বিদেশিনী থেকে লোকমাতা, স্বাধীন ভারতের স্বপ্নে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন ভগিনী নিবেদিতা
স্বামীজির দীক্ষা-শিক্ষায় মার্গারেট হয়ে উঠলেন ভারতের ‘ভগিনী’, রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘লোকমাতা’। আইরিশ বিপ্লবের যে আগুন ধারণ করেছিলেন বুকে, ব্রিটিশশাসিত ভারতের স্বাধীনতার পালেও লাগিয়ে দিলেন সেই সশস্ত্র সংগ্রামের হাওয়া।
"তিনি যখন বলিতেন Our people তখন তাহার মধ্যে যে একান্ত আত্মীয়তার সুরটি লাগিত আমাদের কাহারও কণ্ঠে তেমনটি তো লাগে না। ভগিনী নিবেদিতা দেশের মানুষকে যেমন সত্য করিয়া ভালোবাসিতেন তাহা যে দেখিয়াছে সে নিশ্চয়ই ইহা বুঝিয়াছে ..."
নিবেদিতা প্রসঙ্গে এ কথা বলেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ।
ভারতবর্ষ সম্বন্ধে ভগিনী নিবেদিতার আবেগ শ্রদ্ধা আন্তরিকতা স্বদেশভাব অজস্র প্রবন্ধ এবং চিঠিপত্রে পাওয়া যায় যেমন নেল হ্যামন্ডকে একটি চিঠিতে অকপটে মার্গারেট লিখেছিলেন, “Oh, Nell, Nell, India is indeed a holy land”। একদিন নিবেদিতা তাঁর ছাত্রীদের জিজ্ঞাসা করলেন, “ভারতের রাণী কে?” মেয়েরা উত্তর দিল, রানী ভিক্টোরিয়া। এই উত্তর শুনে নিবেদিতা স্পষ্টতই বিরক্ত হলেন এবং বললেন দেখো, ইংল্যান্ডের সম্রাজ্ঞী, রানী ভিক্টোরিয়া কখনোই ভারতের রাণী হতে পারেন না! "আমাদের রাণী হলেন সীতা! সীতা হলেন ভারতের চিরন্তন রাণী!” এই ছিল তাঁর ভারত ভাবনা।
নিবেদিতা এসেছিলেন ভারতের মেয়ে হয়ে। র্মার্গারেট যখন মাতৃগর্ভে, তখনই তাঁর মা ইজ়াবেল প্রার্থনা করেছিলেন যে, তাঁর সন্তান নিরাপদে ভূমিষ্ঠ হলে ঈশ্বরের কাজেই তাকে উৎসর্গ করবেন। নিবেদিতার জন্ম উত্তর আয়ারল্যান্ডে। বাবা স্যামুয়েল রিচমন্ড নোবেল ছিলেন একজন ধর্মযাজক এবং দাদু আয়ারল্যান্ডের বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী হ্যামিলটন। ইংরেজের শাসন থেকে মুক্তি সংগ্রামের বিপ্লবী চেতনা ও ইংরেজ বিরোধীতা জন্মসূত্রেই পেয়েছিলেন নিবেদিতা। ১৮৮৪ থেকে ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দশ বছর তিনি শিক্ষকতা করেন। শিক্ষিকা হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন নিবেদিতা। সেই সময়ই বুদ্ধের শিক্ষা সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। তখনই সাক্ষাৎ হয় স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গেও। এবং বিবেকানন্দের বাণী তাঁকে এতটাই প্রভাবিত করে যে, তিনি ভারতে চলে আসেন।
আরও পড়ুন- শিক্ষা প্রসার থেকে বিপ্লবীদের সাহায্য, স্বামীজির আলোয় যে নিবেদিতা আজও অজানাই
নিবেদিতাই প্রথম পাশ্চাত্য নারী, যিনি ভারতীয় সন্ন্যাসিনীর ব্রত গ্রহণ করেছিলেন। বিবেকানন্দ প্রথমে তাঁকে নিরুৎসাহিত করেছিলেন। পরিষ্কার ভাষায় একটি চিঠিতে মার্গারেটকে লিখেছিলেন, “এ-দেশে যে কী দুঃখ, কী কুসংস্কার, কী দাসত্ব— সে তুমি কল্পনাতেও আনতে পারবে না। এ-দেশে এলে দেখবে, চারদিকে অর্ধনগ্ন অগণিত নর-নারী, — ‘জাতি’ ও স্পর্শ সম্বন্ধে তাদের উদ্ভট ধারণা, শ্বেতাঙ্গরা মনে করবে, তোমার মাথা খারাপ, তোমার প্রতিটি গতিবিধি তারা সন্দেহের চোখে দেখবে। তা ছাড়া দারুণ গরম। আমাদের শীতকাল অধিকাংশক্ষেত্রে তোমাদের গ্রীষ্মকালের মতো। দক্ষিণে তো সবসময় আগুনের হল্কা। শহরের বাইরে ইউরোপীয় সুখস্বাচ্ছন্দ্য পাবার কোনও সম্ভাবনা নেই। ...এসব সত্ত্বেও যদি তুমি কর্মে প্রবৃত্ত হতে সাহস করো— স্বাগত তুমি, শতবার স্বাগত।” স্বামীজির ওই ‘স্বাগত’ শব্দটিই মার্গারেটকে উদ্দীপিত করেছিল।
