করোনা হলেই নষ্ট হচ্ছে বীর্যের গুণগত মান! সমীক্ষায় উঠে এল ভয়াবহ তথ্য

Covid 19 : AIIMS পাটনা, দিল্লি এবং অন্ধ্রের মঙ্গলাগাড়ির গবেষকদের যৌথ সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, করোনা পুরুষের শরীরের বীর্যের গুণমানকে প্রভাবিত করে

গবেষণার নয়া মোড়, কোভিড সংক্রান্ত বিশ্লেষণে এবার উঠে এল শারীরিক পরিবর্তনের ছবি। জানা গিয়েছে, কোভিড আক্রান্ত পুরুষদের শরীরে শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যেতে পারে। এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসায় চিন্তার ভাঁজ কপালে। কিন্তু কীভাবে করা হয়েছিল এই পরীক্ষা? কতদিন সময় লাগলো? কীই বা উঠে এল সম্পূর্ণ গবেষণায়?

AIIMS পাটনা, দিল্লি এবং অন্ধ্রের মঙ্গলাগাড়ির গবেষকদের যৌথ সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, করোনা পুরুষের শরীরের বীর্যের গুণমানকে প্রভাবিত করে। এই অধ্যয়নটি বীর্য বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, এটিকে কেউ কেউ শুক্রাণু গণনা পরীক্ষা বলেও অভিহিত করে থাকেন।

১৯ থেকে ৪৩ বছরের মধ্যে বয়স এমন ৩০ জন পুরুষের ওপর এই সমীক্ষাটি করেন AIIMS পাটনা কর্তৃপক্ষ। এরা প্রত্যেকেই ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রথম বীর্য সংগ্রহের আড়াই মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার সংগ্রহ করা হয় সেমেন। দুইবারের পরীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই সার্বিক ফলাফলের দিকে এগোন বিজ্ঞানীরা।

জানা গিয়েছে, প্রথমবারের নমুনায় SARS-CoV-2 ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া না গেলেও বীর্যের গুণমান খুবই খারাপ ছিল। দ্বিতীয়বারের নমুনা পরীক্ষায় তার খানিকটা উন্নতি হলেও সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। অর্থাৎ এর থেকেই বোঝা গিয়েছে, মূলত কোভিড রোগের ভাইরাসের তীব্রতার কারণেই এই ক্ষতি।

প্রথম বীর্যের নমুনা নেওয়ার সময়, কিউরিয়াস জার্নাল অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যায়, ৩০ জন পুরুষের মধ্যে ১২ জনের ৪০% বীর্যের সংখ্যা কম ছিল অর্থাৎ প্রতি বীর্যপাতের ক্ষেত্রে যা ৩৯ মিলিয়নেরও কম। এমনকী আড়াই মাস পরে, দ্বিতীয় পরীক্ষাতেও দেখা গিয়েছে, ৩ জন পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ শতাংশ কম ছিল।

সাম্প্রতিক এই গবেষণাটির নেতৃত্বে ছিলেন ড. সতীশ পি দীপঙ্কর। তিনি বলেন, অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজি ক্লিনিক এবং স্পার্ম ব্যাঙ্ক গুলির ক্ষেত্রে শুক্রাণু সংগ্রহের আগে সেই ব্যক্তির কোভিড হয়েছিল কিনা সেই বুধ্যিতে খোঁজ মরিয়া আবশ্যক। অনথ্যায় সেই শুক্রাণু উপকারে লাগবে না। গুণমান পরীক্ষা করে তবে শুক্রাণু সংগ্রহের পরামর্শ দেন তিনি। তিনি আরও বলেন, করোনভাইরাসটি বীর্যে উপস্থিত না থাকলেও সংক্রমণের সময় প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের অতিরিক্ত উৎপাদন এবং সেমিনাল প্লাজমা সহ দেহে লিউকোসাইটের মাত্রা বৃদ্ধির মতো কারণগুলির কারণে এটি পরবর্তীতেও এর গুণমানকে প্রভাবিত করতে পারে।

আরও পড়ুন - হু হু করে বাড়বে মৃত্যু! কতটা মারাত্মক এই নয়া BF.7 কোভিড ভ্যারিয়েন্ট?

কোভিড-১৯-এর প্রাথমিক উপসর্গগুলির মধ্যে একটি হল উচ্চ মাত্রায় জ্বর, যা রক্ত-টেস্টিস বাধাকে ব্যাহত করতে পারে, এর ফলে শুক্রাণু কোষ এবং টেস্টিকুলার টিস্যুগুলিকে সঞ্চালনকারী সাইটোকাইনস এবং শরীরে উৎপন্ন অন্যান্য প্রদাহজনক মধ্যস্থতাকারীদের উদ্ভাসিত করে৷ এর থেকে নিয়মিত প্রদাহও হতে পারে৷ সিডস অফ ইনোসেন্স আইভিএফ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ গৌরী আগরওয়াল বলেছেন, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রজননের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

এর আগে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, বাড়ি বা আশপাশে প্লাস্টিক ও কীটনাশকের খুব বেশি ব্যবহার, কোনও যৌন রোগ বা সংক্রমণ, মানসিক চাপ, অবসাদ, শরীরের স্থূলতা, নিদ্রাহীনতা অথবা খুব বেশি সময় ধরে টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে মজে থাকলে মানুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা যথেষ্টই কমে যায়। কিন্তু করোনা সংক্রমণের জেরে যে অনেকক্ষেত্রেই একেবারে বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে শুক্রাণুর সৃষ্টি সেকথা ভাবছে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে।

করোনা মহামারির আকার নেওয়ার পর সারা বিশ্বে প্রায় ৯০ শতাংশ পুরুষই কোনও না কোনও সময়েসেই রোগের কবলে পড়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে স্বাভাবিক জ্বর বলে অনেকেই এড়িয়ে গিয়েছেন রোগ। কিন্তু তাতেও শরীরের ভিতরে এই শুক্রানু সৃষ্টির প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। তাই এমত অবস্থায় এই গবেষণা যে সার্বিকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে বিশ্বের প্রজনন ব্যবস্থাকে, তা বলাই বাহুল্য।

More Articles