বাসে-ট্রেনে অথবা হেঁটেই করতে হয় যাতায়াত! কেন একটাও বিমান বন্দর নেই এইসব দেশে?

Those countries have no airports : দেখতে সাজানো গোছানো হলেও জানেন কি এই বিশ্বেই রয়েছে এমন কিছু দেশ যেখানে আজও নেই কোনও বিমান বন্দর? কিন্তু কেন?

ব্যস্ততার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। সমস্ত ক্ষেত্রেই চালু হয়েছে নয়া নিয়ম। সময় যে কতটা দুর্মূল্য তা এখন সবাই বোঝে। তাই সময় বাঁচাতে যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। আজকাল দীর্ঘ সময় বাসের জন্য অপেক্ষা করে থাকার দিন শেষ, প্রয়োজনে মানুষ একাধিক অটো অথবা টোটো বদলে হলেও গন্তব্যে পোঁছে যাচ্ছেন। দীর্ঘ ভ্রমণে রেলপথের বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছেন আকাশপথে ভ্রমণকে। একাধিক এয়ারলাইন্স সংস্থার এরোপ্লেন এসেছে বর্তমানে, যারা দেশের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে গন্তব্যকে যেমন সহজ করে দিয়েছে ঠিক তেমনই দেশের বাইরে অর্থাৎ ভিনদেশে যাতায়াত করাকেও সহজ করেছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেই রয়েছে একাধিক বিমান বন্দর। এমনকী পশ্চিমবঙ্গেও রয়েছে দুটি বিমান বন্দর। কলকাতা এবং বাগডোগরা। কিন্তু জানেন কি এই বিশ্বেই রয়েছে এমন কিছু দেশ যেখানে আজও নেই কোনও বিমান বন্দর?

দেখতে সাজানো গোছানো হলেও বিমান বন্দর তৈরির জন্য যে পরিধি দরকার হয় তা যদি না থাকে কোনও দেশে, তবে তো এয়ারপোর্ট থাকা সম্ভব নয়। তাই বিশ্বের এমন কিছু দেশ আছে যেখানে এখন পর্যন্ত বিমানবন্দর নেই! কোনও দেশের যোগাযোগ ভিত্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে বিমান বন্দর যে একমাত্র বিকল্প নয় সেই বিষয়ে উদাহরণ তৈরি করেছে এই দেশগুলি। আসলে মোট ক্ষেত্রফলের নিরিখে দেশের সীমানা এতই ছোট যে সেখানে বিমান বিনফর তৈরি করতে যতটা পরিমাণ জায়গা দরকার তার যোগান দেওয়া অসম্ভব। আসুন দেখে নেওয়া বিশ্বের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সেই দেশগুলি, যেখানে আজও নেই কোনও বিমান বন্দর।

আরও পড়ুন - শোনেননি বাবার বারণ, কথা দিয়েছিলেন ‘ফিরে আসব’, নেপাল দুর্ঘটনায় মৃত বিমানসেবিকার পরিবারে হাহাকার

ভ্যাটিকান সিটি

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে পরিচিত হল ভ্যাটিকান সিটি। এখানকার জনসংখ্যা ওই ৮০০ এর কাছাকাছি। এমনকী সেই দেশে একটি বিমান অবতরণ করার জন্য যে পরিমাণ জায়গা প্রয়োজন, তা নেই। এমনকী বিকল্প পরিবহনের জন্য কোনও নদী বা সমুদ্রও নেই। এটি এমন একটি দেশ যার সবটুকু কিনা পায়ে হেঁটেই ঘোরা যায়। যদিও চিন্তা করার কিছুই নেই। কারণ বিশ্বের ক্ষুদ্রতম এই দেশটিকে ঘিরে রয়েছে অন্যান্য কিছু বিমান বন্দর। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো Ciampino এবং Fiumicino। ভ্যাটিকান সিটি থেকে যাদের দূরত্ব রেলপথে তিরিশ মিনিটেরও কম। এমনকী একটা গোটা দেশে রয়েছে একটিই মাত্র শহর। দেশটি রোম শহরের সীমানার মধ্যে অবস্থিত।