অবন ঠাকুরের আঁকা যে ছবিটিকে আমরা এখন ভারতমাতা বলে জানি, এই ছবির নাম প্রথমে ছিল বঙ্গমাতা। পরে নিবেদিতার কথায় নাম বদলে হয় ‘ভারতমাতা’। আমেরিকান কনসালের বাড়িতে, কাকুজো ওকাকুরার সংবর্ধনা সভায় তাঁর পরিচয় হয়েছিল ভগিনী নিবেদিতার সঙ্গে। এই ছবির সঙ্গে অনেকখানি জুড়ে আছেন তিনি। ছবিতে দেবীর গেরুয়া বসন। চতুর্ভুজা যোগিনী মূর্তি। চার হাতে রয়েছে ধান, অর্থাৎ দেবী অন্ন দেন। অন্নপূর্ণা তিনি। আর এক হাতে বস্ত্র। সন্তানের খাদ্য বস্ত্রের অভাব নেই। দেবীর আর এক হাতে বিদ্যার আকর পুথি। আর অন্য হাতটিতে ধর্মসাধনার দ্যোতক জপমালা। 'ভারতমাতা' ছবিতে নিবেদিতার আদল খুঁজে পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে অবনীন্দ্রনাথ এই প্রসঙ্গে রানী চন্দকে বলেছেন, ‘আমি আঁকলুম ভারতমাতার ছবি। ভগিনী নিবেদিতার ‘কালী দ্য মাদার’ পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতমাতার ছবি আঁকেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। নিবেদিতার ‘কালী দ্য মাদার’ পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন বাংলার সশস্ত্র বিপ্লবের অন্যতম নায়ক অরবিন্দ ঘোষ। আলিপুর বোমা মামলার পর পুলিশের নজর এড়িয়ে নিবেদিতার সাহায্যেই চন্দননগরের পথ ধরে পণ্ডিচেরি পাড়ি দেন অরবিন্দ। প্যারিসে গিয়ে হেমচন্দ্র কানুনগোর বোমা বানানোর কৌশল শিখে আসার নেপথ্যেও আছেন এই আইরিশ।
আরও পড়ুন- ভারতকে অন্য দেশের থেকে মহান মহিলা ধার করতে হয়: নিবেদিতাকে লিখেছিলেন স্বামীজি
তাঁর স্বদেশ ভাবনার অমোঘ প্রমাণ হল তাঁর চিঠিপত্র। এইসব চিঠি পড়লে স্পষ্ট বোঝা যায় বাংলা তথা ভারতবর্ষের সশস্ত্র বিপ্লবের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ কতখানি নিবিড়। আলিপুর বোমা মামলায় অরবিন্দ ঘোষ নির্দোষ প্রমাণ হলে স্টেটসম্যান পত্রিকার কলকাতা সংস্করণের সম্পাদক স্যামুয়েল কার্কহ্যাম র্যাটক্লিফকে নিবেদিতা ০১/০৯/১৯০৯ তারিখে একটি চিঠিতে লেখেন, "আমি নিশ্চিত আমার চিঠিগুলি তোমরা পেয়েছ। চিত্ত দাস (চিত্তরঞ্জন দাস) আপিল মামলায় খেল দেখাচ্ছেন। নিত্যদিনই অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটাচ্ছেন। কেন যে নর্টনকে দাঁড় করানো হয়েছিল। বাদী পক্ষের আসল শক্তির উৎস তো হলো আশুতোষ বিশ্বাস। এবং তাঁকে (ধরাধাম থেকে) অপসারণ করা হলো এ যাবৎ ঘটা সবচেয়ে বড় ঘটনা। উপরন্তু সেও নর্টনের মতন একজন রেনিগেড দেশপ্রেমিক। যে কিনা কয়েক বছর আগে যে নিবন্ধ রচনা করেছিল এবং যা ছাপার জন্য বেচারা সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জিকে পর্যন্ত জেলে যেতে হয়েছিল। আনন্দমোহন বসুর উপর যে জীবনীটি বেরুচ্ছে, তাতে এই তথ্যটি মামুলিভাবে দেওয়া হয়েছে। এ বিশ্বাসকে (আশুতোষ বিশ্বাস) যে গুলি করে মেরেছে সেই বোস (চারু) সম্পর্কে খুব কমই জানতে পারা গেছে। অশোক নন্দী, জেলে টিবি হওয়ার পরে যার মৃত্যু হয়েছিল এবং উল্লাসকর— যে সেলে থাকতো তা তার (চারুর) খুবই কাছে ছিল এবং দুইজনেই কবুল করেছে যে, বিচারে সাজার ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরেও তাঁকে (চারুকে) রাতে ইলেকট্রিক শক দিয়ে মারা হতো আরও তথ্য পাওয়ার জন্য। তারা চারুর কান্নার এবং কথাবার্তার আওয়াজ পেয়েছে। এই অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য চারু হয়তো ভুয়ো খবর দিত এবং যখন সে খবরের সত্যতা যাচাই করা হতো তখন তার উপর আবার অত্যাচার চালানো হতো।
ব্যাপারটা খুবই স্বচ্ছ। এ ঘোষকে (অরবিন্দ ঘোষ) দ্বীপান্তরিত না করার মূলে ম্যাকারনেস এবং তোমাদের ইংল্যান্ডে অবদান রয়েছে।"
স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে মার্গারেটের যখন প্রথম দেখা হয়, তখন তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগে আলোকিত এই বিদুষী রমনীর ইতোমধ্যে দু’বার বিবাহের প্রস্তাব ভঙ্গ হয়েছে। প্রথমবার ১৮৯০ প্রনয়াস্পদ যুবকের মৃত্যু হয়েছে অকালে। দ্বিতীয়বার ১৮৯৪ সালে বিবাহ ইচ্ছুক যুবকটি সহসা তাঁকে পরিত্যাগ করে চলে যায়। একই সময়ে জন্মভূমি আয়ারল্যান্ডে চলছে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিপ্লবের প্রস্তুতি। সরাসরি তিনি যুক্ত হয়ে পড়েন সেই কাজে। এরপর আসে সশস্ত্র সংগ্রামের পালা। বিপ্লবের ভার নিয়ে মার্গারেট আসেন লন্ডনে। আর সেখানেই প্রথম সাক্ষাৎ বিবেকানন্দের সঙ্গে। ১৮৯৫ সাল। তারপর স্বামীজির দীক্ষা-শিক্ষায় মার্গারেট হয়ে উঠলেন ভারতের ‘ভগিনী’, রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘লোকমাতা’। এদেশে এসে জীবনের তেরোটি বছর মানুষের সেবা করে কাটালেন নিবেদিতা। আইরিশ বিপ্লবের যে আগুন ধারণ করেছিলেন বুকে, ব্রিটিশশাসিত ভারতের স্বাধীনতার পালেও লাগিয়ে দিলেন সেই সশস্ত্র সংগ্রামের হাওয়া।
আরও পড়ুন- মুসলিম কন্যাকে কুমারী রূপে পুজো করেছিলেন বিবেকানন্দ, কীভাবে বাংলায় শুরু হল কুমারী পুজো
১৯০৩ সাল, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মেদিনীপুরে একসভায় বক্তৃতা চলাকালীন এক রাজকর্মচারী বাধাদান করলে নিবেদিতা উত্তর দেয়, “আপনি আমায় ভয় দেখাবেন না। আমার শিরাতে স্বাধীন জাতির রক্ত এখনও প্রবাহিত। যারা ভয় পায়, আমার বক্তৃতা তাদের জন্য নয়।” অনুশীলন সমিতির সঙ্গে তাঁর বিশেষ যোগাযোগ ছিল। নিজের গ্রন্থাগার থেকে অনুশীলন সমিতিতে দান করেছিলেন প্রায় দেড়শটি বই। স্বাধীনতাকামী সাহসী বাঙালি যুবকদের সঙ্গে তলোয়ার খেলতেন, মুগুর ভাঁজতেন, লাঠি ঘোরাতেন। হাত লাগিয়েছিলেন বোমা বাঁধার কাজে। আরেকবার স্থানীয় কয়েকজন ভদ্রমহিলাদের সম্মেলনে গেছিলেন বক্তৃতা দিতে। সভা শেষে নিজে হাতে বন্দুক চালানো শিখিয়েছিলেন তাদের। ১৯০৪ সালে বোধগয়া ভ্রমণের সময় তিনি ভারতের প্রথম জাতীয় পতাকাটি ডিজাইন করেছিলেন। লাল চতুষ্কোণাকার এই পতাকার কেন্দ্রে ছিল বজ্র ও শ্বেতপদ্ম সংবলিত একটি হলুদ ইনসেট। বাংলায় লেখা ছিল 'বন্দে মাতরম' লাল রং ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক, হলুদ বিজয়ের ও শ্বেতপদ্ম পবিত্রতার প্রতীক। নিজের স্কুলে তিনি প্রতিদিন ‘বন্দে মাতরম’ গান গাওয়ার প্রচলন চালু করেছিলেন— দেশপ্রেম জাগানোর জন্য এ ছিল তাঁর এক সচেতন প্রয়াস।
সমস্ত বিজ্ঞান মন্দির জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। জপমালা হাতে এক নারী মূর্তি। দরজার অলংকরণ থেকে বজ্রচিহ্ন, যদিও কোথাও তাঁর নাম নেই। ভগিনী নিবেদিতার কাছে জাতীয় চেতনা ছিল বিজ্ঞান, ইতিহাস, শিল্প, ধর্ম ও সাহিত্য— সমস্ত ক্ষেত্রেই জাগরণ এবং গৌরবের বিষয়। জাতি গঠনের ক্ষেত্রে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল শিল্পের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ মনের বিকাশ ও উৎসাহ প্রদান। মানুষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ স্থাপন, তাদের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি প্রদান এবং আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলার মাধ্যমে তিনি জাতীয়তাবাদ বিষয়ক আলোচনাকে এক নতুন দিশা দেন। ভারতীয় শিল্প গ্রীক শিল্পের প্রভাবাধীন এবং তাই মৌলিকত্বহীন— এই পশ্চিমা ধারণা তাঁকে গভীরভাবে বিচলিত করেছিল। এ ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট মতবাদকে প্রতিহত করার জন্য নিবেদিতা, আনন্দ কুমারস্বামী ও ই. বি. হ্যাভেলের সঙ্গে মিলে ভারতীয় শিল্পের পুনর্জাগরণের আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত হয়ে ওঠেন।
আরও পড়ুন- বিবেকানন্দর মন্ত্রোচ্চারণে বেলুড়ে সেদিন যেভাবে শুরু হয়েছিল উৎসব
অজন্তার গুহায় প্রাচীন ফ্রেস্কোর অনুলিপি তৈরি করতে ১৯০৯ সালে শিল্পী ক্রিশ্চিয়ানা হেরিংহামের অনুরোধে ভগিনী নিবেদিতা অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে রাজি করান তাঁর কয়েকজন ছাত্রকে সেখানে পাঠাতে। তাঁর বিশ্বাস ছিল, এই উদ্যোগ তরুণ শিল্পীদের মনে বহুদিনের বিস্মৃত “ভারতীয়” শিল্পের প্রতি শ্রদ্ধা ও গর্ব জাগাবে এবং ভবিষ্যতের সৃজনধারায় এই ঐতিহ্যের প্রভাব গভীরভাবে প্রতিফলিত হবে। একইসঙ্গে এটি ছিল শিল্প সংরক্ষণের প্রচেষ্টাও। নিবেদিতা কেবল উদ্যোগের প্রেরণা দিয়েই থেমে থাকেননি; ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের থাকা-খাওয়ার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করেছিলেন এবং কাজ চলাকালীন সরাসরি গিয়ে শিল্পীদের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেছিলেন। পরবর্তীকালে নন্দলাল বসু, অসিত কুমার হালদার প্রমুখ যেসব শিল্পী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে খ্যাতি অর্জন করেন, তাঁদের শিল্পজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁক হয়ে ওঠে এই অজন্তা সফর।
মৃত্যুর কিছুদিন আগে নিবেদিতা বলেছিলেন "The boat is sinking, but I shall see the sunrise"। মোট সাতবার দার্জিলিংয়ে গেছেন ভগিনী নিবেদিতা। ১৯১১ সালের অক্টোবরে দার্জিলিং থেকে আর ফেরা হয়নি তাঁর। খ্রিস্টান হলেও, নিবেদিতার শেষ ইচ্ছে মেনে হিন্দু রীতি অনুসারে তাঁর দাহক্রিয়া সম্পন্ন হয় মুর্দাহাটির শ্মশানে। তারপর তাঁর চিতাভস্মের একটি অংশ দিয়েই তৈরি হয় সমাধিক্ষেত্র। তাঁর সমাধিফলকে লিখিত শব্দগুলি আজও হয়তো তাঁর জীবনের এপিটাফ হয়ে আছে— ‘Here reposes Sister Nivedita who gave her all to India’।
তথ্যঋণ:
নিবেদিতা লোকমাতা: শঙ্করীপ্রসাদ বসু, আমাদের নিবেদিতা: শঙ্করীপ্রসাদ বসু, স্বামীজীকে যেরূপ দেখিয়াছি: ভগিনী নিবেদিতা, অগ্নিযুগের চিঠি: শুভেন্দু মজুমদার, পদ্মের মাঝে বজ্র: হর্ষ দত্ত, ভগিনী নিবেদিতা ও বাংলায় বিপ্লববাদ: গিরিজাশঙ্কর রায়চৌধুরী, সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন, উইকিপিডিয়া

Whatsapp
