এনার্জি বাড়াতে বারবার চুমুক দিচ্ছেন কফিতে, অজান্তেই যে বিপদ ডেকে আনছেন আপনি

Health affect for Coffee : হু হু করে মেদ ঝরাচ্ছে কফি! নিয়মিত এই অভ্যাসই ডেকে আনছে না তো বিপদ?

মান্না দের গানে যে কফির আড্ডার কথা ছিল, তা সময়ের সঙ্গে বদলে গিয়েছে অনেক। কফি হাউজের একচেটিয়া বাজারে এখন অজস্র ক্যাফের আধিপত্য। এমনকী বাঙালি জীবনের এক্কেবারে অন্দরেও এখন রাজ করছে এক কাপ কফি। একটা সময় সকালের ঘুম ভাঙাতে চায়ের বিকল্প কিছু ছিলই না, অথচ এখন ধোঁয়া ওঠা কফি কাপই হাত ঘোরে বেশি। সারাদিনের কাজের ফাঁকে অথবা জমাটি সান্ধ্য আড্ডায় কফির জবাব নেই। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্য সচেতন প্রজন্মের কাছেও কফি খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয়।

নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় সম্প্রতি উঠে এসেছে কফি খাওয়ার অভ্যাস নিয়ে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রায় ১০০ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে নিয়ে দু সপ্তাহ ধরে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেখানে জানা গিয়েছে, একদিকে যেমন নিয়মিত কফি খাওয়ায় শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, হাঁটা চলা বাড়ছে, এনার্জি বাড়ছে তেমনই অন্যদিকে এর জেরে আঘাত নেমে আসছে স্বাভাবিক ঘুমের ওপর। স্লিপ সাইকেল পাল্টে যাচ্ছে মানুষের।

কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডায়েটিশিয়ান, প্রশিক্ষক এবং গবেষক ন্যান্সি গেস্ট জানাচ্ছেন, বেশিরভাগ বিজ্ঞানীরাই একটি বিষয়ে সহমত পোষণ করেছেন যে কফির মধ্যে থাকা ক্যাফেইন শরীরের কর্ম দক্ষতা বাড়ায়, যার জেরে ব্যায়াম, খেলাধুলা, ম্যারাথন দৌড় এমনকী ওজন উত্তোলন ইত্যাদি জাতীয় ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে। অন্যদিকে, নিউইয়র্ক সিটির লেহম্যান কলেজের ব্যায়াম বিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্র্যাড শোয়েনফেল্ড বলেছেন, কফি, ওয়ার্কআউট সাপ্লিমেন্ট বা এনার্জি ড্রিঙ্কের কাজ করে। প্রতিদিন গড়ে ২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাফেইন কর্মক্ষমতা বাড়ায়।

উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালে প্রকাশিত রোয়িং পারফরম্যান্সের উপর ক্যাফিনের প্রভাব সম্পর্কে একাধিক গবেষণার বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, প্রতিযোগী রোয়াররা ক্যাফিন ব্যবহার করার সময় ২০০০-মিটার সারিতে তাদের সময়কে প্রায় চার সেকেন্ড পর্যন্ত বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। এই বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার ক্যারিক ইনস্টিটিউট ফর ক্লিনিকাল নিউরোসায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক মাইক নেলসন বলেন, কম সময়ে তাৎক্ষণিকভাবে কর্মক্ষমতা বাড়াতে কফির জবাব নেই। যদিও বিশেষজ্ঞরা জানান, ক্যাফেইনের এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হয়। এটি জেনেটিক্স, লিঙ্গ, হরমোনের কার্যকলাপ এবং খাদ্যের বিক্রিয়ার মতো কারণগুলির সঙ্গে জড়িত।

আরও পড়ুন - জোব্বার ভেতর লুকিয়ে নিয়ে আসা বীজ থেকে ভারতে এল সবার প্রিয় এই পানীয়

আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের উপর ক্যাফিনের প্রভাব অ্যাডেনোসিন দিয়ে শুরু হয়। নিউরোট্রান্সমিটার, যা নির্দিষ্ট রিসেপ্টরকে আবদ্ধ করে এবং আমাদের তন্দ্রাচ্ছন্ন বোধ করায়। ক্যাফেইন এই রিসেপ্টরকে আবদ্ধ করে, অ্যাডেনোসিনকে কাজ করতে বাধা দেয়। ‘বিএমজে মেডিসিন’ নামক একটি মেডিক্যাল পত্রিকায় প্রকাশিত একটি তথ্য জানাচ্ছে, নিয়মিত কফি খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সেই সঙ্গে টাইপ ২ ডায়াবিটিসের ঝুঁকিও কমে। কফিতে থাকা ক্যাফেইন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই রোজ যদি অল্প পরিমাণ ক্যাফেইনও শরীরে প্রবেশ করে, তা হলে রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ক্যাফেইন আমাদের পেশীগুলিকে আরও শক্তি তৈরি করতে সহায়তা করে। পেশী সংকোচন শুরু করার জন্য আমাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন, এবং ক্যাফেইন ক্যালসিয়াম আয়নগুলিকে একত্রিত করতে সাহায্য করে যাতে তারা পেশী ফাইবার সংকোচন প্ররোচিত করে এমন ফিলামেন্টগুলির সাথে আরও বেশি মিথস্ক্রিয়া করে।

কিন্তু কফির এই সব উপকারী দিকের পাশাপাশি এর রয়েছে কিছু খারাপ দিকও। রোজ কফি খেতে গিয়ে অজান্তেই নানা বিপদ ডেকে আনছেন না তো?


১. কফিতে থাকা ক্যাফেইন শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করলেও এটি স্নায়ুদতন্ত্রের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

২. আজকাল অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটেই কফি খেতে পছন্দ করেন, এতে মেদ ঝরতে সাহায্য করে ঠিকই তবে এর জেরে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। এবং পাকস্থলীতে প্রচুর পরিমাণে এই অ্যাসিড জমলে হজমজনিত সমস্যা হতে পারে।

৩. সন্ধার দিকে ব্যায়াম করার সুবিধার জন্য কফি খাচ্ছেন হয়তো, এতে শরীরে দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে ঠিকই তবে তার জেরে ঘুমের বারোটা বাজে।

৪. অতিরিক্ত কফি খেলে কিডনির স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ব্যহত হতে পারে।

৫. এছাড়াও কফিতে থাকা অম্লীয় উপাদান আলসার ও গ্যাসট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।

৬. একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি কফি খেলে গর্ভধারণ জনিত সমস্যা হতে পারে।

৭. কফিতে থাকা ক্যাফিন আদতে ডাইউরেটিক পদার্থ। অর্থাৎ, কফি খেলে ঘন ঘন মূত্রবেগ আসে। ফলে শরীরে জলের ঘাটতি হয়।

৮. এছাড়াও কফি যেহেতু একাধারে উত্তেজক এবং নেশার পানীয় ফলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ঘনঘন কফি খাওয়ার অভ্যাস বিপদ ডেকে আনে নির্দিষ্ট সময় অন্তর কফি না পেলে মেজাজ বিগড়ে যায়, এবং মানসিক অবসাদের স্বীকার হন অনেকেই।

More Articles