মোনাকো

ভ্যাটিকান সিটির পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ হলো মোনাকো। তিন দিক থেকে ফ্রান্স দ্বারা বেষ্টিত এই দেশটিতেও নিজস্ব কোনও বিমানবন্দরের সুবিধা নেই। যারা মোনাকো ঘুরতে যেতে ইচ্ছুক তাদের সবাইকে ফ্রান্সের নিস কোট ডি আজুর বিমানবন্দরে নেমে তারপর সেখান থেকে একটি ক্যাব বুক করে নদীর কাছাকাছি পৌঁছতে হবে। তারপর সেখান থেকে নৌকায় পৌঁছনো যাবে মোনাকো।

সান মারিনো

ভ্যাটিকান সিটি থেকে খুব দূরে অবস্থিত, সান মারিনো বিশ্বের প্রাচীনতম দেশগুলির মধ্যে একটি। সম্পূর্ণরূপে ইতালি দ্বারা বেষ্টিত, সান মারিনোর সমুদ্রে প্রবেশাধিকার নেই। যেহেতু এটি খুব ছোট একটি দেশ তাই এর কোনও বিমানবন্দরও নেই। সৌভাগ্যবশত, পুরো সান মারিনো সমতল, এবং একটিমাত্র রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সুবন্দোবস্ত রয়েছে। বাসিন্দাদের প্রয়োজনে এই রাস্তা দিয়েই স্থলপথে সান মারিনো থেকে বের হতে হয়। এই দেশটির ক্ষেত্রে মূল সুবিধা হল, দেশের যে কোনও দিক দিয়েই বের হয়ে ইতালিতে প্রবেশের অনুমতি পাওয়া যায়। নিকটতম বিমানবন্দরগুলির মধ্যে একটি হল ইতালির রিমিনি। যদিও এটি আকারে ছোট। তবে এর কাছাকাছি বেশ কয়েকটি অন্যান্য বিমানবন্দর রয়েছে, যেমন ফ্লোরেন্স, বোলোগনা, ভেনিস এবং পিসা, যেগুলি প্রায়শই স্থানীয় এবং দেশটিতে আসা পর্যটকরা উভয়ই ব্যবহার করে।

আরও পড়ুন - বিমান দুর্ঘটনায় পাইলটদের মৃত্যু, মারা যান মালিকও, নেপালের ইয়েতি এয়ারলাইন্স সত্যিই ‘অভিশপ্ত’?

লিচেনস্টাইন

লিচেনস্টাইনও একটি ছোট দেশ, যার সমগ্র পরিধি মাত্র 75 কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসারিত। একদিকে  স্থানের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, অন্যদিকে সমস্যা হলো এটি সম্ভবত আংশিকভাবে রাইন, পূর্বে এবং পশ্চিমে অস্ট্রিয়ান পর্বতমালার বেষ্টনীর মধ্যে অবস্থান করছে। তাই প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্ভাব্য কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত না হওয়ার জন্য, লিচেনস্টাইন কোনও বিমানবন্দর তৈরি করা হয়নি। যে কোনও প্রয়োজনে স্থানীয়রা প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জুরিখ বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করেন। লিচেনস্টাইন থেকে নিকটবর্তী এই বিমান মন্দিরে পৌঁছানোর জন্য পাওয়া যায় গাড়ি বা বাস।

এন্ডোরা

যদিও অন্যান্য দেশের মতো আকারে খুব ছোট নয় এন্ডোরা, তবে এন্ডোরার প্রিন্সিপ্যালিটির একটি বৃহত্তর পৃষ্ঠ এলাকা রয়েছে যা একাধিক বিমানবন্দরের তৈরির জন্য যথেষ্ট। তবে এখানে মূল সমস্যা হল চড়াই উৎরাই পাহাড়। এটি ফ্রান্স এবং স্পেনের মধ্যে অবস্থিত এবং সম্পূর্ণভাবে পিরেনিস দ্বারা বেষ্টিত। ৩০০০ মিটার উচ্চতার কাছাকাছি চূড়া রয়েছে এবং এই ধরনের উচ্চতায় একটি প্লেন উড্ডয়ন করা কিছুটা বিপজ্জনক এবং কঠিন হয়ে পড়ে। যে কারণে এন্ডোরাতে এখনও পর্যন্ত কোনও বিমানবন্দর না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে চাইলেই কেউ কাছাকাছির মধ্যে বার্সেলোনা, লেরিদা বা গিরোনার মতো শহর থেকে ফ্লাইট নিতে পারেন। যেগুলি এই দেশের মাত্র ২০০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যেই অবস্থিত।

More Articles