধিক পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। ১৫ দফা পদক্ষেপ। যা যা বলা হয়েছে, তা জানেন না এমন কেউই নেই। তবু অপরাধ হলে নতুন করে এসব মনে করা আবশ্যিক হয়ে পড়ে। বিশেষ করে পুলিশের কাছে দায়িত্বপালনের দায় তো হয়ে ওঠেই। যে ১৫ দফা পদক্ষেপের তালিকা পেশ করেছে কলকাতা পুলিশ, তাতে নজরদারি বৃদ্ধি করা থেকে শুরু করে সরকারি হাসপাতাল, হোম এবং মহিলা হস্টেলের নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার। বলা বাহুল্য, সমস্তটাই আরজি করের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের নিরিখে।

গত শুক্রবার সকালে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চার তলার সেমিনার হলে এক তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। পোস্টমর্টেমে জানা যায় ধর্ষণ হয়েছে, এবং তা হয়েছে আগে খুন করার পরে। এই ঘটনায় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের দিকেই এখনও ধর্ষণ ও খুন করার অভিযোগ উঠছে। হাসপাতালের মতো জায়গায় একজন চিকিৎসককে ধর্ষণ করা হলো, খুন করা হলো; নিরাপত্তার এত অভাব? এই ঘটনার পর থেকেই চিকিৎসকেরা আন্দোলনে নেমেছেন। আন্দোলন আর শুধুমাত্র চিকিৎসকদের মধ্যেও সীমাবদ্ধ নেই। রাস্তায় নেমেছেন, নামছেন সব স্তরের মানুষ। রাতের রাস্তা দখলের ডাক দিয়েছেন মহিলারা।

আরও পড়ুন- আরজি কর কাণ্ড: ভেতরে অনেকে আছে, মেনে নিলেন মমতাও

পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছে পুলিশ। কী কী পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে?

১। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে এমন অপরাধপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করতে হবে।

২। মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়তি কী কী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বাঞ্ছনীয়, তা থানা স্তরেই ঠিক করতে হবে।

৩। মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের টহলদারি বৃদ্ধি করতে হবে এলাকায় এলাকায়।

৪। যেখানে সম্ভব সিসি ক্যামেরার নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। সিসি ক্যামেরা নেই এমন জায়গা চিহ্নিত করে সেখানে পর্যাপ্ত ক্যামেরা বসানোর কাজ করতে হবে। যা যা প্রয়োজন, পুলিশের সিসি ক্যামেরা সেলকে জানাতে হবে। সাধারণ মানুষকেও সিসি ক্যামেরা লাগানোর জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

৫। আরজি করের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সরকারি হাসপাতাল, সরকারি হোম এবং মহিলা হস্টেলের নিরাপত্তা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে।

৬। মহিলাদের সুরক্ষার বার্তা সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৭। মহিলা ডাক্তার, স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। তাঁদের নিরাপত্তা বিষয় সংক্রান্ত অভাব-অভিযোগ জানতে হবে। এই কাজে মহিলা পুলিশকে নিয়োগ করতে হবে।

৮। কলকাতা পুলিশের উইনার্স বাহিনী এবং মহিলা পুলিশকর্মীদের হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার ক্ষেত্রে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করা হতে পারে। প্রয়োজনে তারা সাদা পোশাকেই কাজ করবেন।

৯। হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত পদাধিকারীদের তাঁদের অধীনে কাজ করা সমস্ত সহায়কদের বিষয়ে অবগত থাকতে হবে। কোন সিভিক ভলান্টিয়ার কী কাজ করছেন সমস্ত নখদর্পণে থাকতে হবে।

১০। সাধারণ মানুষ, মহিলা, বয়স্কদের সঙ্গে হাসপাতালে কর্মরত পুলিশকর্মীদের কেমন আচরণ হবে তা নিয়ে পুলিশদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

১১। যদি হাসপাতালে পুলিশের নিরাপত্তা কম পড়ে তাহলে প্রয়োজনে থানার ওসি নিজে টহল দেবেন।

১২। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যে কেউ যাতে খুব সহজেই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন তার জন্য, প্রয়োজনীয় মেল আইডি, সবরকমের হেল্পলাইন নম্বর তাঁদের দিতে হবে। পাশাপাশি ১০০ ডায়াল তো থাকছেই।

১৩। পুলিশই যদি রক্ষক হয়ে ভক্ষক হয় তা আরও মর্মান্তিক। সমস্ত স্তরের পুলিশকর্মীই যাতে কোনওভাবে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে পড়েন তা নিয়ে সতর্ক করতে হবে।

১৪। আইন ভঙ্গকারী যে কারও বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ করা হবে, তা তিনি পুলিশের যে পদেই থাকুন না কেন।

১৫। কর্তব্যরত সমস্ত পুলিশকর্মীকে এই বিষয়গুলি নিশ্চিত করতে হবে।

More Articles