স্বাধীনতার গল্প : মিছিল

Independence Day : মগনার চাকরি গেলো আজ। সঙ্গে আটকা বিদেশ থানায়। আদিবাসী ভাঙ্গা বাংলায় নাকি রোহিঙ্গা টান। শুধরাতে তিনহাজার লাগবে, ফোনে বলেছে মগনা ফাগুকে।

AH

সাড়ে সাত কাঠা চাষ জমি ভাগে পেয়েছিল ছুটকা কিস্কু। তার থেকে দেড় কাঠায় তিন কামরার একটা একতলা বানিয়ে বাকি জমিতে সারাবছর কিছু না কিছু ফলিয়েই টিকলো এত দিন।

-"লাল মাটিতে গর্ভ দেওয়া খুব কঠিন" ...

শোনাতো ছুটকা মাঝে মাঝে।

শোনাতো- "মাটি মানুষ লয় বুঝলি না, ইটা দ্যাবতা, তাও আবার ম্যায়াদ্যাবতা, স ও ব উহার মন মতো না হলে শরীর গোলবেনি ক, আর তু তো জানু ম্যায়াছেনার মন পেলে শরীর কেমন ফুটে",

বলেই ফিচেল হাসি দিয়ে আড়চোখে তাকাত বউ ফাগুর দিকে।

ফাগু কিস্কুর এদিকে খেয়াল খুব কম। সে ব্যস্ত তাঁর পোয়াতি ছাগীর জন্য। গরম কোনদিনও লাগে না ফাগুর, ছোট থেকেই কাজু জঙ্গলে মানুষ।বনবাদাড়ে ঘুরে ঘুরে এসব সয়ে নেওয়া অভ্যেস বরাবর। মগন যখন প্রথমবার পেটে এলো, তখন হালকা গরম লাগলেও মগনকে পেটে নিয়েই বঞ্জর লাল জমিটাকে চষে বেড়িয়েছে বরাবর। মাঝখানে বিমারে পড়েছিল একবার ছুটকা কিস্কু। হাসপাতালে দৌড়ে যখন কিছু কাজ হয়নি তখন কালী থানে নির্জলা হয়ে একশাড়িতে পড়ে ছিল চারদিন উপবাসে। অর্ধেক সারার পর গোলাপী শাড়ি পরা দূরগায়ের দিদিরা ভিটামিন দিয়েছিল লিখে দিয়েছিল দু-বার। সাতশো টাকার। মাথায় আকাশ ভাঙার টাকার অঙ্ক দেখে হিসেব বুঝিয়েছিল লালুয়া গ্রামের হরি মাহাতো। হপ্তায় একবার করে মিটিংয়ে গাড়িতে করে যেতে হবে ভিড় বাড়াতে। ফি দিন একশো। প্রথম প্রথম লাজ করতো ফাগুর। তারপর সিঁদুর বাঁচাতে রঙ ভুলে দিন একশোর মিছিলের মুখ। ফাগু ভাবে এখন, ভাগ্যিস! ভাগ্যিস পার্টি ছিল! নাইলে লোকটা বাঁচতনি গো।

আরও পড়ুন-স্বাধীনতার প্রথম স্বাদ : বন্ধুদের সঙ্গে প্রথম শান্তিনিকেতন ঘুরতে যাওয়া

তারপর একযুগ।

মগন লায়েক বড় এখন। চার বছর উই শহরে দিন রাত এক করে লায়েক এখন। নিজের ঘর থেকে এগারো কিলোমিটার সাইকেল করে স্টেশন। তারপর ট্রেন। সেখান থেকে রোজ কলেজ। কলেজে সব ভালো ছিল মগণের, তবে কালো রঙের তামাশা বেশি শহরে। মুড়ি টিফিনে ,জাতের প্যারামিটারের গল্প দেখেছিল রোজ। ইউনিয়নের সাদা লোকেরা কী সব বোঝাতো তার মাথামুন্ডু মগন বুঝেনি কুনোদিন। মগন জানে সিডিউল ট্রাইবের কষ্ট। উপাইও জানে। চাকরি নাই, তাই টাইলস মিস্ত্রি, হেই ব্যাঙ্গালুরুতে। মাত্র ক'বছরের নয় কেজি কমিয়েছে খাটনীতে। ফাগু রোজ শোনায়- ব্যাটা, খাচ্ছু ত?

মগনার চাকরি গেলো আজ। সঙ্গে আটকা বিদেশ থানায়। আদিবাসী ভাঙ্গা বাংলায় নাকি রোহিঙ্গা টান। শুধরাতে তিনহাজার লাগবে, ফোনে বলেছে মগনা ফাগুকে।

ফাগু, ছুটকা টাও নীরব বড্ড তাই। তিনহাজার অনেক এখনও।

জিজ্ঞাসালাম, ছুটকা জানুস, ছ্যানাটার চাকরি গেছে, বেঁচেছে প্রাণে, থানায়, ছাড়িয়ে নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি?

ছুটকা চুপ তাও। ফাগু সব জানে। সেও চুপ খানিকক্ষণ। তারপর ফাগু আপনমনে বলল,
- "লোকটাকে তিরিশ বছর আগে বাঁচিয়ে আনিছিলাম থানের মানতে। ছ্যানাটার জন্য যেতে পারবুনি কি?"

বললাম, বেশ যেও। কিন্তু তাও না হলে?

হাসলো মনে হয় ফাগু কিষ্কু।

চিবিয়ে বলল- মিছিল তো আছেই, আগের মতো , আবার যাবো, ছ্যানাটার জন্যই, ...

আজ ফাগুকে দেখলাম হাঁটছে, সাথে ছুটকা। স্বাধীনতার মিছিল। মাথা নিচু।

জোরে স্লোগান দিচ্ছে -

বন্দে মাতরম ...বন্দে মাতরম ...

More Articles