ক্রিকেট, প্রেমিকা, ড্রাগ... || শেন ওয়ার্নের গোটা জীবনটা বিতর্কের নামান্তর
বাইশ গজের দুরন্ত স্পিন থেকে জীবনের নানা বিতর্ক- বারবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন শিরোনাম শেন ওয়ার্ন। জীবনের ঘূর্ণির সাথে বিতর্কই তাঁর সঙ্গী। সোনালী চুলের অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট তারকা একসময় বিশ্বের দাপুটে ব্যাটসম্যানদের ঘুম কেড়ে নিলেও হতাশার মুখোমুখিও হয়েছেন। জীবনের শেষ ইনিংসেও তাই সকলকে অবাক করে চির ঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন শেন। শুক্রবার রাতে তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই কেউ বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না এত তাড়াতাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন শেন। কেউ ভাবেননি রড মার্শের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করার পরেই ক্রীড়াজগত শেনের জন্য শোক প্রকাশ করে ট্যুইট করবে। তবে তারকার ৫২ বছরের বর্ণময় জীবনে সতীর্থদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন একাধিকবার। একাধিক মহিলার সাথে সম্পর্কের আঁচ এসে পড়েছে কেরিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবনেও। মদ -সিগারেট, বুকিদের সঙ্গে যোগাযোগ এমন নানা বিতর্কে ভরা শেন ওয়ার্নের জীবন।
বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ শেন ওয়ার্ন
২০০৩ সালে সাউথ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগের দিন নাটকীয়ভাবে বাদ পড়লেন শেন ওয়ার্ন। কারণ তাঁর ড্রাগ পরীক্ষার ফল পজিটিভ।দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হল শেনকে। এখানেই শেষ নয় এক বছরের জন্য তাঁকে নিষিদ্ধ করেছিল অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড। শেনের যদিও যুক্তি ছিল তিনি মায়ের দেওয়া 'ফ্লুইড ওষুধ' খেয়েছিলেন। এইসময় তিনি ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করতেন।
বুকিদের সঙ্গে তথ্য বিনিময়
১৯৯৪ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে শেন ওয়ার্ন ও মার্ক ওয়ার বিরূদ্ধে অভিযোগ ওঠে তাঁরা দুজনেই ম্যাচ শুরুর আগে আবহাওয়া ও পিচ সংক্রান্ত তথ্য পাচার করেছেন বুকিদের। সাময়িকভাবে শাস্তির মুখেও পড়তে হয়েছিল ওয়ার্নকে।
ম্যাসেজ বিতর্ক
সাল ২০০০। শেন এক ব্রিটিশ নার্সকে তাঁর সাথে যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে ম্যাসেজ করেন। বিতর্কের জেরে তাঁকে সহ অধিনায়কের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ওই মুহূর্তে। পরবর্তীকালে তিনি নিজেও এই অশ্লীল মেসেজের কথা স্বীকার করেছেন।
বিবাহ বিচ্ছেদ
ওয়ার্নের প্রথম স্ত্রী সিমোনে কাল্লাহান। ১৯৯৫ সালে দুজনে বিয়ে করেন এবং তাঁদের তিন সন্তানও রয়েছে। কিন্তু ব্রিটিশ নার্সকে মেসেজ করার কথা সমানে আসতেই চির ধরে সিমোনে শেনের বৈবাহিক সম্পর্কে। অবশেষে ২০০৫ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয় শেনের।২০০৭ সালে ফের কিছুটা কাছাকাছি এসেছিলেন দুজনে। ইংল্যান্ডে ঘুরতেও জান দু'জনে তবে হঠাৎই দেশে ফিরে যান সিমোনে। জানা যায়, অন্য মহিলাকে ম্যাসেজ পাঠাতে গিয়ে তা ভুল করে পাঠিয়ে দেন সিমোনের কাছে। বিবাহ বিচ্ছেদের একবছর পরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে থেকে অবসর নেন শেন ওয়ার্ন।
সিগারেটের নেশা
সিগারেট খেতে খুবই ভালোবাসতেন শেন ওয়ার্ন। তাঁর সতীর্থদের থেকেও জানা যায় সেই কথা। একবার তাঁর সিগারেটে খাওয়ার ছবি তুলেছিলেন একটি ছেলে। ছেলেটিকে মারধরও করেছিলেন এই কারণে শেন। তামাক বিরোধী এক সংস্থার সাথে চুক্তিও হয়েছিল তাঁর। চুক্তির শর্ত ছিল তাঁকে সিগারেট ছাড়তে হবে কিন্তু চার মাসের মধ্যেই সেই চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসেন শেন। বিয়ারের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথাও জানেন অনেকেই।
হার্লের সাথে সম্পর্ক
সাল ২০১০। ফের বিতর্কে উঠে আসেন ওয়ার্ন। ইংরেজ অভিনেত্রী এলিজাবেথ হার্লেকে চুমু খেতে দেখা যায় তাঁকে।ঘটনা জানাজানি হতেই নিজেই টুইট করে জানিয়েছিলেন, সিমোনের সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের কথা শুধু তাঁর পরিবার এবং কাছের বন্ধুরা ছাড়া কেউই তেমন জানেন না। হার্লের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার সময়ও একাধিক মহিলার সাথে তাঁর সম্পর্কের কথা সামনে আসে। ২০১১ সালে তাঁদের বাগদান হবে বলেও শোনা যায় কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।
শুধু তাই নয় ২০০৬ সালে তিন মহিলার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার ছবি ছাপা হয় ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডে।মডেল এমিলি স্কটকেও ডেট করেছেন শেন। তবে সেই সম্পর্ক মাত্র তিন মাসই টিকেছিল। মাঠের বাইরে তিনি প্লেবয় হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। কিংবদন্তি এই ক্রিকেটার ডেটিং অ্যাপ টিন্ডার-ও ব্যবহার করতেন।
সতীর্থদের সঙ্গে সংঘর্ষ
১৯৯৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময় দল থেকে শেনকে বাদ দিলে স্টিভ ওয়াহের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে তাঁর।২০১৬ সালে শেন ওয়ার্ন প্রাক্তন অধিনায়ককে প্রকাশ্যেই ' সবচেয়ে স্বার্থপর' বলেছেন।
তবে শেষজীবনে সময় কাটিয়েছেন সন্তানদের সাথে। ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করেছেন। উপস্থিত থেকেছেন একাধিক টিভি শোয়ে। শুধু তাই নয় নিজের জীবন সম্পর্ক খোলাখুলি কথাও বলতে শোনা গেছে শেনকে। বিতর্কে জড়ালেও তাঁর ক্রিকেট জীবন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা।