চোখ আটকে নীরজের রুপো জয়ে! মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে যা করছিলেন আরজি করের তরুণী
RG Kar Rape Victim: যে ডেলিভারি কর্মী খাবার পৌঁছতে এসেছিলেন তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
বৃহস্পতিবার রাত। বাকি অন্যদিনের মতোই নাইট শিফটে কাজ। তখনও তরুণী জানেন না আর কিছুক্ষণ পরেই, লাশ হয়ে যাবেন তিনি। লাশ হতে হতে, মানে জীবন আর মৃত্যুর সেই সরু সাঁকো দিয়ে হাঁটার সময় তাঁকে ধর্ষণ করা হবে, অত্যাচার করা হবে। গভীর রাতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ধর্ষিতা সেই তরুণী মৃত্যুর ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে চার সহকর্মীর সঙ্গে প্যারিস অলিম্পিকে নীরজ চোপড়ার রুপোজয় দেখছিলেন, দেখছিলেন জ্যাভলিন ছোড়ার টানটান মুহূর্ত।
সমস্ত ডাক্তারই রাতের শিফটে ডিউটিতে ছিলেন। রাতের খাবার খেতে খেতেই নীরজ চোপড়ার পারফর্ম্যান্স দেখছিলেন তারা। সেদিন রাতে বাইরে থেকে অর্ডার করে খাবার আনিয়েছিলেন সকলে মিলে। আরজি করের ওই তরুণী চিকিৎসক নিজের মাকে ফোন করেছিলেন। সেই শেষ কথা। মাকে বলেছিলেন, রাতের খাবার খেয়ে নিয়েছেন, বলেছিলেন "তুমিও খেয়ে নাও মা"। বাকিটাও সাধারণ। খাবার পর্ব শেষ হলেই নির্যাতিতা ও মৃতার সহকর্মীরা নিজেদের কাজের জায়গায় চলে যান। সেমিনার হলে একা কিছুক্ষণ পড়াশোনা করার জন্য থেকে গিয়েছিলেন ওই তরুণী।
আরও পড়ুন- আরজি করের তরুণীকে হত্যার পর ধর্ষণের অভিযোগ! কী এই বিরল অসুখ ‘নেক্রোফেলিয়া’?
পুলিশের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, পড়তে পড়তেই তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। যে সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে, ভোর ৪ টে নাগাদ সে ইমারজেন্সি বিল্ডিংয়ের দিকে ঢুকছে। ওই বিল্ডিংয়েই ছিলেন তরুণী। পরদিন, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় লাশ পাওয়া গেল ওই তরুণীর। চোখ, মুখ, মুখ, গোপনাঙ্গ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অজস্র আঘাতের চিহ্ন।
যে সহকর্মীদের সঙ্গে বসে রাতের খাবার খেতে খেতে অলিম্পিক দেখছিলেন তরুণী, পুলিশ এখন সেদিন রাতে ডিউটিতে থাকা সেই চার সহকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। যে ডেলিভারি কর্মী খাবার পৌঁছতে এসেছিলেন তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ঘটনার পরদিনই গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে। সঞ্জয় কলকাতা পুলিশের একজন সিভিক ভলান্টিয়ার। অপরাধের জায়গায় সঞ্জয়ের ফোনের একটি ব্লুটুথ হেডসেট পাওয়া গিয়েছিল, যে সূত্র ধরেই গ্রেফতার করা হয় তাকে।
সঞ্জয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে ঠিকই, তবে পুলিশ বলছে, এই অপরাধে আরও বেশি লোকের জড়িত থাকতেও পারে। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল জানিয়েছেন, পুলিশ ইতিমধ্যেই একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে। যে কোনও ডাক্তার চাইলে এই হেল্পলাইনে ফোন করে তথ্য দিতে পারেন। যদি নাম প্রকাশে সমস্যা থাকে, বেনামেই যোগাযোগ করতে পারেন তারা। যেভাবেই হোক সত্য সামনে আসুক। এই ঘটনা সংক্রান্ত যে কোনও রকমের তথ্য চাইছে পুলিশ। আরও বেশি অপরাধী থেকে থাকলে, তারাও কিছুদিনের মধ্যেই ধরা পড়বে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।
আরও পড়ুন- পুলিশের ১৫ দফা পদক্ষেপ! এই নীতি মানলেই সুরক্ষিত হয়ে যাবেন রাজ্যের মহিলারা?
পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানিয়েছে, অভিযুক্ত সঞ্জয় যখন তরুণী চিকিৎসকের উপর হামলা করে, তখন তিনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। ক্লান্ত, ঘুমের ঘোরে নিজেকে বাঁচাতে যতটা প্রতিরোধ করা প্রয়োজন ছিল তা ওই তরুণী করতে পারেননি। তাঁর মুখ, গলা, হাত-পা, এমন ভাবে চেপে ধরে ওই অভিযুক্ত যাতে স্বাভাবিক প্রতিরোধ করা মুশকিল হয়ে যায়। কিন্তু চিৎকার তো তিনি অবশ্যই করেছেন। হাসপাতালের কেউই কেন তা শুনতে পেলেন না? অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় ছোট থেকেই শরীরচর্চা করত, বক্সিংও শিখেছে। ফলে একার গায়ের জোরে তরুণীকে কাবু করা খুব অসম্ভবও না।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার এই তদন্ত শেষ করে অপরাধীদের খুঁজে বের করার সময় সীমা বেঁধে দিয়েছেন কলকাতা পুলিশকে। তারা রবিবারের মধ্যে তদন্ত শেষ না করলে রাজ্য সরকার এই তদন্তের ভার সিবিআইকে দিয়ে দেবে বলেও জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।