মণিপুরের দুর্দশার জন্য দায়ি মোদিই? যা বলছেন আরএসএসের মোহন ভাগবত...
Mohan Bhagwat on Manipur: রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রধান বলছেন, একজন সত্যিকারের 'সেবক' অহংকার করেন না, অন্যকে আঘাত করেন না।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে থেকেই বিজেপি আর আরএসএসের মধ্যে যে দূরত্ব বাড়ছে তার নানা ইঙ্গিতই মিলছিল। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বিজেপির মতাদর্শিক সংগঠন হলেও শাসক হিসেবে বিজেপির ক্ষমতা বৃদ্ধি দলটিকে আরএসএসের ছাতার তলা থেকে বের করে এনেছে। নরেন্দ্র মোদির 'একনায়ক' হিসেবে উত্থান তাঁকে সঙ্ঘের থেকে অনেক দূরবর্তী করে তুলেছে। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মতপার্থক্যও বাড়ছে হু-হু করে। নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রধান মোহন ভাগবত বলছেন, মণিপুর এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শান্তির জন্য অপেক্ষা করছে এবং রাজ্যের পরিস্থিতির দিকে জরুরি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ ভারতীয় জনতা পার্টির মূল সংগঠন। আরএসএসের আদর্শই বিজেপি প্রচার করে। মণিপুর বিগত বছরে ভয়াবহ জাতিহিংসার কবলে পড়ে। নগ্ন করে হাঁটানো হয় সে রাজ্যের দুই মহিলাকে। এই হিংসা নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থ হয় রাজ্যের ক্ষমতাসীন বিজেপি। খোদ নরেন্দ্র মোদি একবারও মণিপুরে যাননি, মণিপুর নিয়ে কয়েক সেকেন্ডের 'বাণী' ছাড়া কিচ্ছু উল্লেখও করেননি। জবাবও দিয়েছে মণিপুর। এবারের লোকসভা নির্বাচনে মণিপুরের দু'টি লোকসভা আসনই বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে।
আরও পড়ুন- আরএসএসের তৈরি জমিতে ব্যাট করে এখন সঙ্ঘকেই লাথি! BJP-RSS সম্পর্কে ইতি?
নাগপুরে হিন্দুত্ববাদী এই সংগঠনের কর্মী ও নেতাদের এক সমাবেশে মোহন ভাগবত বলেন, গত বছরের মে মাসে হিংসা শুরু হওয়ার আগে এই রাজ্য টানা দশ বছর ধরে শান্তিপূর্ণই ছিল। আরএসএস প্রধান বলছেন, "মনে হচ্ছিল, আগেকার বন্দুক সংস্কৃতির অবসান হয়েছে। তারপর দেখি হঠাৎ করে সেখানে যে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে বা হিংসা উস্কে দেওয়া হয়। রাজ্য এখনও সেই আগুনে পুড়ছে। কে এই দিকে মনোযোগ দেবে? এর প্রতি জরুরি মনোযোগ দেওয়া আমাদের কর্তব্য।”
গত বছরের মে মাসের শুরুতে মণিপুরে জাতিগত হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। রাজ্যের মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসার ফলে এখনও অবধি সেখানে কমপক্ষে ২২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৬০,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। মোহন ভাগবতের এই মন্তব্য কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যর্থতাকেই কটাক্ষ করছে না?
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলছেন, “প্রধানমন্ত্রীর বিবেক বা মণিপুরের জনগণের দাবি যদি এক তৃতীয়াংশও তাঁকে ভাবাত তাহলে প্রাক্তন আরএসএস পদাধিকারী মোদিকে মণিপুরে যেতে বাধ্য করতে পারতেন।”
আরও পড়ুন- মোদিকে যোগ্য জবাব! মেইতেই-কুকি মিলে কীভাবে বিজেপিকে উপড়ে ফেলল মণিপুর?
মোহন ভাগবত যে সরাসরি মোদিকে আক্রমণ করছেন তা স্পষ্ট হয়ে যায় তাঁর আরেকটি মন্তব্যে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রধান আরও বলছেন, একজন সত্যিকারের 'সেবক' অহংকার করেন না, অন্যকে আঘাত করেন না। "যে সমস্ত নিয়ম মেনে চলেই তাঁর কাজ করেন, কিন্তু সবটা থেকে তফাতেও থাকেন, যাঁর কোনও অহংকার নেই একমাত্র সেই ব্যক্তিরই নিজেকে 'সেবক' বলার অধিকার আছে।" নরেন্দ্র মোদি বরাবরই নিজেকে প্রধান সেবক বলে এসেছেন। এখানেই আরএসএসের সঙ্গে তাঁর সংঘাত। আরএসএস সংগঠনে বিশ্বাসী, মোদি নিজেকেই করে তুলেছেন অপরিহার্য। সমস্ত সিদ্ধান্ত, রাজনীতি তাঁকে ঘিরেই আবর্তিত। খোদ মোহন ভাগবত দুঃখ প্রকাশ করেছেন যে লোকসভা নির্বাচন প্রচারের সময় কোনও নীতিই মেনে চলা হয়নি। নির্বাচনকে প্রতিযোগিতা হিসাবে দেখা উচিত, যুদ্ধ নয়, বলেছেন ভাগবত।
“যে ধরনের কথা বলা হয়েছিল, যেভাবে দুই পক্ষ (ক্ষমতাসীন জোট এবং বিরোধী দল) একে অপরকে নিন্দা করেছে… যেভাবে সামাজিক বিভাজন তৈরি হচ্ছে তা নিয়ে কেউ চিন্তা করেনি… এবং কোনও কারণ ছাড়াই সঙ্ঘকে মাঝে টেনে আনা হয়েছে। এভাবে দেশ চলবে কী করে?” প্রশ্ন করেছেন ভাগবত। মোদির আগ্রাসনকে এভাবেই দেখছেন মোহন ভাগবত। আর বুঝিয়ে দিচ্ছেন, দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে।